নিউজ ডেস্ক।।
জামদানি বয়নশিল্প বাংলাদেশের ঐতিহ্যের মৌলিক, উৎকৃষ্ট ও অন্যতম অংশ। অসাধারণ নকশায় সমৃদ্ধ জামদানি বস্তুত মসলিনেরই একটি প্রকার, যা নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের বয়নশিল্পীদের হাতে অনবদ্য শিল্পকর্মে রূপ নিয়েছে। ষষ্ঠদশ শতকে মুঘল শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকার নন্দিত মসলিন হয়ে ওঠে সৃজনসৌকর্যে উৎকৃষ্ট নকশাদার জামদানি। পারসিক মোটিফের সঙ্গে বাংলার নিসর্গের ফুল-ফলের নকশা সংযোজন করে বয়নশিল্পীরা জামদানিকে করে তোলেন অনিন্দ্যসুন্দর।
সেই ঐতিহ্যের জামদানিকে ঘিরে উৎসব আয়োজনের মধ্যে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁকে ওয়ার্ল্ড ক্রাফটস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ‘ওয়ার্ল্ড ক্রাফট সিটি’র মর্যাদা লাভের জন্য উদ্যোগ নেয়া হলে তার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এর ফলে প্রথম বাংলাদেশের কোন স্থান ‘ওয়ার্ল্ড ক্রাফট সিটি’র মর্যাদা লাভ করল।
‘ওয়ার্ল্ড ক্রাফট সিটি’র স্বীকৃতি পাওয়ায় জামদানি শিল্পের পীঠস্থান হিসেবে সোনারগাঁর সুনাম ও কৃতিত্ব বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত হবে; ‘ক্রিয়েটিভ ট্যুরিজম’-এর দ্বার উন্মোচিত হবে; স্থানীয় উদ্ভাবনী শক্তি, মেধা ও অভিজ্ঞতার পরিধি বিস্তৃত হবে; জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিজ্ঞতা ও কৌশল বিনিময়ের ক্ষেত্র তৈরি হবে; ভারতের মহাবলিপুরম (পাথর খোদাই) ও জয়পুর (গয়না), চিনের ফুশিন (অ্যাগেট), থাইল্যান্ডের সাখন নাখন (ইন্ডিগো ডাই), ডেনমার্কের বর্নহোম (সিরামিক), ইরানের কারপোরগান (মৃৎশিল্প) ও ইসফাহানসহ বিশ্বের বিভিন্ন ক্রাফট সিটির সঙ্গে সহযোগিতা, অংশীদারিত্ব ও বিনিময়ের অভিনব সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁকে ‘ওয়ার্ল্ড ক্রাফট সিটি’র মর্যাদালাভের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ জন্য ওয়ার্ল্ড ক্রাফটস কাউন্সিলের কাছে একটি আবেদন করা হয়। এ লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ওয়ার্ল্ড ক্রাফটস কাউন্সিলের বিচারক দল বাংলাদেশ ঘুরে যান। এরপর ওয়ার্ল্ড ক্রাফটস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে সোনারগাঁকে ‘ওয়ার্ল্ড ক্রাফট সিটি’র মর্যাদালাভের স্বীকৃতিপত্র পৌঁছায় সংশ্লিষ্টদের কাছে।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের কমিউনিকেশান ম্যানেজার রেজওয়ানুল কামাল চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ওয়ার্ল্ড ক্রাফটস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে সোনারগাঁ ‘ওয়ার্ল্ড ক্রাফট সিটি’র মর্যাদালাভের স্বীকৃতিপত্র একদিন হয়েছে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। এর ফলে প্রথম বাংলাদেশের কোন স্থান ‘ওয়ার্ল্ড ক্রাফট সিটি’র মর্যাদা লাভ করলো। বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের উদার সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য এই গৌরব বয়ে এনেছে।
জামদানির গৌরবময় ইতিকথার সঙ্গে বর্তমানের সেতুবন্ধ রচনার উদ্দেশে বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ প্রায় দুই বছরকাল দেশে ও দেশের বাইরের প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের সংগ্রাহক এবং বিভিন্ন জাদুঘরের সহযোগিতায় ১৫০টিরও বেশি ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ির ডিজাইন ও ছবি সংগ্রহ করে। আদি জামদানি বস্ত্রের চিত্রে ফুটে ওঠে বয়নসৌকর্যের মহিমা, যা বাংলাদেশের বয়নশিল্পীরাই এককালে সম্ভব করেছিলেন। ঋদ্ধ এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই আদি জামদানি নতুন করে বয়নের প্রচেষ্টা হাতে নেয়া হয়। বাংলাদেশের কিংবদন্তি ‘জামদানি’ নিয়ে ইতিহাসবিদ, গবেষক, অনুরাগী ও সংগ্রাহকদের আগ্রহ অনিঃশেষ।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষভাবে জামদানি বয়নশিল্পের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুরাগী, যা সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে প্রতিফলিত হয়েছে। জামদানি বয়নশিল্পকে ইতোমধ্যে ২০১৩ সালে ইউনেস্কো ‘ইনট্যান্জিবল কালচারাল হেরিটেজ’ এর মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান করেছে। জামদানিই বাংলাদেশের প্রথম পণ্য যা সং¯কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০১৬ সালে ভৌগোলিক সূচক হিসেবে পরিগণিত হয়। বাংলাদেশের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।
জামদানি উৎসব শেষ হচ্ছে কাল : শনিবার শেষ হচ্ছে ‘ঐতিহ্যের বিনির্মাণ’ শীর্ষক পাঁচ সপ্তাহব্যাপী জামদানি উৎসব। ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয় প্রদর্শনশালায় বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ৬ সেপ্টেম্বর থেকে জামদানি উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উৎসবের সমাপনী উপলক্ষে শনিবার বিকেল ৫টায় উৎসবের প্রাণপুরুষ জামদানি বয়নশিল্পীদের সনদ প্রদান করা হবে। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বয়নশিল্পীদের হাতে সনদ তুলে দেবেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) এমপি।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.