এইমাত্র পাওয়া

বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্যের পরিবর্তন প্রয়োজন

মোঃ আবুল হোসেন।।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সমাজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিটি মানুষ আজ আধুনিকতার ছোঁয়ায় পরিবর্তন হয়েছে। আজ বাংলাদেশ ডিজিটাল যুগে পৌঁছে গেছে। পরিবর্তন হয়েছে এনালগ যুগের। বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বের দরবারে আজ বাংলাদেশের মানদণ্ডের পরিবর্তন হলো। বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে গেছে এবং উন্নয়ন শীল দেশের তালিকায় দ্বিতীয়। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে পরিবর্তন হলো। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রইল। শুধু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন হলো না। শুধু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পরিবর্তন হয়েছে সরকারি অংশ পাওয়ার ক্ষেত্রে পূর্বের শিক্ষকরা সরকারি অংশ পেত ৫০ শতাংশ তা ক্রমান্বয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে করা হলো ১০০ শতাংশ।

 

আবার শোনা যায় বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা দুই মাস, তিন মাস এবং এমনকি ছয় মাস পর পর সরকারি অংশ পেত। এই অবস্থা থেকে ধাপে ধাপে আজ প্রতি মাসে সরকারি অংশ পাওয়া যাচ্ছে। উন্নয়ন বলতে এটাই হয়েছে। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এই সামান্য সরকারি অংশ ও আবার ১ – ৫ তারিখের মধ্যে উত্তোলন করা যায় না। কোন কোন সময় ১০ -২০ তারিখ পার হয়ে যায়। শিক্ষকরা বর্তমান সময়ে সত্যিই অবহেলিত। বর্তমান সরকার দ্বিগুণ পে-স্কেল দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে সত্য। বর্তমান সময়ে যেখানে জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বাড়ি ভাড়া পায় মাত্র ১০০০ টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা পায় মাত্র ৫০০ টাকা। উৎসব ভাতা পায় মাত্র মূল স্কেলের ২৫ শতাংশ। প্রতিটি পেশায় পরিবর্তন হলো। যথাযথ মর্যাদায় বেতন ভাতা, উৎসব ভাতা, পেনশন, সন্তানের শিক্ষা ভাতা প্রদান করা হয়।

 

কিন্তু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত। বাংলাদেশের কোথাও ১০০০ টাকায় বাড়ি ভাড়া, ৫০০ টাকায় চিকিৎসা করানো কখনো সম্ভব নয়। উৎসব ভাতা সেই এক যুগের ও বেশি সময় অতিবাহিত হচ্ছে তার কোন পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন কিছুই করা হলো না। বর্তমান সরকার যেহেতু শিক্ষা বান্ধব সরকার। সেহেতু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আশায় বুক বেধে ছিল পূর্বের অবস্থার কিছু হলেও পরিবর্তন হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কিছুই হলো না বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভাগ্যে। আজ মনে হচ্ছে ভাগ্যের চাকায় জং ধরেছে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। একজন শিক্ষক প্রতি মাসে চিকিৎসা ভাতা পায় মাত্র ৫০০ টাকা । যেখানে ডাক্তার দেখাতে ভিজিট গুণতে হয় ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। ঔষধ ক্রয় করার টাকা কোথায় পাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক? পরিবারের সদস্যের চিকিৎসার টাকা জোগাড় হবে কীভাবে? তাইতো প্রতি মাসেই ধার দেনা করে চলতে হয় বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের।

 

বর্তমান সময়ে এটাই বাস্তব সত্য ঘটনা বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দূর দূরান্তে চাকরি করার ফলে ঘর ভাড়া করে থাকতে হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় ১০০০ টাকায় বাংলাদেশের কোথাও ঘর ভাড়া পাওয়া যায় না। মাস শেষে দেখা যাচ্ছে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। এই আয় ব্যয়ের হিসেবে দেখা যাচ্ছে প্রতিটি শিক্ষক সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। চাকরি জীবনের শেষ সময়টুকু কাটে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে। যেখানে সরকারি চাকরি জীবিরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ একটি অবসর ভাতা পায় যার সাহায্যে অবসরপ্রাপ্ত সময়টুকু সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশে জীবনটাকে উপভোগ করতে পারে। কিন্তু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার পর অবসর ও কল্যান তহবিলে মোট ৭৫+২৫ বা ১০০ মাসের বেতন পায় সর্বশেষ স্কেলের সমান টাকা। এটাই বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাস্তব জীবনের সত্য ঘটনা। এই অবসর ও কল্যান তহবিলে ৬%+৪% বা ১০% কর্তন করা হয় মূল স্কেল থেকে। যেখানে সরকারি চাকরি জীবিদের অতি সামান্য টাকা কর্তন করা হয়। আর বেসরকারি শিক্ষকদের সরকারি অংশের সিংহভাগ কর্তন করে অবসর ও কল্যান তহবিলের নামে। সেই অবসর ও কল্যান তহবিলের টাকা উত্তোলন করতে একজন শিক্ষকের চলে যায় বছরের পর বছর। এর থেকে পরিত্রানের কোন পথ নেই। হতাশায় অতিবাহিত করতে হয় বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসরপ্রাপ্ত জীবন। আমরা বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অবসর ও কল্যান তহবিলের প্রথা বিলুপ্ত করে পেনশনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। মানবেতর জীবনযাপন থেকে মুক্তি পেতে পেনশনের বিকল্প কিছুই হতে পারে না।

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নেই বদলি প্রথা। শিক্ষা ব্যবস্থায় বদলি প্রথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার মান উন্নয়নে বদলি প্রথা জরুরি। শিক্ষা ব্যবস্থার গতি সঞ্চার করতে বদলির প্রথার বিকল্প নেই।

পরিবর্তন প্রয়োজন শিক্ষা ব্যবস্থায়। সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা এক লেভেলে আনা অতীব জরুরি। বর্তমান সময়ে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের যেহেতু ১০০ শতাংশ সরকারি অংশ দেওয়া হয় তাহলে জাতীয়করণ করলে ক্ষতি কিসের? জাতীয়করণ করলে যেহেতু সরকারের বাড়তি কোনো খরচ হবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যয়ের হিসাব বুঝে নিলে যেহেতু সরকারের লাভই হবে। আজ আমরা সত্যিই হতভাগা। জাতীয়করণের পক্ষে না বুঝিয়ে বিপক্ষে কেন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয় তা আমাদের বোধ গম্য নয়।

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা উপমন্ত্রীর নিকট বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি আপনারা শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্যের পরিবর্তন সাধন করে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সুস্থ ভাবে বাঁচতে সহযোগিতা করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.