৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিপ্রাপ্ত না হয়েও শিক্ষক রাবেয়া, তুলছেন বেতন-ভাতা!
আল আমিন হোসেন মৃধা, ঢাকাঃ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর ৩য় গণ বিজ্ঞপ্তিতে সুপারিপ্রাপ্ত না হয়েও মেধা এনটিআরসিএর কাগজপত্র জাল করে নিয়োগপত্র এবং যোগদান পত্র থেকে শুরু করে সকল কাগজ পত্রের জালিয়াতি করে সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে এক শিক্ষিকার নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সকল কাগজ পত্র ভুয়া তৈরি করে নিয়োগ পাওয়া ঐ শিক্ষিকা হলেন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার খুদি মাহমুদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আমিনুল ইসলামের শ্যালিকা রাবেয়া সুলতানা।
জানা গেছে, এনটিআরসিএর দশম শিক্ষক নিবন্ধনধারী রাবেয়া সুলতানা। যা রোল নম্বর- ৩০৪১৫৫১০। তবে যিনি এনটিআরসাইট তার যে রোল নম্বর প্রদান করেছেন সেই রোল নম্বর ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্তদের তালিকায় নেই। সুপারিশপ্রাপ্তদের তালিকা দেখতে এখানে ও এখানে ক্লিক করুন। সুপারিশপ্রাপ্তদের সুপারিশ পত্র প্রকাশ করা হয় ২০ জানুয়ারি ২০২২ ইং তারিখে। সেই সুপারিশপ্রাপ্তদের তালিকায় খুদি মাহমুদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হোন ইংরেজি বিষয়ের শারমিন এবং ভৌত বিজ্ঞানের মাফরোহা আফরোজ। কিন্তু কোথায় সমাজবিজ্ঞানের রাবেয়া সুলতানার নাম এনটিআরসিএর প্রকাশিত তালিকায় নেই। প্রতিষ্ঠানটিতে তৎকালীন সময়ে সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক মো: মোরশেদ আলম কর্মরত ছিল। প্যাটার্ন বহির্ভূত এবং শূন্য পদের তথ্য না দিয়েও সমাজবিজ্ঞানে প্রধান শিক্ষকের শ্যালিকা রাবেয়া সুলতানাকে নিয়োগ দেখানো হয়।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালের ০১ ফেব্রুয়ারি সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে স্কুলটিতে যোগদান করেন ইংরেজি বিষয়ের শারমিন এবং ভৌত বিজ্ঞানের মাফরোহা আফরোজ। সেপ্টেম্বর মাসে যোগদান করেন প্রধান শিক্ষকের শ্যালিকা রাবেয়া সুলতানা এবং নভেম্বর মাসে এমপিওভুক্ত হোন। বিদ্যালয়টির রেজুলেশনের ট্র্যাম্পারিং করে এবং ভুয়া নিয়োগ পত্র দিয়ে তাকে যোগদান ও এমপিওভুক্ত করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৎকালীন বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন আরিফুল হাসান (মাদক সহ একাধিক মামলার আসামী)। তিনি নিয়োগ জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পারলে প্রধান শিক্ষক মোঃ আমিনুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। পরবর্তীতে এক লাখ টাকায় বিষয়টি মিমাংশা হয়। রাবেয়া সুলতানা তার নিজ ব্যাংক একাউন্ট থেকে এক লাখ টাকা প্রদান করেন সভাপতি আরিফুল হাসানকে। রাবেয়া সুলতানা কর্তৃক আরিফুলকে প্রদান করা এক লাখ টাকার চেকের কপি শিক্ষাবার্তা'র হাতে রয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ২৩ মে বিদ্যালয়ের পূর্বের সভাপতি আরিফুল হাসান (মাদক সহ একাধিক মামলার আসামী) কর্তৃক বিদ্যালয়টির নারী শিক্ষিকা নূরজাহান আক্তারকে শারিরীক নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাউশি কর্তৃক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে থাকা আরিফুল হাসান এর সভাপতি পদটি বাতিল করে গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে ম্যানেজিং কমিটির অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নতুন সভাপতি নির্বাচিত করে বোর্ডে অনুমোদনের জন্য পাঠাতে চিঠি ইস্যু করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। মাদকসহ একাধিক মামলার আসামী খুদি মাহমুদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সদ্য সভাপতি পদ বাতিল হওয়া আরিফুল হাসান তার পিতাকে (যিনিও মাদক,খুন সহ একাধিক মামলার আসামী) সভাপতি নির্বাচিত করে শিক্ষা বোর্ডে অনুমোদনের জন্য পাঠান। পরে শিক্ষা বোর্ড সেই কমিটির অনুমোদনও বাতিল করে পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এডহক সভাপতি করে কমিটি অনুমোদন করে। ইউএনও সভাপতি হবার পর বিষয়টি জানতে পারলে শিক্ষিকা রাবেয়া সুলতানা স্কুলে আসা বন্ধ করে দেন।
নিয়োগ জালিয়াতির বিষয়ে জানতে চাইলে খুদি মাহমুদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আমিনুল ইসলামকে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে নিয়োগ জালিয়াতির বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে মাউশির ডিজি বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ১০ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে মাউশির বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার সহকারী পরিচালক এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ঢাকা আঞ্চলরিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ঐ চিঠিতে বলা হয়, নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলাধীন খুদি মাহমুদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-এ সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষক নিয়োগ এর ৩য় গন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এনটিআরসিএ আবেদনপত্র, সুপারিশ পত্র, নিয়োগপত্র, যোগদান পত্র কমিটির রেজুলেশন, পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ সকল কাগজপত্র জাল ও ভূয়া তথ্যের মাধ্যমে এমপিও প্রাপ্তির অভিযোগ এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অধিদপ্তরে দাখিল করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, দাখিলকৃত অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক সুস্পষ্ট মতামত উল্লেখ করে প্রমাণক সহ প্রতিবেদন আগামী ১৫ (পনের) কর্মদিবসের মধ্যে প্রেরণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
মাউশি অভিযোগ আমলে নিয়ে ১৫ কর্মদিবসের মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করার নির্দেশ দিলেও তা এখন পর্যন্ত সেই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।
মাউশি সূত্র বলছে, গত বৃহস্পতিবার মাউশি মহাপরিচালককে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এ,এস,এম, আব্দুল খালেক শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, আসলে এই চিঠিটি আমি খুঁজে পায়নি। পরে ডিজি অফিসের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে চিঠিটা সংগ্রহ করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। নরসিংদী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে, ব্রাহ্মদী কামিনী কিশোর মৌলিক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পলাশ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সদস্য করে গত বৃহস্পতিবারই চিঠি ইস্যু করে দিয়েছি। আশাকরি আগামী সোমবার অথবা মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাতে পারব।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/০৩/২০২৪