মূল্যবোধের আলোকে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
‘জাতিসত্তার বিকাশে শিক্ষাব্যবস্থার ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেছেন, এ দেশের মানুষের তাহজিব তমাদ্দুন ও মুসলিম মূল্যবোধের আলোকে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় একজন মুসলমানের সন্তানের কুরআন বোঝার জানার সুযোগ কম।
৯০ ভাগ মুসলমানদের দেশে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। পাঠ্যবই থেকে ইসলামবিরোধী বিষয়গুলো বাদ দিতে হবে। ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। বক্তারা আরো বলেন, জাতিকে টিকিয়ে রাখতে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা চালুর কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষকে অনৈতিক হিসেবে গড়তে সহায়ক হবে।
মক্কার বর্বর সমাজকে হজরত মুহাম্মদ সা: কুরআনের শিক্ষা দিয়েই আদর্শ সমাজ তৈরি করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা তত দিন টিকবে যত দিন শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলাম থাকবে। এটি যারা বিশ্বাস করে না তারা স্বাধীনতার শত্রু। বর্তমানে যে শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে তা মুসলিম জাতিসত্তাকে ধ্বংস করার চক্রান্ত। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে আগামী দিনে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে না। ইসলামী বিকল্প পাঠ্যবই প্রকাশ করতে হবে।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ইসলামী গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা একাডেমি আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কোরবান আলীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. আ ছ ম তরিকুল ইসলাম।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন, বিশিষ্ট ইসলামী শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টারের ড. সামিউল হক ফারুকী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিশিষ্ট আইনজীবী আশরাফুল হক, ড. মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বাশার, মাওলানা ফখরুদ্দীন আহমদ, ড. মোহাম্মদ জাকির হোসাইন আল আজহারী, মুফতি নুরুজ্জামান নোমানী, অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসাইন, মাওলানা হাফেজ কারি জালাল উদ্দীন, মাওলানা ড. হাবিবুর রহমান, কামরুল ইসলাম প্রমুখ। আরো উপস্থিত ছিলেন ড. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া, ড. মাওলানা আবদুস সামাদ, মাওলানা লুৎফর রহমান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে বিভিন্ন চেতনা এনে ঝামেলা সৃষ্টি করা হয়েছে। মুসলমানদের শিক্ষাব্যবস্থা হবে আল কুরআন ও রাসূল সা:-এর সুন্নাহর আলোকে। মানুষকে মানুষ হিসেবে চিন্তা করার শক্তি আল কুরআন শিখিয়েছে। আল্লাহর কর্তৃত্বের ওপরে আর কোনো শক্তি নেই।
মানুষের অস্তিত্ব জানতে আল্লাহকে জানতে হবে। আর এই জ্ঞান অর্জন করতে হবে আল কুরআন থেকে। শিক্ষা সর্বজনীন এটিকে খণ্ডিত করা যাবে না। শিক্ষাব্যবস্থা হতে হবে অবশ্যই ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে। সারা বিশ্ব এগিয়ে গেছে শিক্ষা নিয়ে। চীন শিক্ষা নিয়েই সারা বিশ্বে ব্যবসা করেছে। বে অব বেঙ্গল দেখার জন্য আমাদের শিক্ষিত জনবল নেই। তাই আমাদেরকেও এগিয়ে যেতে হলে আল্লাহ ওপরে ভরসা করে শিক্ষা দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. প্রফেসর কোরবান আলী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সর্বজনীনভাবে ইসলামী শিক্ষাই পারে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে। ২০১০ সালে ষড়যন্ত্র করে জাতিসত্তাবিরোধী শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এই শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় একজন মুসলমানের সন্তানের কুরআন ও হাদিস জানার সুযোগ নেই। এ জন্য আমাদের বিশ্বাসের আলোকে শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে।
ইসলামী শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন বলেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে আদর্শ নাগরিক তৈরি করা সম্ভব নয়। ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। বিকল্প পাঠ্যবই হিসেবে ইসলামের আলোকে বই প্রকাশ করতে হবে। এই জমিনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি। আমাদের মতপার্থক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, মুসলমানরা আজ শতভাগে বিভক্ত। এসব ছোটখাটো বিষয় বাদ দিয়ে মুসলমানদের আবার ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ইসলামবিরোধীদের চক্রান্ত মোকাবেলায় ঐক্যের বিকল্প নেই।
ড. মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, কুরআনের শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া কোনো জাতির উন্নয়ন সম্ভব হবে না। কুরআনের শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। আজকে সমাজ থেকে দুর্নীতি লুটপাট, সুদ, ঘুষ, মাদক দূর করতে হলে ইসলামী শিক্ষা চালু করতে হবে।
ড. সামিউল হক ফারুকী বলেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলাম নেই বা ইসলাম জানা বোঝার সুযোগ নেই। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় বাংলাদেশকে আধিপত্যবাদের কলোনি বানানোর চক্রান্ত শুরু হয়েছে।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা সম্ভব হবে না। একটি মহল জাতি বিধ্বংসী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে আমাদের ধ্বংস করতে চাই।
প্রবন্ধকার প্রফেসর ড. আ ছ ম তরিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা যদি জাতির আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে তা হলে সে জাতি সুন্দরভাবে পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারে। এ জন্য শিক্ষাব্যবস্থার ওপরই জাতির অস্তিত্ব নির্ভর করে। প্রতিযোগিতাপূর্ণ এ পৃথিবীতে যাদের শিক্ষাব্যবস্থা যত চৌকস, তারা তত উন্নত।
তারা তত অগ্রসর, তারা তত প্রতিষ্ঠিত। এ জন্য তিনি নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা পেশ করেন, ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক সব কিছু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বাদ দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় প্রত্যেকেই যাতে তার ধর্মের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পায় তার পথ অবারিত রাখতে হবে। ইসলামী শিক্ষাকে প্রচলিত শিক্ষার প্রতিপক্ষ মনে না করে উভয়ের মধ্যে সমন্বয় করে শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতিসত্তা উন্নয়নে ভূমিকা রাখার উপযোগী করে ঢেলে সাজাতে হবে।