শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটির তালিকার প্রয়োজনীয়তা

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম।।

নিজের বাচ্চাকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া কিংবা বিনোদন দিতে গিয়ে মহা ঝামেলায় পড়েছেন হাইস্কুলের এক শিক্ষক। কারণ, বাচ্চা পড়ে প্রাথমিকে আর শিক্ষক শিক্ষকতা করছেন হাইস্কুলে।

শিক্ষক বাবার স্কুল বন্ধ থাকলেও বাচ্চারটা খোলা থাকায় এমন বিড়ম্বনায় পড়েছেন তিনি। এ ধরণের আরো কতকিছুর সম্মূখীন হচ্ছেন বলা মুশকিল। অপরপক্ষে প্রাথমিকের শিক্ষক পরিবারও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অভিন্ন ছুটির তালিকা না হওয়ায় এ ধরণের সমস্যা ফেস করছেন তারা। অভিন্ন ছুটি হলে পরিবার-সন্তান নিয়ে পরিকল্পনা করাটাও সহজ হয়। কোথাও যেতে হলে বা নিজেদের পারিবারিক অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করতে শিক্ষক পরিবারের জন্য অভিন্ন ছুটির তালিকার কোন বিকল্প নেই।

সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন বর্তমান ছুটির তালিকায় সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। এ নিয়ে চলছে নানা তর্কবিতর্ক। এই বৈষম্য কোনভাবেই কাম্য ছিলনা।

মাঝে প্রাথমিকের ছুটিতে তেমন বৈষম্য না থাকলেও বর্তমানে প্রণীত তালিকায় তা বেড়েছে। তার উপর বিশেষ করে এই রমজানে দেশের সব হাইস্কুল, কলেজ বন্ধ থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা পর্যায়ে শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সবার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেকে নানা যুক্তি দিয়ে রমজানে ছুটি বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছেন।

অন্য সময়ের ছুটি নিয়ে বেশি কথা না উঠলেও রমজান মাসের পবিত্রতা ও ইবাদাত, বন্দেগির কথা চিন্তা করে ছুটির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছেন শিক্ষক-অভিভাবক সকলে।

ছুটির তালিকায় দিনসংখ্যার বৈষম্য নিয়েও বলে আসছেন অনেকে। দীর্ঘ সময় পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য যদিও উপযুক্ত ছুটির তালিকা প্রণীত হয়েছিল বর্তমানে তা আবারো আগের বৈষম্যে ফিরে গেছে যা দেখলেই প্রতীয়মান হবে।

যেখানে হাইস্কুলে ৭৬ দিন ছুটি রাখা হয়েছে সেখানে প্রাথমিকে মাত্র ৫৪! অথচ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সাপ্তাহিক ছুটি দু’দিন। শুধু বেসরকারি নয় সরকারি হাইস্কুল-কলেজও এই একই ছুটি (৭৪ দিন) ভোগ করবে। ছুটির তালিকার এই ব্যাপক বৈষম্য প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হতাশ করেছে। দ্রুত এই বৈষম্য নিরসন জরুরি বলে মনে করি।

তাছাড়া, নতুন শিক্ষাক্রমেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাৎসরিক ছুটির তালিকায় তেমন পার্থক্য দেখা যায়না। অথচ প্রাথমিকে এসে তা ব্যতিক্রম হয়ে গেছে। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষ যৌক্তিক সমাধানে আসবেন বলে মনে করি। কেননা, এই বৈষম্য পাঠদানের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। হতাশা আর অসন্তোষ বিরাজ করলে একটি সফল ও কার্যকর ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীরা কি বঞ্চিত হবেন?

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অভিন্ন ছুটির তালিকা প্রণীত হলে কর্তৃপক্ষের জন্য শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সব ধরণের পরিকল্পনা নিতে সুবিধা হবে বলে মনে করি।

সবকিছু বিবেচনায় নিলে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য অভিন্ন ছুটির তালিকা প্রণয়ন করাই যুক্তিসংগত। সরকারের শিক্ষাবান্ধব কর্মসূচি সফল করতে এটি সহায়ক হতে পারে। এর ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনার নিয়ে ক্লাস ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমে নিজেদের আরো বেশি পরিমাণে সম্পৃক্ত করবে বলে বিশ্বাস করি। কারণ, চাপ নয় নানা প্রণোদনা ও উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমেই একটি সফল শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।

সেই শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ও শিক্ষার লক্ষ্য পূরণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। অভিন্ন ছুটির তালিকা প্রণয়ন করা হলে লক্ষ্যপূরণের সেই যাত্রা আরো গতিশীল হতে পারে।

★ লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট