ঈদযাত্রা নিরাপদ হোক

নিজস্ব প্রতিনিধি।।

এবারের ঈদযাত্রা কালের পরিবেশ অন্যান্য বারের চেয়ে ব্যতিক্রম বলতে হবে। মানুষ এবার স্বস্তির সঙ্গেই বাড়ি ফেরার যাত্রাপথ শুভকর ও মসৃণ দেখতে পাচ্ছেন। আশা করি এবারের যাত্রায় তেমন কোনো বড় অভিযোগ ওঠবে না যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে। শুভকামনা ইতোমধ্যে ঘরে ফেরা এবং ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকা সবার জন্যও। সবার যাত্রা শুভ হোক, উপভোগ্য হোক।

কেননা, অন্যান্য বার যেমন ঈদযাত্রায় সড়ক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হতো এবং তাতে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের খবর মিডিয়ায় ছাপা হতো- এবার কিন্তু সেরকম এখনো পর্যন্ত দেখা দেয়নি। আর এতেই বোঝা যায়, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ঈদের ছুটিতে সড়কপথের যাত্রা স্বস্তিকরই হবে মানুষের জন্য। কয়েক দিন আগে গাজীপুরের চন্দ্রায় উড়াল সড়ক এবং কুমিল্লায় দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ায় উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ববঙ্গের মহাসড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এই দুই স্থান পেরোতে আগে এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু এবার সেখানে মাত্র কয়েক মিনিট লাগছে। বাকি রইল রেলপথ ও নৌপথ। এই দুই পথই এখন শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে ঈদযাত্রীরা নানাভবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আমরা জানি, পথের ক্লান্তি কেবল নয়; টিকিটপ্রাপ্তির ঝকমারি, লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির অস্বস্তি, যানজট, শিডিউল বিপর্যয় সত্ত্বেও মানুষ শহর ছেড়ে ছোটে। আর তা প্রাণের টানেই ছোটে। গ্রাম থেকে শহরে যে মানুষ এসে বসবাস করে সেটা তো স্রেফ শিক্ষা বা অর্থনৈতিক কারণেই। বস্তুত গ্রামপ্রধান বাংলাদেশে শহর সম্প্রসারিত ও কর্মব্যস্ত হয় গ্রাম থেকে আসা মানুষেরই ঘাম ও শ্রমের ওপর। এদের মধ্যে অনেকে আবার দীর্ঘকাল ধরে শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করায় ‘নাগরিক’ হয়ে ওঠলেও মনের শিকড় প্রোথিত থাকে গ্রামেই। দ্বিতীয় প্রজন্মের মনের নিগূঢ় কোণেও টান থাকে মাতৃ বা পিতৃভূমির। আর এ কারণেই ঈদের মতো উৎসবে ‘বাসা’ ছেড়ে ‘বাড়ি’ ফেরার ধুম পড়ে।

তখন এর চাপ ও ছাপ পড়ে পথে ও পরিবহনে। ফলে যানজটে বসে থাকতে থাকতে এক ক্লান্তিকর অভিজ্ঞতার কারণে এলিয়ে পড়ে মন। ভাটা পড়ে উৎসবের সব উৎসাহ। এ ক্ষেত্রে সড়ক, পরিবহন, নৌ ও রেল কর্তৃপক্ষের সামান্য আন্তরিকতা নাগরিকদের জন্য হতে পারে ঈদের অসামান্য উপহার। আমরা জানি, উৎসবের আগে-পরে ঘরমুখো বিপুল ঢল সামাল দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। তার ওপর অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম তো এ দেশের জন্য নিত্যসঙ্গী হয়ে আছে। এবার প্রথমবারের মতো রেলওয়ে টিকিটের জন্য অ্যাপস চালু করলেও তা শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি। এর কারণও ইতোমধ্যে পরিষ্কার হয়েছে। ঈদে এ দেশে টিকিট নিয়ে চালবাজি নতুন কথা নয়। রেলের টিকিটের জন্য যে উদ্দেশ্যে অ্যাপস চালু করা হয়েছে শেষপর্যন্ত তা কাজে আসেনি। অথচ শিডিউল টাইম অনুযায়ী ট্রেন ছাড়া হলে এই বিপর্যয় দেখতে হতো না। কাজেই আমরা দেখতে চাইব বিলম্বে হলেও এসবের কারণ খতিয়ে দেখা হবে।

এ কথা ঠিক যে, সড়ক পরিবহন এবং সেতু, নৌ ও রেল মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ থেকে তৃণমূলে অনেকে দিন-রাত কাজ করছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উদয়াস্ত খেটে চলেছেন। যে কারণে এবারের ঈদযাত্রাকালে একেবারেই নতুন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। সড়ক দুর্ঘটনা বলতে গেলে তেমন হয়নি। সড়কের অবস্থাও আগের চেয়ে অনেক স্বস্তিকর বলতে হবে। মোটকথা অনেক বছর পর এবারের ঈদযাত্রাকালে সরকার জনগণের জন্য স্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি করতে পেরেছে।