উৎসব ও ননএমপিও শিক্ষক চোখ!
গত হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব বৈশাখী উৎসব।গত হয়েছে পবিত্র ঈদ উৎসব(ঈদুল ফিতর),রাত্রি পেরুতেই শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র কোরবানির ঈদ(ঈদুল আজাহা), আর বিভিন্ন সময়ে বাংলার পরতে-পরতে সারা বছর তো লেগেই থাকে উৎসবের আমেজ।
শত অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার ভিতর দিয়েও আবহমান কাল থেকে বাঙালির সামজিক এ উৎসব প্রিয়তার মাত্রা সত্যি বিশ্ব দরবারে অনন্য এক উদাহরণ। সেই সাথে গত এক দশকে বাংলাদেশ নামক দেশটিও অর্থনৈতিক ভাবে বিশ্ব মানচিত্রে অনেকটা পথ এগিয়েছে।
তারই ফলশ্রুতিতে ইতিমধ্যেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিশ্চিত করে এখন শুধু ঘোষণা অপেক্ষায় আছি আমরা।কি হচ্ছে না? প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে সগর্বে বাংলাদেশ এখন জানান দিচ্ছে আমরাও পারি!বিভিন্ন বিশ্ব পরাশক্তির মানবতার মুখোশকে উন্মোচন করে ভীনদেশী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নিশ্চিতের মাধ্য দিয়ে ভাসান চরে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, মানবতার প্রশ্নে বাংলাদেশ শ্রেষ্ঠ এবং অকৃত্রিম।কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দাঁড়িয়েও শিক্ষা ক্ষেত্রে ননএমপিও নামক একটি অভিশপ্ত শব্দের বিলোপ এ মাটিতে এখনও সম্ভব হয়ে ওঠে নি!বৎসরের পর বৎসর নয়,যুগের পর যুগ এই শব্দটিকে নিয়ে চলছে একটি চূড়ান্ত অমানবিক খেলা। দেশে যখন উৎসব- উৎসব আমেজ, এই শব্দ অভিশাপেই তখন লক্ষাধিক শিক্ষকের চোখে ভেসে ওঠে অন্ধকারময় একটি সপ্ন জগৎ।
কিন্তু কেন? একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে শিক্ষা ব্যবস্থায় এতটা বৈষম্য কি ভাবে মেনে নেয়া সম্ভব! -----------------------------------একই শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, এমপিও ননএমপিও ইত্যাদি।এর ভিতর এই ননএমপিও নামক শব্দের শিক্ষকদের শ্রমের কোন অর্থিক মূল্য নেই।এমনকি, সমাজিক অসম্মানেও এই শিক্ষকরা এখন মনে হয় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। আবার এই ননএমপিও শিক্ষকদের ভিতরও বিভাজন আছে।
১।নন এমপিও প্রতিষ্ঠানের ননএমপিও শিক্ষক
২।এমপিও ভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ননএমপিও শিক্ষক। গত বছর অবশ্য এই ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৮০০প্রতিষ্ঠান বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় এমপিও সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু, এই বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতিতে সবচেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এমপিও ভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ননএমপিও শিক্ষকবৃন্দ।পূর্বে কলেজের নিজস্ব তহবিল হতে যৎসামান্য সম্মাণী দেয়া হলেও বর্তমানে অধিকাংশ কলেজ ফান্ড শূন্য হওয়ায় সে যৎসামান্য সম্মাণীও বন্ধ হয়ে পড়েছে। কেননা,দীর্ঘ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী প্রদত্ত বেতন নির্ভর ফান্ডে নতুন করে আর কোন অর্থের যোগান নেই।এমপিও ভুক্ত প্রতিষ্ঠানে এই শ্রেণির ননএমপিও শিক্ষক বলতে,কলেজ পর্যায়ে আছে বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ও ডিগ্রি ৩য় শিক্ষক।তাছাড়া, স্কুল পর্যায়ে আছে বিভিন্ন অতিরিক্ত শ্রেণি শাখার ননএমপিও শিক্ষকবৃন্দ।অন্যদিকে,প্রায় ২৮০০প্রতিষ্ঠান নতুন এমপিওভুক্তি পেলেও একটি বৃহৎ অংশ (৬৫০০মতন)এখনও এমপিও সুবিধার বাইরেই আছে। সবমিলিয়ে বলা যায়,দেশ যেমনি এগিয়ে যাচ্ছে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই;তেমনি এটিও অস্বীকার করার সুযোগ নেই,প্রিয় এই ভূমিতে এখনও সত্যিকারের সোনার সপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব হয় নি!
যে সপ্নের বাস্তবায়ন হঠাৎ থমকে গিয়েছিল ৭৫পরবর্তী দুঃসপ্নের রাতে! জানিনা, সত্যই জানি না-এই একটি মধ্যযুগীয় শ্রম দাস সম অভিশপ্ত শব্দের বিলুপ্তি আদেও সম্ভব হবে কি-না?আর দীর্ঘ কাল উৎসব মানে সম্মানহানির এই মহৎসব দেখা চোখে,উৎসব মানে আলোকের ঝর্ণা ধারা -উৎসব মানে নতুন একটি সুখ সপ্নের আলিঙ্গন সেটি ভেসে উঠবে কি-না! জানিনা-কিছুই জানি না,শুধুই জানি,"নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়।
লেখক-
চিরঞ্জীব (এম.এ আকাশ), সেল সদস্য(তথ্য),বাংলাদেশ নিগৃহীত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি।