কুবিতে উপাচার্য-শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বে ৮ পরীক্ষা স্থগিত
কুবিঃ উপাচার্য-শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বে বন্ধ রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম। এই দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। গত এক সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ বিভাগের অন্তত আটটি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। এছাড়া ৭ বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তাবিত রুটিন প্রকাশ স্থগিত হয়ে আছে। এই পরীক্ষাগুলো আগামী সপ্তাহ হয়ে শুরু হওয়ার কথা ছিল।
রবিবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. নুরুল করিম চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
নুরুল করিম জানান, গত ২৯ মে থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হবার পর অর্থনীতি বিভাগ, কম্পিউটার সায়েন্স, একাউন্টিং, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা এবং মার্কেটিং বিভাগের আটটি পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। এরই মধ্যে আরো ৭ বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে রুটিন হাতে এসেছিল। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেসব রুটিন প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে নতুন পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করা সম্ভব হবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্য-শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। তারা চান দ্রুত সময়ের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম খুলে দেয়া হোক।
কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিলুফা ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা চলমান ছিলো এর মধ্যে শিক্ষক সমিতি ও উপাচার্যের ঝামেলার কারণে আমাদের পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। আমরা এমনিতেই করোনার ব্যাচ, সেশন জটে আছি। পরীক্ষা পিছানোর কারণে আমরা আরো পিছিয়ে গিয়েছি। আমি চাই এর দ্রুত সমাধান হোক এবং আমরা ক্লাস পরীক্ষায় ফিরতে চায়।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বিগ্ন। আমাদের মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা চলমান। দুইটা কোর্সের পরীক্ষায় বসলেও বাকি দুইটা কোর্স বাকি। এমনিতেই অনার্সে সেশন জটে পরেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে আরো দুই এক মাস পিছিয়ে পরবো। চলমান সমস্যা সমাধান না করলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছি। দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে ও ক্লাস পরীক্ষা নিয়মিত চলমান হলে আমাদের জন্য ভালো হয়।’
এদিকে গত ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে থেকে জানা যায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ট্রেজারারকে প্রত্যাহার করে নিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম খুলে দেবার দাবি জানিয়েছে তারা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এএফএম আব্দুল মঈন জানান, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করার আগেই ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আসছিল শিক্ষক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি বিবেচনায় সিন্ডিকেটের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের। আশা করছি খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।
গত ২৯ এপ্রিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। এরপরেই পাল্টা সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম ও হল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আসে সিন্ডিকেট সভা থেকে। তবে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেই থেকে যায় অনেক শিক্ষার্থী। কেউ কেউ আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া বাসে করে ফিরে যান বাড়ি। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম খুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৫/০৫/২০২৪