নিজস্ব প্রতিবেদক।।
আগামী বছর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে না। ক্লাস পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে দেশের ১০০টি বিদ্যালয়ে পাইলটিং হিসেবে এ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস-২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম আল হোসেন এসব তথ্য জানান।
সচিব বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমাতে আমরা প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সে লক্ষ্যে আমরা গত ছয় মাস থেকে কাজ করেছি। ২০২০ সাল থেকে পাইলটিং হিসেবে ১০০ বিদ্যালয়কে এর আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, এসব বিদ্যালয়ে মাসিক ক্লাস পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত উত্তীর্ণ করা হবে। তবে চতুর্থ শ্রেণি থেকে বার্ষিক পরীক্ষা আয়োজন করা হবে।
সচিব আরো বলেন, পাইলটিং কার্যক্রম শেষ হলে ২০২১ সাল থেকে দেশের ৬৫ হাজারেরও বেশি বিদ্যালয়ে এ পরীক্ষা বাতিল করে ক্লাস পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। পাশাপাশি ২০২১ সাল থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে নতুন পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হবে।
এদিকে একই সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৩ দশমিক ৯ ভাগে উন্নীত হয়েছে। যা ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন সরকারের সময় এ হার ছিল ছিল ৫৩ দশমিক ৫ ভাগ।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, দারিদ্র্য, অনগ্রসরতা, শিশুশ্রম, ভৌগলিক প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি কারণে এখনও অনেক শিশু বিদ্যালয় বহির্ভূত রয়েছে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এসব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ৮-১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয় বহির্ভূত ১০ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান যারা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে জড়িত তাদের প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন, শিক্ষকদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিরূপণ, শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, নতুন সাক্ষরতা অর্জনকারী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান; প্রাথমিকভাবে ৫০০টি আইসটি বেইজড স্থায়ী কমিউনিটি লার্নিং সেন্টার (সিএলসি) স্থাপন করা হবে এবং ৬৪টি জেলায় ৬৪টি জীবিকায়ন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে অক্ষর জ্ঞান দান, জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, কর্মসংস্থান, আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু-কিশোরদের শিক্ষার বিকল্প সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সরকার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন-২০১৪ প্রণয়ন করেছে। সাক্ষরতা বিস্তার, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের নির্বাচিত ২৫০টি উপজেলার ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৪৫ লাখ নিরক্ষর জনগোষ্ঠিকে সাক্ষরতা জ্ঞান দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৩৪টি উপজেলায় শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪৪১ জন নিরক্ষরকে সাক্ষরতা প্রদান করা হয়েছে।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.