শিক্ষাবার্তা ডেস্ক:
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিচালনা কমিটির (এসএমসি) সভাপতি হতে যোগ্যতা হিসেবে স্নাতক পাশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্কুলের শিক্ষার মান বৃদ্ধিসহ তদারকির গুরুত্ব মাথায় রেখে এ সংক্রান্ত বিধিমালার খসড়া তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে মাধ্যমিক স্তরের স্কুল পরিচালনার জন্য ম্যানেজিং কমিটি ও কলেজে পরিচালনার গভর্নিং বডির ক্ষেত্রে যোগ্যতার কোনো মাপকাঠি নির্ধারণ করা হচ্ছে না। শিক্ষাবোর্ডগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ সংক্রান্ত খসড়া বিধিমালা তৈরি করেছেন।
বর্তমানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো কমিটিতেই শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা নেই। এর ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানের কমিটির সভাপতি হিসেবে নিরক্ষর ব্যক্তিকে নির্বাচন করায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। শিক্ষার মান উন্নয়নে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেন না তারা। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হয়ে নানা অনিয়মের জড়িয়ে পড়েন তারা।
এমন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই প্রাথমিক স্কুলগুলোতে স্নাতক ডিগ্রিধারী সভাপতি চাইছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন গতকাল বলেন, এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। সভাপতি স্নাতক পাশ হওয়ার নানা সুবিধা তিনি উল্লেখ করেন।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সারাদেশে ৬৫ হাজার ৫৯০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে ১১ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়। তাদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক সদস্য সচিব, একজন শিক্ষক প্রতিনিধি, নিকটবর্তী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রতিনিধি, জমিদাতার একজন প্রতিনিধি, কাউন্সিলর বা ইউপি সদস্য, শিক্ষানুরাগী দুজন, অভিভাবক প্রতিনিধি চার জনসহ মোট ১১ জন সদস্য নির্বাচন করা হয়। তাদের মধ্যে একজনকে সভাপতি ও একজনকে সহ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির অধিকাংশ সদস্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই নির্বাচিত হয়ে থাকেন। কমিটি গঠন ১৯৭৭ বা ২০০৯ উভয় নীতিমালাতেই একই ধরনের বিধি রয়েছে। এতে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো শর্ত উল্লেখ নেই।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘আমাদের যে বিধিমালা রয়েছে তাতে যেহেতু শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি উল্লেখ নেই তাই নতুন করে যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়নি। এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির একটি সাব কমিটি কাজ করছে।’
তবে এ বিষয়ে সংসদ সদস্যদের আপত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের বক্তব্য, সংবিধানে জাতীয় সংসদের সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য যে সমস্ত যোগ্যতার বর্ণনা করা আছে, তাতে কোথাও কোনো প্রকার শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা উল্লেখ নেই। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচনসহ কোনো ক্ষেত্রেই নির্বাচনের জন্য প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো শর্ত নেই। তাদের যুক্তি, তাহলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য শিক্ষিত পরিচালনা কমিটি কেন?
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, গভর্নিং বডির শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনায় গঠিত কমিটির সভাপতির যোগ্যতা স্নাতক নির্ধারণ করা হলে স্কুল-কলেজের ক্ষেত্রেও যোগ্যতা নির্ধারণ করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারিভাবে পরিচালিত মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও কলেজের নানামুখী আয় রয়েছে। সরকারের কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। প্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটিরই সকল ক্ষমতা। ইচ্ছেমতো ব্যয় করতে পারে। আর নামি প্রতিষ্ঠান হলে ভর্তি করার মাধ্যমেই নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিতে পারে কমিটি। এ কারণে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তার নিকটস্থ ব্যক্তিদের এই কমিটির সভাপতি মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিলে সংসদ সদস্য ইচ্ছেমতো তার অনুগতদের সভাপতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে পারেন।
তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সভাপতি হিসেবে সুবিধা মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের মতো নয়। এসব স্কুলে নিজস্ব ব্যক্তিদের সভাপতি হিসেবে মনোনয়নের ক্ষেত্রে ততটা আগ্রহী নন সংসদ সদস্যরা। এ কারণে শিক্ষাগত যাই হোক না কেন আপত্তি নেই তাদের।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.