এইমাত্র পাওয়া

শিক্ষকদের কোচিং বন্ধে পাঁচ সদস্যের কমিটি

নিউজ ডেস্ক।।

সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১২ সালে মন্ত্রণালয়ের জারি করা ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা’র সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গতকাল রোববার মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ কমিটি গঠনের প্রস্তাব উঠেছে।

গভর্নিং বডি বা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে আহ্বায়ক এবং অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষককে সদস্য-সচিব করে এই কমিটি গঠন করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকালের এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালের নীতিমালা আরও যুগোপযোগী ও সংশোধন করার জন্য এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। নীতিমালা সংশোধিত হওয়ার পর প্রস্তাবিত ওই ৫ সদস্যের এ কমিটি কাজ শুরু করবে।

২০১২ সালের কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালায় বলা হয়েছে, একজন শিক্ষককে তার নিজ প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের অনধিক ১০ শিক্ষার্থীকে পড়ানোর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। প্রতিষ্ঠান প্রধান এ অনুমতি দেবেন। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে শুধু অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান ‘অতিরিক্ত ক্লাস’ এর ব্যবস্থা করতে পারবেন।

সভাসূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ওই নীতিমালায় একজন শিক্ষকের জন্য ১০ জন শিক্ষার্থীকে পড়ানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেটা কি একদিনে ১০ জন, নাকি মাসজুড়ে ১০ জন, তা নির্ধারণ করা হয়নি। এতে নীতিমালা কার্যকর করতে গিয়ে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা বেশকিছু অসুবিধায়ও পড়ছেন। এতে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ বর্তমানে একজন শিক্ষক ব্যাচে একজন শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে সর্বোচ্চ তিন দিন পড়ান। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন ১০ জন করে পড়ালে ওই শিক্ষকের অনেক বেশি শিক্ষার্থী পড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তাই নীতিমালার সংশোধনে এ বিষয়টি পরিস্কার করে বলার প্রস্তাব এসেছে।

এ ছাড়া এই নীতিমালায় স্কুলে কোচিং করানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। এই সুযোগে বেশিরভাগ স্কুলই শিক্ষার্থীদের ক্লাসের বাইরে নিজ স্কুলেই অনেকটা জোর করে কোচিং করতে বাধ্য করছে। এমনকি কোথাও কোথাও কোচিং না করলেও ফি দিতে হচ্ছে সংশ্নিষ্ট শিক্ষার্থীকে। স্কুলে স্কুলে বাধ্যতামূলক কোচিং করানো হচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ আসার প্রেক্ষিতে গতকালের সভা থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো শিক্ষার্থীর ইচ্ছার বাইরে জোরপূর্বক কোচিং করাতে পারবে না। এ জন্য কোচিং বাণিজ্য বন্ধে গঠিত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোর কার্যক্রমকে জোরদার করতে বলা হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কোচিং বন্ধের নীতিমালা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার ওপর বেশি জোর দেন।

সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মাউশির আঞ্চলিক উপ-পরিচালক ও জেলা শিক্ষা অফিসারদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরে সভাকে জানান, কোচিং বন্ধের নীতিমালা-২০১২ সারাদেশে ভালোভাবে কার্যকর করা হয়েছে। এখন কোচিং বাণিজ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর হয় না।

জানা যায়, মাউশির মহাপরিচালক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোচিং করানো হয় না বললেও বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই কোচিং-প্রাইভেটের ওপর নির্ভরশীল। খোদ রাজধানীতেই একাধিক নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজ শিক্ষার্থীদের ক্লাস সময়ের বাইরে কোচিং করতে বাধ্য করছে। এমনকি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিজ প্রাইভেট-কোচিংয়ে যেতে বাধ্য অথবা প্ররোচিত করছেন। অনেক শিক্ষক নিজেই রীতিমতো বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টার খুলে বসেছেন। অনেকেই আবার বাসা ভাড়া করে পড়ান। কোচিংয়ে যুক্ত কোনো কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়ার জোরালো অভিযোগ রয়েছে।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.