এইমাত্র পাওয়া

এই আছে, এই নেই

এই আছে, এই নেই
মঞ্চদাস রফিক নটবর

একটু সময় হবে? একটুখানি!
নেই! না? হা..হা..হা…
কী বিচিত্র এই জীবন!
এই আছে, এই নেই!

“কখনও নীরবে, কখনও বিরক্ত করেই কিংবা কখনও আবদার করে মানুষটা বলতো- একটা নিন না, একটা নিন না, একটা নিন না অথবা বলতো- এই শুনছো একটা নাও না গো। কানে বাজছে কথাগুলো! কিন্তু কী সেই একটা ? সেই ‘একটা’ আসলে এক সময়ের স্বনাম খ্যাত শিক্ষক-অভিনেতা মঞ্চদাস রফিক নটবর’র অন্ন জোগাড়ের মাধ্যম শিশু শিক্ষার বিভিন্ন ধরনের বই কিংবা শিশুপত্রিকা। আমরা অধিকাংশ সময়েই বেজায় বিরক্তবোধ করেছি তাঁর শিক্ষা উপকরণ পণ্য ক্রয় করতে। কারণ তিনি ভালোবেসে একবারের জায়গায় একাধিকবার আবদার করতেন বই বা শিশুপত্রিকা নেওয়ার জন্য। কিন্তু কী আশ্চর্য দেখুন- নটবর’দার নিজের প্রচার নয় ওই বই বা পত্রিকাগুলোয়, শুধু আপনার-আমার সন্তানের জ্ঞানের কথাই লেখা ছিলো। যা হাজার হাজার মানুষের কাছে নটবর’দা পৌঁছে দিতেন সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে। কখনও নিজের চা-বিস্কুট আবার কখনও নিজের এবং পরিবার পরিজনের দু’মুঠো অন্ন জোগাড়ের জন্যে। আমরা মানুষেরা এই আছি এই নেই। গাছ বা পশুপাখিরা বরং মানুষের চেয়ে এখন বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে বেশী নিশ্চিত। আর মানুষের বাঁচা আজ সবচেয়ে অনিশ্চিত। কারণ মানুষ আর মানুষের দিকে ফিরেও দেখছে না। সময় বড় অল্প। নিজেকে সামলাতেই পুরো চব্বিশটা ঘণ্টা কেটে যায় মানুষের। অন্যের দিকে তাকানোর প্রশ্নও নেই, সুযোগও নেই, ইচ্ছেও নেই। তাই নটবর’দা চলে যাওয়ার মূহুর্তে কেউ যেন দেখেও দেখলো না। জেনেও জানলো না। খুব অসময়ে চলে গেলেন আমাদের সবার পরিচিত বিরক্ত উদ্রেককারী নটবর’দা। মৃত্যুর সময় তিনি জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর কোন ফোন এসেছিল কিনা। নটবর’দা কার ফোন আশা করেছিলেন?

নটবর’দা থাকতেন পাইওনিয়ার রোডের প্রায় পরিত্যক্ত একটা ভাড়ার বাড়িতে, স্ত্রী-পুত্র-কন্যার সাথে। রোজ নিয়মিত ঢাকার বিভিন্ন স্কুল চত্ত্বরে, নাটক পাড়ায়, শহরের নানা অলিগলিতে বই, শিশুপত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন আমাদেরই হাতে পৌঁছে দিতেই তিনি আসতেন দিনের বিভিন্ন সময়ে। এক সময় স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, ভালো অভিনেতা ছিলেন মঞ্চ ও দূরদর্শনের। চলনে বলনেও ছিলেন সরল স্নিগ্ধ ছন্দের। নাটক পাড়া, শিল্পকলা একাডেমি চত্ত্বর ছাড়াও বেইলি রোড ও টিএসসির মুক্তাঙ্গনে নিয়মিত বই, শিশুপত্রিকা বিক্রি করেছেন তিনি। অভিমানে চলে গেলেন এই প্রিয় আঙিনা ছেড়ে। আর কখনও আসবেন না আমাদের জ্বালাতন করতে। নটবর’দার অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। এমন মৃত্যুতে শোক প্রকাশের কোনো ভাষা থাকে না। ওপারে শান্তিতে থাকুন তিনি।সালাম নটবর’দা।”

একদিন এভাবেই হয়তো লেখা হবে আমাকে নিয়ে,
হবে স্মৃতিচারণ।
তখন আমি ওই দূর আকাশের তারা।

আহা জীবন, এই আছে এই নেই..!


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.