সিলেটঃ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভর্তি কমিটির ভুল বার্তায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৯৫ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। এক সপ্তাহ আগে ভর্তির জন্য আহ্বান করে ভর্তির আগের দিন ওয়েবসাইট ও মেসেজের মাধ্যমে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের না করে দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। ছড়িয়েছে বিভ্রান্তিও।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়ায় ‘বি’ ইউনিটের (বিজ্ঞান শাখা) তৃতীয় পর্যায়ের মেধাতালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে ভুলবার্তা দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটি গত সপ্তাহে তৃতীয় ধাপে ‘বি’ ইউনিটের বিজ্ঞান শাখার ৪০১ থেকে ৪৯৫তম মেধাক্রমধারীদের ২২ জুন ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আহ্বান জানায়। মেসেজ ও ওয়েবসাইটে দেওয়া এই তথ্য অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতিও গ্রহণ করেন। তবে হঠাৎ করেই ভর্তি কার্যক্রমের একদিন আগে শুক্রবার (২০ জুন) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে জানানো হয়, ভুলবশত এই তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছিল। নতুন তালিকা অনুযায়ী, ‘বি’ ইউনিটের মানবিক শাখার ৫৮১ থেকে ৬৫০তম মেধাক্রমধারীদের ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য বলা হয়।
এ ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। শাবিপ্রবিতে ভর্তি হওয়ার জন্য অনেকে ভর্তি বাতিল করেছেন আবার অনেকে বাস ও ট্রেনের টিকিটও কেটেছিলেন।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী সাজিদুর রহমান বলেন, ভর্তির জন্য ডেকে এখন একদিন আগে বলছে না যেতে। আমি যশোর থেকে আসছি বাবার সঙ্গে। যাওয়া-আসার জন্য ৬ হাজার টাকার টিকিট কেটেছি। অনেকে তো অন্য জায়গায় ভর্তি বাতিল করেছে শাবিপ্রবিতে ভর্তির জন্য। এটা আগে বলা হলো না কেন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, এক সপ্তাহ আগে বি ইউনিটের বিজ্ঞান বিভাগে ৩য় কলে আমার ডাক এসেছিল। কিন্তু গতকাল আবার সেই কল সংশোধন করছে শাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে এটা নাকি ভুল হয়েছে। ভুল হলে ৫ দিন পরে সেইটা কীভাবে সংশোধন করে। ১০ থেকে ১২ জন স্টুডেন্ট আমরা অন্য ইউনিভার্সিটির ভর্তি ক্যানসেল করে ফেলেছি শাবিপ্রবিতে ভর্তি হওয়ার জন্য। এছাড়া সবাই টিকিট কেটে ফেলেছে সিলেটে আসার জন্য। এসবের দায় কে নেবে? বিশেষ করে যারা অন্য ইউনিভার্সিটির ভর্তি বাতিল করেছে তারা এখন কী করবে? ভর্তি কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা একজন অন্যজনের নম্বর দিচ্ছে। আর বলছে উনি আমার থেকে ভালো বলতে পারবেন।
এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি মেসেজ পাওয়ার পর পরিবারের সবাই অনেক খুশি হয়েছিল। বাবা প্রতিবেশীদের জানিয়েছেন আমি চান্স পেয়েছি। ভর্তি হওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতিও নিয়েছি। এখন হঠাৎ করে বলছে ভর্তি ভুলে বিজ্ঞান শাখার বার্তা দেওয়া হয়েছে। বাবা গতকাল এই চিন্তায় প্রায় স্ট্রোক করার মতো অবস্থা ছিল।
এরই প্রেক্ষিতে অনেক শিক্ষার্থী ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, দেশের স্বনামধন্য এরকম একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরকম হয়রানি কোনোভাবেই কাম্য নয়। ভর্তি কোনো তামাশা কিংবা ছেলেখেলা নয়। তাছাড়া ভুল হলে সেটা সঙ্গে সঙ্গে জানানো উচিত ছিল। ৫ দিন পর আমাদের জানানো হয়েছে। এর জন্য আমরা প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেব।
ভর্তি কমিটির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরাও। জালাল উদ্দিন নামের এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শাবিপ্রবির মতো দেশের উচ্চশিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা এমন আচরণ আশা করিনি। ভর্তি কার্যক্রমে এমন গাফিলতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন ও পারিবারিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ভর্তিতে ভুল বার্তায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরাও। ভর্তি কমিটির দায়সারা মনোভাবের নিন্দাও জানিয়েছেন অনেকে। যেসব শিক্ষার্থী শাবিপ্রবিতে ভর্তির জন্য অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করেছেন তাদেরকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় ভর্তি ও ক্ষতিপূরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভুলবশত মানবিকের পরিবর্তে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের মেসেজ দেওয়া হয়েছে। তবে যারা এ কারণে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করেছে, তাদের জন্য আমরা একটি ব্যবস্থা নেবো। গুচ্ছভর্তি শেষে অনেক আসন খালি হবে। তখন আমরা ভর্তির জন্য চতুর্থ কল করবো। তখন যাদের মেসেজ দেওয়া হয়েছিল, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কেননা পরবর্তী মেধাতালিকায় তারা রয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. বদিউজ্জামান ফারুক বলেন, বি ইউনিটে মানবিক শাখাকে ভর্তির জন্য ডাকার পরিবর্তে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ভুলবশত মেসেজ পাঠানো হয়েছে। ভর্তি শেষে আমরা বিষয়টি নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেবো এবং শিক্ষার্থীদের পরবর্তী নির্দেশনা জানাবো।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২২/০৬/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.