নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গত শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা জানান। তবে এই মাসে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা থাকায় তার আগে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপিসহ একাধিক রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে, নির্বাচনের এই সময়ে পাবলিক এই পরীক্ষাটি নেওয়া কোনোভাবে সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন অভিভাবকরা। তারা এই পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ১০ এপ্রিল চলতি বছরের (২০২৫ সাল) এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। এবারের পরীক্ষায় বসেছিল মোট ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন পরীক্ষার্থী। এর আগে গত বছর ২০২৪ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বসেছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার পরীক্ষার্থী। তাছাড়া চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২৬ জুন থেকে।
গত মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেছিলেন, এবারের এসএসসি পরীক্ষা যেহেতু রমজানের পরে হয়েছে, আগামী বছরের পরীক্ষাও একই সময়ে হতে পারে। এখনো এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়নি, আগে এ বছরের পরীক্ষাটা হোক। তবে নির্বাচনের বিষয়টা তো আমাদের জানানো হয়নি। তাই ২০২৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। নির্বাচনের বিষয় বা তারিখ জানালে তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানা গেছে, পরীক্ষা শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তিন থেকে ৪ মাস আগে পরীক্ষা শুরুর তারিখের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনের আলাপ-আলোচনা। নির্বাচনের এই ডামাডোলে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা, উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তাদের অভিভাবকরাও।
কয়েকজন অভিভাবক বলেন, একদিকে নির্বাচন, অন্যদিকে বাচ্চাদের পরীক্ষা। স্বাভাবিকভাবে প্রতিবছর যেভাবে হয়, সেভাবে পরীক্ষা হলে তো ভালোই। নির্বাচনের কারণে পরীক্ষার তারিখটা আগে থেকে জানিয়ে দিলে বাচ্চাদের সেভাবে প্রস্তুত করতে পারতাম।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সংগঠন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নির্বাচন যদি এপ্রিলে হয়, তাহলে অবশ্যই পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই দিতে হবে। আমরাও চাই সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি নির্বাচন। আর এ নির্বাচনে আয়োজন ও বাস্তবায়নে দেশবাসী সকলকেই কিছু কিছু বিষয়ে কষ্ট স্বীকার করতে হবে। তাই দেশবাসীর চাহিদা জাতীয় নির্বাচনের জন্য পরীক্ষা পেছানো খুবই প্রয়োজন। পরীক্ষা পেছানো বা আগানোর বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নির্বাচনের সময়ে পরীক্ষা নেয়া কোনো মতেই সম্ভব না।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা এপ্রিল মাসে হতে পারে। আর এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে জানানো হবে।
গত সোমবার (৯ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এপ্রিল মাসে তো প্রচণ্ড খরতাপ থাকে, ঝড় বৃষ্টি হয়, এসএসসি পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা থাকে, মাদরাসার পরীক্ষা থাকে। সে সময় কেবল রোজার ঈদ শেষ হবে। এপ্রিলে নির্বাচন হলে রমজানে প্রচারণা চালাতে হবে। রোজা রেখে প্রচারণা চালাবে কীভাবে! মানুষ রোজা রাখবে না নির্বাচনের প্রচারণা চালাবে।
উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের পর এক প্রতিক্রিয়ায় গণসংহতি আন্দোলন বলছে, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় হিসেবে এপ্রিলের প্রথমার্ধের কথা উল্লেখ করেছেন, যে সময়টি, প্রতিকূল আবহাওয়া, পাবলিক পরীক্ষা এবং এর আগে রোজার কারণে, সবমিলিয়ে নির্বাচনের জন্য কতটা অনুকূল ও বাস্তবসম্মত হবে- সে ব্যাপারে আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে অংশীজনদের সাথে আরো আলোচনা ইতিবাচক হবে বলে আমরা মনে করি।
শিক্ষাবার্তা /এ/১০/০৬/২০২৫
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.