এইমাত্র পাওয়া

দুর্গন্ধে দমবন্ধ অবস্থা, ময়লার গন্ধে নাক চেপে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা

পাবনাঃ দুর্গন্ধে দমবন্ধ অবস্থা, এর মাঝেই চলছে ক্লাস। একহাতে নাক চেপে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। স্কুলে এসে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। দিনদিন কমছে উপস্থিতির হার।

এ চিত্র পাবনা শহরের মহেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয় থেকে ১০০ গজেরও কম দূরত্বে মহাসড়কের পাশে খোলামেলা পরিবেশে পৌরসভার বর্জ্য ফেলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দুর্ভোগে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও সড়কে চলাচলকারীরাও।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাবনা শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের অদূরে মহেন্দ্রপুর রেললাইন ও ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের পাশে ফেলা হয়েছে পৌরসভার বর্জ্য। এর পাশেই ১০০ গজেরও কম দূরত্বে মহেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলে ঢুকতেই চোখে পড়ে শিশু শিক্ষার্থীরা ছোটাছুটি করছে। তবে অধিকাংশই ক্লাসরুমে। দ্বিতীয় তলায় তৃতীয় শ্রেণির ক্লাসরুমে উঁকি দিতেই দেখা যায় শিক্ষার্থীরা এক হাতে নাক চেপে ধরে রয়েছে ও অন্য হাতে লিখছে। সামনের চেয়ারে বসে শিক্ষিকা। তিনিও ওড়নায় মুখ ঢেকে রয়েছেন। বিদ্যালয়টির প্রায় সব কক্ষেই দেখায় যায় এ দৃশ্য।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, সাধারণ সময়ে তো বটেই, গরম পড়লে এ অবস্থা আরও প্রকট হয়। গত মাস তিনেক আগে বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মহাসড়ক ঘেঁষে পাবনা পৌরসভা বর্জ্য ফেলা শুরু করে। একদম খোলামেলা অবস্থায় এসব ময়লা আবর্জনা ফেলায় পচা দুর্গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে স্কুলে টেকা মুশকিল হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অনেকেই স্কুলেও আসা বন্ধ করেছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোখলেসুর রহমান রাসেল বলেন, এখানে এতো নিকটে একটি স্কুল রয়েছে, ময়লা ফেলার আগে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত ছিল। হুট করে ময়লা ফেলার কারণে স্কুলের বাচ্চারা ক্লাস করতে পারে না। আমরা শিক্ষকরাও ঠিকভাবে ক্লাস নিতে পারছি না। রোজার মাস থেকে এ পর্যন্ত অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এসব নিয়ে অভিভাবকেরা দারুণভাবে উদ্বিগ্ন। অনেকেই স্কুল পরিবর্তনও করতে চাচ্ছে।

শিক্ষক সালেহা পারভীন ও রাশেদুল ইসলাম বলেন, গরম পড়লে অসম্ভব দুর্গন্ধ হয়। একদম ঝাঁঝালো গন্ধ। এগুলোর মধ্যে ক্লাস নেওয়া যায় না। বিভিন্ন সময় বেশকিছু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ায় অভিভাবক ডেকে তাদের বাড়ি পাঠানো হয়। প্রায়ই শিক্ষার্থীরা স্কুলে বমি করছে। ডায়রিয়ায়ও আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। এর ফলে স্কুলে বাচ্চাদের অনুপস্থিতির হার বেড়েছে। সামনে পরীক্ষা, কীভাবে কোর্স সম্পন্ন করাবো এ নিয়ে চিন্তায় আছি। দ্রুত এ ময়লার ভাগাড় এখান থেকে সরানোর দাবি জানাচ্ছি।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী, তোয়া ও রাব্বির ভাষ্য, এই দুর্গন্ধে ক্লাস করা যায় না। আমরা অনেকেই ওই মহাসড়ক দিয়ে স্কুলে আসি। ওখান দিয়ে আসতেই বমি হতে চায়। এরপর আবার স্কুলে এসেও সেই দুর্গন্ধ। দরজা-জানালা বন্ধ করেও নাক চেপে ক্লাস করতে হয়। আমাদের অনেক সহপাঠী বমি করেছে, অসুস্থ হয়েছে। এতো সমস্যায় মনোযোগ ধরে রাখা যায় না। আমরা এই ময়লার ভাগাড় এখানে চাই না।

শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় শহরের অনন্ত বাজার, মুজাহিদ ক্লাব, মাসুম বাজার ও টার্মিনাল এলাকার বিভিন্ন মেসে থাকেন অনেক শিক্ষার্থী। এছাড়া শহরের বাইরে থেকে এ সড়ক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বাসে ক্যাম্পাসে আসেন অনেক শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৮টি বাস দিনে ১৫-১৬ বার এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। শিক্ষক কর্মকর্তাদের দুটি মিনিবাসও চলাচল করে। মহাসড়ক ঘেঁষে এভাবে ময়লা ফেলায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। দুর্গন্ধে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় রাখা উচিত।

একই ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও সড়কে চলাচলকারীরাও। তারা জানান, অনেক দূর থেকে নাক চেপে ধরে সড়কের ওই অংশটুকু পাড়ি দিতে হয়। দুর্গন্ধে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কের এই অংশ। আশেপাশের ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ।

স্থানীয় বাসিন্দা শরিফ ও মেহেদী হাসান বলেন, এটা অত্যন্ত জনবহুল এলাকা। এখানে ময়লা ফেলার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ময়লার ভাগাড়ের পাশ দিয়ে বসতবাড়ি। পৌরসভার জায়গার পাশাপাশি আমাদের ব্যক্তিগত মালিকানা জায়গাতেও এসব ময়লা ফেলা হচ্ছে। এরইমধ্যে কয়েকটি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাড়িঘরে থাকা যাচ্ছে না। ঘর-বিছানা ভর্তি মাছি আর মাছি।

তিনি আরও বলেন, গন্ধে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও করা যাচ্ছে না। এরমধ্যে আবার শতাধিক শূকর ছেড়ে দিয়েছে। এরা যখন ময়লা নাড়ে তখন দুর্গন্ধ আরও বাড়ে। এলাকাগুলোর পরিবেশ চরম অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটে চলাচল করা যাচ্ছে না।

মহাসড়কের পাশের শাহিন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারী শাহিন আলম বলেন, আশপাশে এত এত দোকানপাট ও বসতবাড়ি। এটা কি ময়লা ফেলার জায়গা? একদম খোলামেলাভাবে ময়লা ফেলায় দুর্গন্ধে কেউ কোনো দোকানে বসে না। সব দোকানদার কাস্টমার হারিয়েছে। আমাদের কারখানায় শ্রমিকেরা কাজে আসতে চায় না। জনবহুল এ এলাকা থেকে দ্রুত বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে এগুলো অপসারণের দাবি জানান এ ব্যবসায়ী।

সড়কটিতে কয়েক বছর ধরে ইজিবাইক চালান মিলন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, রাস্তা ঘেঁষে সারা শহরের ময়লা ফেলছে। গাড়ি নিয়ে এখান দিয়ে যাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। এখানে এলেই যাত্রীরা জোরে চালিয়ে দ্রুত পার হতে বলেন। এতে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।

এ বিষয়ে পাবনা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. ওবায়েদ উল হক বলেন, আমাদের বর্জ্য ফেলার মূল স্টেশনটি ফকিরপুরে। এটির দুই তৃতীয়াংশ জায়াগায় একটি প্রকল্পের কাজ চলমান। এ প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে শহরের সব বর্জ্য ফেলার একটি দারুণ ক্ষেত্র তৈরি হবে। ওখানে কাজ চলমান থাকায় বাধ্য হয়ে আমাদের মহেন্দ্রপুরে বর্জ্য ফেলেত হচ্ছে। তবে দুর্গন্ধ কমাতে আমরা নিয়মিত ব্লিচিং দিচ্ছি বা এ সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছি। সড়কের পাশটাতে টিন দিয়ে আটকেও দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, চলমান প্রকল্প শেষ হতে প্রায় এক থেকে দেড় বছর সময় লাগতে পারে। এ সময়টুকু আমাদের এখানেই বর্জ্য ফেলতে হবে। আপাতত আমাদের বিকল্প কোনো পথ নেই। পৌরসভার জায়গা ছাড়া অতিরিক্ত কোথাও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে না বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৪/০৫/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading