চট্টগ্রামঃ নানা জল্পনা কল্পনা শেষে অবশেষে বিশেষ বিবেচনায় চট্টগ্রামের ৫০ শিক্ষার্থী এবার এইচএসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সম্মতি পেয়েছেন। চট্টগ্রামের হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজে নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করা সেই ৫০ শিক্ষার্থীকে ফরম পূরণে অনুমতি দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের যৌথ আবেদনে তাদের ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়া হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, অভিভাবক, শিক্ষা বোর্ড ও অন্যদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিশেষ বিবেচনায় ফেল করা সেই ৫০ শিক্ষার্থীকে ফরম পূরণের সম্মতি দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কলেজ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা সন্তানদের লেখাপড়ার মাধ্যমে পরীক্ষায় পাস করানোর নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। বোর্ড থেকে অনুমতি পাওয়া সাপেক্ষে কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করবে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) ৫০ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের বিষয়ে সম্মতি দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ছিল ১ হাজার ৬৩৯ জন। এদের মধ্যে নির্বাচনী পরীক্ষায় পাস করে ১ হাজার ৪৫৪ জন। তিনের অধিক বিষয়ে ফেল করে ২১ জন। এক বা দুই বিষয়ে ফেল করে ১৬৪ জন। পরে ফেল করা শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানায়। একপর্যায়ে তিনের অধিক ফেল করা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ফরম পূরণ থেকে বিরত রাখে কর্তৃপক্ষ। তবে এক বা দুই বিষয়ে ফেল করা ১৬৪ জন ক্রমাগত দাবি জানাতে থাকে।
তাদের অব্যাহত দাবির মুখে এবং অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৬৪ শিক্ষার্থী থেকে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেখানে ১১৪ জন পাস করে। বাকি ৫০ জন আবারও ফেল করে। সেখানে বেশ কিছু শিক্ষার্থী ৩৩-এর মধ্যে ৪ থেকে ৭ নাম্বারও পেয়েছেন। এতে ফেল করা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারার ক্ষোভে সংবাদ সম্মেলনও করেছিল। ফরম পূরণের আবেদনের জন্য বোর্ড থেকে নির্ধারিত শেষ সময় ছিল ২১ এপ্রিল।
গত ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, কলেজের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনী পরীক্ষায় তাদের ফেল করিয়েছে। পরীক্ষায় বসার অনুমতি না দিলে তারা আমরণ অনশন কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেয়। অন্যদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করানো বিষয়টি সঠিক নয়। যারা এসব কথা বলছে তারাও এই কলেজের শিক্ষার্থী। তাদের ভালো রেজাল্ট কলেজের সুনাম বৃদ্ধি করবে। শিক্ষক এবং অভিভাবকরা সবসময়ে প্রত্যাশা করেন সন্তানদের ভালো ফলাফল। নির্বাচনী পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে খারাপ করলে এটার দায়ভার কলেজ কর্তৃপক্ষ নিবে না। শিক্ষা বোর্ড যদি তাদের বিশেষ বিবেচনায় ফরম পূরণের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনুমতি দেয় তারা ফরম পূরণ করতে পারবেন।
এ বিষয়ে হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অহিদুল আলম বলেন, নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করা ৫০ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের অনুমতি দিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ সম্মত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আবেদন ও অভিভাবকদের পাস করার নিশ্চয়তা প্রদানের পর আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন বোর্ড থেকে অনুমতি মিললে ফরম পূরণের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক একেএম ইসমাইল বলেন, পরীক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক, অভিভাবক সবাই তাদের ছেলেরা ভালো রেজাল্ট করুক, সে প্রত্যাশা সবসময় করে থাকে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সুনামও রক্ষা হোক সে কামনা করেন সবাই। এখানে কিছু ঘটনা ঘটেছে। ফেল করার পর পাস করিয়ে দিতে নানাভাবে চাপ তৈরি করা, বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলনও করেছে। কিন্তু প্রকৃত বিষয় কি সেটাও জানা দরকার।
তিনি বলেন, ফেল করা অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে কম নাম্বারও পেয়েছে এমনও আছে। এসব আমাদেরই ছাত্র, আমাদের সন্তান। এ পরীক্ষার বিষয়ে মেয়রসহ অনেকেই জানেন। একইভাবে বোর্ডের সম্মতিরও প্রয়োজন হয়। সবকিছু বিবেচনা করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ফরম পূরণের জন্য কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে দ্রুত সময়ে।
সালাউদ্দিন নামের একজন অভিভাবক বলেন, কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্য একটু ঝামেলা তৈরি হয়েছিল। এখানে অনেকেই টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করেছে। ফলে পরীক্ষা অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলেই ঝামেলা তৈরি হয়েছে। শুনেছি বিশেষ বিবেচনায় ফেল করা ছাত্ররা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে বলে জানা গেছে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/৩০/০৪/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.