রংপুরঃ মিঠাপুকুরে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে অর্থের বিনিময়ে নকল সরবরাহের প্রতিযোগিতার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় উপজেলার পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায় কেন্দ্রের আশপাশ থেকে ভেতরে নকল সরবরাহের প্রতিযোগিতা চলছে।
এ সময় স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে বেশ কয়েকজনকে প্রশ্নের উত্তরপত্রের ফটোকপি সহ আটক করে ছেড়ে দেয়া হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার মধ্যস্থতায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে ৬ বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রতিবছর সক্রিয় হয়ে উঠে নকল সিন্ডিকেট। ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, গণিত, রসায়ন, পদার্থ ও জীব বিজ্ঞানসহ ৬টি বিষয়ের প্রতিপত্রে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার চুক্তিতে কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম যোগসাজশে নকল সরবরাহ করা হয় পরীক্ষার হল রুমে। এ বছর এসএসসি পরীক্ষা শুরুর পূর্বেই “মিঠাপুকুরে এসএসসি পরীক্ষার ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা’ শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর এই সেণ্টারটিতে শৃঙ্খলা রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজনের জায়গায় ২ জন ট্যাগ অফিসার দেয়া হয় ও প্রশাসনের কঠোরতায় বাংলা প্রথম এবং দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে নকলমুক্ত পরিবেশে ২টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র এবং গণিত পরীক্ষায় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার চুক্তিতে নকল সরবরাহ করার পুনরায় অভিযোগ উঠে।
স্থানীয়রা জানায়, পরীক্ষায় নকল সরবরাহ করতে কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম নিজের পছন্দমতো শিক্ষককে দিয়ে কেন্দ্রের ডিউটি বণ্টন করে দেন। প্রত্যেক পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক দিয়ে প্রশ্নপত্র সলভ করে অফিস রুমের প্রিন্টারে উত্তরপত্র তৈরি করে কেন্দ্র সচিবের নির্দেশনায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হায়দার, অলি, রায়হান, সোহাগী ও শিক্ষক মুসাকে দিয়ে প্রতি রুমে উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়। পরীক্ষার রুমের ডিউটিরত শিক্ষকদের কেউ অভ্যন্তরীণ দায়িত্ব সামলায় কেউবা দরজায় পাহারা দেয়। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার আসলে সিগনাল দেয়া মাত্রই নকল লুকিয়ে ফেলে শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ রয়েছে কেন্দ্র সচিবের নেতৃত্বে এই অনিয়ম বাস্তবায়ন করে স্কুলের নাইটগার্ড হায়দার। নাইটগার্ড হয়ে অফিস সহকারীর দায়িত্বসহ কেন্দ্রসচিবের নানাবিধ অনিয়মের নেতৃত্ব দিতে পুরো কেন্দ্র জুড়েই বিচরণ থাকে হায়দারের।
এদিকে প্রশ্ন দেয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে বাহিরে পাঠিয়ে দেয়া হয় প্রশ্নপত্র। এরপরেই বাহিরে অবস্থানরত বিভিন্ন কোচিং সেণ্টার ও স্কুলের শিক্ষকরা মিলে শুরু হয় প্রশ্নপত্র সমাধানের প্রতিযোগিতা। প্রশ্নপত্র সমাধান করে নিকটবর্তী ভানজেরমোড়, বৈরাগীগঞ্জ, জায়গীরহাট, মাঠেরহাট থেকে ফটোকপি করে দেড়ঘণ্টার মধ্যে পরিদর্শনের নামে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, তথাকথিত সাংবাদিক ও চা নাস্তা নিয়ে যাওয়ার অজুহাতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মাধ্যমে উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও বহিরাগতরা কলেজের পিছনের সেফটি ট্যাংকের পাইপ দিয়ে জানালা দিয়ে ও দেয়ালের পাশে গিয়ে পরীক্ষার্থীকে বলে রাখা নির্ধারিত স্থানে উত্তরপত্র রেখে আসে।
এ বিষয়ে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাহেদুল আলম জানান, আমার এই কেন্দ্রে ২ জন ট্যাগ অফিসার আছে। এখানে নকল করার কোনো সুযোগ নেই। কিছু অসৎ ব্যক্তি অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে আমার নামে মিথ্যাচার করছে।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মণ জানান, পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো নকল মুক্ত করতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে প্রতিটি কেন্দ্রে। প্রতিদিন পরীক্ষা শুরুর পূর্ব মুহুর্তে লটারির মাধ্যমে শিক্ষকদের ডিউটি ভাগ করে দেয়া হচ্ছে। পায়রাবন্দ কেন্দ্রের বাহিরে নকলসহ যুবক আটক হওয়ার ঘটনা শুনেছি, প্রশাসনকে তাৎক্ষণিক এবিষয়ে অবগত না করায় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২২/০৪/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.