এইমাত্র পাওয়া

জাবিতে আবার গাছ কেটে ভবন নির্মাণের আয়োজন

ঢাকাঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার গাছ কেটে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার গাছ কেটে ভবন নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পেছনে ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সামনের জঙ্গলটি।

ইতিমধ্যে নির্ধারিত স্থানটিতে সুতা টাঙিয়ে লাল পতাকা ঝুলিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের পাশের জলাশয় ভরাট করে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের উদ্যোগ নেয় গত প্রশাসন। তবে সে সময় শিক্ষার্থী ও পরিবেশবিদেরা আপত্তি জানান। এই বাধার মুখে বর্তমান প্রশাসন ওই স্থান থেকে সরে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ৬টি ১০ তলাবিশিষ্ট নতুন হল নির্মাণ করা শেষ। এসব স্থাপনা করতে গিয়ে এক হাজারের বেশি গাছ কাটা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা বাধা দিলেও প্রশাসন কর্ণপাত না করে ভবন নির্মাণ চালিয়ে গিয়েছিল। তবে আওয়ামী সরকারের পতনের পর নতুন প্রশাসন এই প্রথমবারের মতো গাছ কেটে ভবনের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত প্রশাসন যখন যত্রতত্র গাছ কেটে অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করত, তখন বর্তমান প্রশাসনে যাঁরা আছেন, তাঁরা সেই সময় বিরোধিতা করতেন। কিন্তু এখন প্রশাসনে নিজেরা দায়িত্বে এসে একই রকম উদ্যোগ নিয়েছেন, যা অপ্রত্যাশিত।

তবে প্রশাসন বলছে, টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি (টিএমসি) ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। জায়গাটিতে ভবন করা হলে পরিবেশের তুলনামূলক কম ক্ষতি হবে।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বলেন, মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন না করে কোনো প্রকার গাছ কেটে ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়তলাবিশিষ্ট ১ লাখ ৩০ হাজার বর্গফুটের ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনটি নির্মাণ করতে অন্তত ৬০টি গাছ কাটা পড়বে। যার মধ্যে সেগুন, তালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে।

জায়গাটিতে ভবন নির্মাণ করা হলে বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বন্য প্রাণী আলোকচিত্রী অরিত্র সাত্তার। তিনি বলেন, এই অঞ্চল বর্তমানে শিয়াল, বেজি, বাগডাশ, বনবিড়ালসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর অবাধ বিচরণস্থল হিসেবে কাজ করছে। তার চেয়ে বড় বিষয়, এই অঞ্চলটি জুড়ে একটি বন্য প্রাণী চলাচলের রাস্তা তৈরি হয়েছে, যা দিয়ে বন্য প্রাণীরা খাদ্যস্থলের দিকে এগোতে পারে, যেখানে তারা শিকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম খাবার সংগ্রহে ঘুরে বেড়ায়। স্থানটি নষ্ট হলে তারা সংকটে পড়তে পারে।

এ বিষয়ে টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যসচিব ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক নাসিরউদ্দিন বলেন, টিএমসি কমিটি, বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে যে জায়গাটি ছিল, সেখানে পরিবেশবিদদের আপত্তি ছিল, তাই নতুন করে এই স্থানটি টিএমসি ঠিক করে দিয়েছে। স্থানটিতে ভবন নির্মাণের স্বার্থে ৪০টির মতো গাছ কাটা পড়বে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতির দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সেটার জন্য যথাযথ কমিটি (টিএমসি) রয়েছে। তারা বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে জায়গাটি নির্ধারণ করেছে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২০/০৪/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading