এইমাত্র পাওয়া

জয়পুরহাটে এজেন্ট শাখার ক্যাশিয়ারের কোটি টাকা আত্মসাৎ

জয়পুরহাটঃ জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের এজেন্ট শাখা থেকে গ্রাহকদের দেড় কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সেখান কর্মরত ক্যাশিয়ার মাসুদ রানার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি ছয় মাস ধরে বিভিন্ন হিসাব থেকে কৌশলে এসব টাকা সরিয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে জমি, পুকুর ও মুরগির খামার করেছেন।

ঘটনাটি জানাজানির পর ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা গতকাল রোববার সন্ধ্যায় শাখায় এসে কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করেন। খবর পেয়ে উপস্থিত হয় পুলিশ। এ সময় ক্যাশিয়ার মাসুদ প্রাথমিকভাবে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন। তবে গ্রাহকদের দাবি, মাসুদ দেড় কোটি টাকার বেশি তুলে নিয়েছেন। পুরো হিসাব করলে তা আরও বাড়তে পারে।

এ ঘটনায় মধ্যরাতে এক গ্রাহক বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে প্রধান আসামি ক্যাশিয়ার মাসুদের পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হয়েছে এজেন্ট শাখার মালিক মো. জাহিদুল ইসলাম ও ব্যবস্থাপক রিওয়ানা ফারজানাকে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাহিদুল ২০১৮ সালে উপজেলা পরিষদের সামনে মণ্ডল মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ইসলামী ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার অধীনে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেন। এখানে প্রায় দুই হাজার হিসাব রয়েছে। শাখাটিতে ব্যবস্থাপক, ক্যাশিয়ারসহ তিনজন কর্মকর্তা আছেন। অভিযুক্ত মাসুদ শুরু থেকে এখানে ক্যাশিয়ার পদে কর্মরত।

ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, তাঁদের হিসাবে যে পরিমাণ টাকা জমা থাকার কথা, সেটি নেই। ব্যাংকের অন্য শাখায় গিয়ে তাঁরা ঘটনাটি জানতে পারেন। এরপর তাঁরা এজেন্ট শাখায় এসে ব্যবস্থাপক ও ক্যাশিয়ারের সঙ্গে কথা বলেন। ক্যাশিয়ার মাসুদ তাঁদের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করেছেন।

স্থানীয় দারুল কোরআন মাদ্রাসার মুহতামিম (প্রধান শিক্ষক) ফিরোজ আহমদ জানান, তাঁদের মাদ্রাসার হিসাবে ৩৯ লাখ টাকা ছিল। গত বৃহস্পতিবার তাঁরা ১৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল ফোনে ব্যাংক লেনদেনের কোনো মেসেজ আসত না। এজেন্ট শাখা থেকে ভুয়া হিসাব বিবরণী দেওয়া হচ্ছিল। সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা রোববার ইসলামী ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখা থেকে হিসাব বিবরণী নেন। সেখানে দেখা যায় মাত্র ১৭ হাজার ২৯৯ টাকা রয়েছে। পরে এজেন্টে ব্যাংকে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ক্যাশিয়ার এই হিসাবসহ অন্যান্য হিসাব থেকে টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করেন।

মাদ্রাসার সেক্রেটারি মো. আব্দুল মোমিন বলেন, ‘আমার নিজের অ্যাকাউন্ট থেকেও ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন।’

হাইটেক পৌর কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘এই ব্যাংকে আমার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পাঁচ লাখ টাকা ছিল। আজ (রোববার) টাকা তুলতে এসে জানতে পারি আমার অ্যাকাউন্ট থেকেও টাকা সরিয়ে আত্মসাৎ করেছেন মাসুদ রানা। তিনি আমার কাছে সেটি স্বীকার করেছেন।’

জানতে চাইলে অভিযুক্ত মাসুদ রানা জানান, এজেন্ট শাখায় কেউ টাকা তুলতে এলে তিনি ওই গ্রাহকের আঙুলের ছাপ নিয়ে চাহিদার তুলনায় বেশি টাকা তুলতেন। এরপর গ্রাহকের চাহিদার টাকা দিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিজের কাছে রেখে দিতেন। টাকা লেনদেনের মেসেজ গ্রাহকের কাছে যেত না। তিনি আত্মসাৎ করা টাকা দিয়ে গ্রামের বাড়ি পাঁচবিবির রহমতপুরে জমি, পুকুর ও মুরগির খামার করেছেন।

এ বিষয়ে এজেন্ট শাখার মালিক জাহিদুল বলেন, ‘ব্যাংকের ক্যাশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছে—এমন খবর পেয়ে এসে দেখি গ্রাহকেরা ভিড় করছে। এমনকি সে আমার (শাখার মূল হিসাব) অ্যাকাউন্ট থেকেও টাকা আত্মসাৎ করেছে। তাকে এগুলো ফেরত দিতে হবে।’

ইসলামী ব্যাংক জয়পুরহাট শাখার ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান জানান, এ ঘটনায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত করে অভিযুক্ত ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে আজ সোমবার যোগাযোগ করা হলে আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের খবর পেয়ে ওই ব্যাংকে গিয়েছিলাম। ব্যাংকের ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় দারুল কোরআন মাদ্রাসার মুহতামিম ফিরোজ আহমদ বাদী হয়ে মামলা করলে আমরা ওই ব্যাংক থেকে শাখার মালিক মো. জাহিদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক রিওয়ানা ফারজানা ও ক্যাশিয়ার মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনি। আজ তাঁদের আদালতে পাঠানো হবে।’

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৪/০৩/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading