এইমাত্র পাওয়া

গুরুদাসপুরে ধ-র্ষ-কের সন্তান লালন করতে গিয়ে বিপর্যস্ত জীবন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীর

নাটোরঃ দুই বছর আগে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ধর্ষণের শিকার হয়ে কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় এক স্কুলছাত্রী। ঘটনার পর থেকে সামাজিক অবহেলা, মামলা তুলতে ধর্ষকের হুমকি, সন্তানের খরচ বহনসহ নানা কারণে দুমড়ে মুচড়ে গেছে তার শৈশব কৈশোুর। বিপর্যস্ত জীবন নিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে লেখাপড়াও। শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিচার পাওয়া নিয়ে।

ধর্ষকের সন্তান লালন করতে গিয়ে অভাব-অনটন আর দুশ্চিন্তায় শ্যামলা গড়নের মুখটা—কালো কুচকুচে হয়ে গেছে। অথচ এই সময় ওই কিশোরীর বিদ্যালয়ে সহপাঠীদের সাথে কৈশোর রাঙানোর কথা ছিল।

গতকাল শনিবার বাড়িতে বসে দেড় বছর বয়সী শিশুটিকে কোলে নিয়ে ওই কিশোরী (১৩) জানায়, মা অন্যত্র বিয়ে করেছেন অনেক আগেই। পিতা থেকেও নেই। দাদির কাছে খেয়ে না খেয়ে বড় হচ্ছিল সে। এর মধ্যে খারাপ কাজের শিকার হয়ে তার কোলে ধর্ষকের শিশু। কোলের শিশুটিকে নিয়ে কঠিন বিপদ তাদের। নিজেদেরই খাবার জোটেনা, আবার শিশুর ভরণ-পোষণ নিয়ে নিদারুণ কষ্টে কাটছে তাদের জীবন।

কিশোরীর পরিবার জানিয়েছে—ধর্ষণের ঘটনায় কিশোরীর দাদি বাদি হয়ে ২০২৩ সালের ১৮ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন ধর্ষক জাহিদুল খাঁর (৫৫) বিরুদ্ধে। কিন্তু পুলিশ ধর্ষকে গ্রেপ্তার করতে গড়িমসি করে। সেসময় সংবাদ প্রকাশের পর র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন ধর্ষক জাহিদুল খাঁ। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ডিএনএ পরীক্ষায় ধর্ষকের সাথে নবজাতকের নমুনা মিলে যায়। প্রায় ৬ মাস ধরে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে বর্তমানে মামলা তুলে নিতে নির্যাতনের শিকার কিশোরী ও তার দাদিকে হুমকি দিচ্ছেন। জাহিদুল খাঁ গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের দক্ষিণ নাড়িবাড়ি গ্রামের কালু খাঁর ছেলে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি ইত্তেফাককে বলেন, আসামি জামিনে থাকলেও ধর্ষণ মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল কাদের বলেন, তিনি দুই মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছেন। মামলাটির ব্যাপারে তিনি তাৎক্ষণিক কিছু বলতে পারছেন না। তবে ধর্ষণের শিকার কিরোশীকে উপযুক্ত বিচার পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন তিনি। আসামি হুমকি দিয়ে থাকলে প্রয়োজনে আদালতের কাছে জামিন বাতিল চাওয়া হবে।

সেদিন যা ঘটেছিল
ওই কিশোরী জানায়, ঘটনার দিন শুক্রবার ছিল। দুপুরে গোসলের পর বাড়ির ভেতর কাপড় পরিবর্তন করছিল সে। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ধর্ষক জাহিদুল পেছন থেকে তাকে জাপটে ধরে মুখে গামছা পেঁচিয়ে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে জানালে গলা কেটে হত্যার হুমকিও দেন। ওই ঘটনায় সে কয়েকদিন অসুস্থ ছিল। ভয়ে বাড়ির বাহিরে যাওয়া হয়নি।

শিশুটির চাচি জানান, ঘটনার সাত মাস পর শিশুটির দৌহিক পরিবর্তন দেখা দেয়। জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দেয়নি সে। তবে প্রস্রাব পরীক্ষার পর প্রাথমিকভাবে গর্ভে সন্তান থাকার কথা জানতে পারেন তারা। সেময় স্থানীয় একটি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সে। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম নেওয়ার পর থেকে ওই কিশোরী আর বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। কিশোরীটি মাতৃত্ব নিয়ে কিছু না বোঝায় কোলের শিশু নিয়ে নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখিণ হতে হচ্ছে।

তিনি জানান, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর গ্রাম্য সালিশে রফা করতে চেয়েছিলেন ধর্ষক জাহিদ। কিন্তু তা হয়নি। এখন জামিনে এসে মামলা তুলে নিতে হুমকিও দিচ্ছেন ধর্ষক জাহিদুল।

মামলা তুলে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ধর্ষক জাহিদুল বলেন, তিনি জামিনে আছেন। ডিএনও পরীক্ষা হয়ে গেছে। আদালত যা সিদ্ধান্ত নেবেন তা তিনি মেনে নেবেন।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ জানান, এমন দুঃখজনক ঘটনা গুরুদাসপুরে এটিই প্রথম। ওই কিশোরী ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং আর্থিক অনটন দূর করতে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৬/০৩/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading