এইমাত্র পাওয়া

নিয়োগ বাণিজ্যের হোতা পাচুরিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার সাখাওয়াত হোসেন বেলালী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ দুর্নীতি, ভুয়া কমিটি ও ভুয়া রেজুলেশনে নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে পাবনার বেড়া উপজেলার পাচুরিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার সাখাওয়াত হোসেন বেলালীর বিরুদ্ধে। স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক নানা সময়ে তদন্ত হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনিয়ম করে পার পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন সুপার সাখাওয়াত হোসেন বেলালী ও তার অনুসারীরা।

জানা গেছে,  মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মোঃ সাখাওয়াত হোসেন বেলালী, জালিয়াতি ও সরকারি নিয়োগ বিধি লংঘন করে জুনিয়র শিক্ষিকা (এবতেদায়ী) মোছাঃ মিনা খাতুন, (ইনডেক্স নং- N2১১১৯৬৪) কে এডহক কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেন। বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ম্যানেজিং কমিটি এন্ড গভর্নিং বডি প্রবিধানমালা-২০০৯ এর ৩৯ এর ২ ধারা অনুযায়ী, এডহক কমিটি থাকাকালীন মাদ্রাসার কোন নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। 

শিক্ষাবার্তা’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, জুনিয়র শিক্ষিকা (এবতেদায়ী) এর নিয়োগের পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২৭ আগস্ট ২০১৪ খ্রি.। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়ন দেওয়া হয় ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ খ্রি. এবং নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ খ্রি. একই দিনে চূড়ান্ত রেজুলেশন করা হয় এবং তা কমিটিতে চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয় ৩০ ডিসেম্বরে। ৩০ ডিসেম্বর নিয়োগ পত্র প্রদান এবং ০১ জানুয়ারি ২০১৫ খ্রি. প্রতিষ্ঠানটি যোগদান করেন মোছা. মিনা খাতুন। 

পাচুরিয়া দাখিল মাদরাসার কমিটি সংক্রান্ত কাগজপত্র ঘেটে দেখা যায়,  ২০ এপ্রিল ২০১২ খ্রি. থেকে ১৯ এপ্রিল ২০১৪ সাল পর্যন্ত মাদ্রাসাটির দুই বছর মেয়াদী রেগুলার কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ৩ মাস ২ দিন মাদ্রাসাটিতে কমিটি ছিল না (২০ এপ্রিল ২০১৪ থেকে ২১ জুলাই ২০১৪ খ্রি পর্যন্ত)। ২২ জুলাই ২০১৪ খ্রি. এডহক কমিটি গঠন হয়  যার মেয়াদ ২২ এপ্রিল ২০১৪ খ্রি থেকে ২১ জানুয়ারি ২০১৫ মোট ছয় মাস। এরপর নিয়মিত দুই বছর মেয়াদী কমিটি গঠন করা হয় ০৩ মে ২০১৫ খ্রি।  মাদ্রাসাটির নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় পত্রিকা প্রকাশের দিন অর্থ্যাৎ ২৭ আগস্ট ২০১৪ খ্রি থেকে নিয়োগ পরীক্ষা ও যোগদান প্রক্রিয়ার শেষ দিন অর্থ্যাৎ ০১ জানুয়ারি ২০১৫ খ্রি. পর্যন্ত। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটিতে এডহক কমিটি (মেয়াদ-২২ এপ্রিল ২০১৪ খ্রি. থেকে ২১ জানুয়ারি ২০১৫ খ্রি.) বিদ্যমান ছিল। 

পাবনা জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাচুরিয়া দাখিল মাদরাসার নিয়োগে ডিজি প্রতিনিধি চেয়ে আবেদন করা হলে ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়ন দেওয়া হয়  ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ খ্রি.। তৎকালীন পাবনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: হাফিজুল ইসলাম ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই প্রতিনিধি মনোনয়ন প্রদান করা হয়। ডিজি প্রতিনিধির মনোনয়নের আবেদনে মাদ্রাসাটিতে (এডহক কমিটি বিদ্যমান ছিল)  রেগুলার কমিটি আছে মর্মে লিখিত দেন সুপার সাখাওয়াত হোসেন বেলালী। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জালিয়াতি করে নিয়োগ দেওয়ার মুল হোতা সুপার সাখাওয়াত হোসেন বেলালী যে রেজুলেশন করেছেন সেই রেজুলেশনে স্বাক্ষর জাল করা এবং উক্ত সময়ে এডহক কমিটি থাকলেও জাল-জালিয়াতি করে যে রেগুলার কমিটি দেখিয়েছেন সেখানে দাখিল শাখার দুইজন শিক্ষক দেখানো হয়েছে। 

এলাকাবাসী জানায়, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রভাব ও ভয় দেখিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিয়োগ বাণিজ্য ও আর্থিক অনিয়মসহ সবকিছু করেছেন সুপার সাখাওয়াত হোসেন বেলালী। ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারেননি। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর এখন উনি ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে একই কাজ করে যাচ্ছেন।  তার এই অনিয়ন বন্ধে আমরা সুষ্ঠ বিচার দাবি করে। মাদ্রাসার শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই নিয়োগে সম্পূর্ণ জালিয়াতি করে দিয়েছেন সুপার। নিয়োগ পাওয়া শিক্ষিকা চাকরি করছেন। শুধু নিয়োগ নয় তার বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক জালিয়াতি রয়েছে। সুষ্ঠ তদন্ত করলে বিষয়টি বেরিয়ে আসবে। 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এডহক কমিটি থাকাকালীন সময়ে নিয়োগ পাওয়া জুনিয়র শিক্ষিকা মোছাঃ মিনা খাতুনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পাচুরিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার সাখাওয়াত হোসেন বেলালীকে বিষয়টি জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে তিনি শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, “যারা অভিযোগ দিয়েছে তাদের সাথে কথা বলেন, এডক কমিটি আবার নিয়োগ দিতে পারে। আমার কাছে সব কাগজ আছে, দরকার হলে এসে দেখে যান।”

এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. জাকির হোসাইন শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, “মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ম্যানেজিং কমিটি এন্ড গভর্নিং বডি প্রবিধানমালা-২০০৯ এর ৩৯ এর ২ ধারা অনুযায়ী, এডহক কমিটি থাকাকালীন মাদ্রাসার কোন নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে ঐ সময়ে বিশেষ কোন অর্ডার ছিল কি’না দেখতে হবে।  অভিযোগ পেলে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।”

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২১/০১/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.