এইমাত্র পাওয়া

ইএফটির নানা জটিলতার কারণে বেতন পাচ্ছেন না বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা

ঢাকাঃ ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটির নানা জটিলতার কারণে ডিসেম্বর মাসের বেতন উত্তোলন করতে পারছেন না মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের একটি বড় অংশ। আজ জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখ চলে গেলেও এখন পর্যন্ত বেতন উত্তোলন করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন বেতন না পাওয়া শিক্ষকরা। এতে তাদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় হলেও তা রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘এ্যানালগ’ পদ্ধতিতে বিতরণ হয়। এই অর্থ বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের পরে তোলতে হয়। এতে শিক্ষকদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিগত সময়ে ঈদ বোনাসের টাকা ঈদের পরে পাওয়ার ঘটনাও ঘঠেছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ক্ষেত্রে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মত মাসের শুরুতেই ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।

এই জটিলতা নিরসনে ইএফটির মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারই প্রেক্ষিতে গত অক্টোবর মাসের বেতন পাইলটিং হিসেবে প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর টাকা ইএফটিতে ছাড় হয়। পরবর্তীতে গত ১ জানুয়ারি মাসে প্রথম ধাপে এক লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক কর্মচারীর বেতন ইএফটির মাধ্যমে পাঠানো হয়। অবশিষ্টরা এখন পর্যন্ত বেতন পাচ্ছে না।

এতে বেতন না পাওয়া শিক্ষক কর্মচারীরা বিপাকে পড়েছেন। নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার ঘাগড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যায়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন বলেন, জানুয়ারী মাস প্রায় শেষে হয়ে যেতে থাকলেও এখন পর্যন্ত গত ডিসেম্বর মাসের বেতন পাইনি। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছে। দোকানীর পাওনা পরিশোধের তাগাদা শুনতে হচ্ছে, ব্যাংক ঋণের কিস্তি দিতে পারছিনা। এমন সমস্যায় পড়েছেন বেতন না পাওয়া সকল শিক্ষক কর্মচারীরা। তারা দাবী করছেন কোন তথ্যগত অসংগতির কারনে ইএফটিতে বেতন না দিতে পারলে আগের পদ্ধতিতে বেতন পরিশোধ করা হোক। পরে তথ্য সংশোধন সাপেক্ষে ইএফটিতে দেয়া যেতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পূর্বধলা উপজেলার ৩৯টি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫শতাধিক শিক্ষক কর্মচারী রয়েছে। তাদের অর্ধেকের কম সংখ্যক শিক্ষক কর্মচারীর ডিসেম্বর মাসের বেতন ইএফটিতে দেয়া হয়েছে। অবশিষ্টরা এখনো বেতন পায়নি।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি পূর্বধলা উপজেলা শাখার সভাপতি, আগিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুজ্জামান বলেন, ইএফটিতে বেতন উত্তোলনের জন্য চাহিত তথ্য অনুযায়ী উপজেলার সকল শিক্ষক কর্মচারীদের তথ্য পাঠানো হয়েছে। এতে কোন অসংগতি ধরা পড়লে আগের পদ্ধতিতে বেতন চালু রাখার দাবী জানান।

আগের পদ্ধতিতে বেতন দেয়া যায় কিনা এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংক, পূর্বধলা উপজেলার শাখার ব্যবস্থাপক এস.এম মুরাদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ইএফটিতে বেতন চালু হওয়ার পর ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন দেওয়ার কোন বরাদ্ধ আসেনি বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.আবু বকর সিদ্দিক জানান, শিক্ষকদের ইএফটিএর মাধ্যমে দ্রুত বেতন পরিশোধের জন্য ইএমআইএস সেল কাজ করছে। বাংকের এমপিও সীট, এনআইডি ও অন্যান্য তথ্যে কিছু অসংগতির কারনে কারও কারও বেতন পেতে একটু বিলম্বিত হচ্ছে। তবে শিক্ষকদের বেতন সংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে দ্রুত বেতন দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রসংঙ্গত বিভিন্ন সংবাদে প্রকাশিত সূত্র থেকে জানা গেছে, বেসরকারি স্কুল-কলেজের ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ২ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য যাচাই করছে মাউশি। ২৭ হাজার শিক-কর্মচারীর তথ্য পায়নি সংস্থাটি। অবশিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য পেলেও তাতে ত্রুটি থাকায় সেগুলো সংশোধন করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৮/০১/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.