এইমাত্র পাওয়া

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে, চাঙা হবে অর্থনীতি: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

ঢাকাঃ প্রবাসী আয় থেকে গ্রামে অর্থ সঞ্চালন হচ্ছে। এতে আর্থিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। এটি অর্থনীতি চাঙা করতে সহায়ক হবে। অর্থনীতি চাঙা হওয়ার অন্য কারণের মধ্যে রয়েছে রাজনীতি। সারা দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। ফলে অর্থপ্রবাহ বাড়ছে। গতি এসেছে রপ্তানি আয়েও। এতে আগামীতে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে আশা করা যায়।

অর্থনীতি নিয়ে এমন পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এ আশার কথা শোনান তিনি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৈঠকে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এ অর্থের মধ্যে সরকার যোগান দেবে তিন হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণ ২০৬ কোটি টাকা। বাকি ৪০৯ কোটি টাকা যোগান দেবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট সচিবরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতির বড় ক্ষতি হলো জনমিতির সুবিধার পরিপূর্ণ ব্যবহার করতে না পারা। কর্মক্ষম যুবশক্তির আধিক্যের এ সুবিধা হয়তো আর ১০ থেকে ১৫ বছর পাওয়া যাবে। দীর্ঘদিন যুব সমাজের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ নষ্ট হয়েছে। তবে ভরসার জায়গা হচ্ছে- সুশাসিত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় উত্তরণ হলে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সেটাই একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। সংস্কার কিংবা নির্বাচন যা কিছুই বলা হোক না কেন মূল কথা হচ্ছে- শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

জিডিপি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, গত প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে। তবে সংকোচন হয়নি। জুলাই মাসে রাজনৈতিক কারণে শিল্প উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল না। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, কিছুটা কমলেও মূল্যস্ফীতি এখনও বেশিই। মূল্যস্ফীতির চাপ নিম্ন আয়ের মানুষের গায়ে বেশি লাগে। কারণ তাদের আয়ের বেশিরভাগ অর্থ ব্যয় হয় খাদ্যপণ্য কেনার পেছনে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে তাদের মজুরি বেড়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। প্রকৃত মজুরি কম হওয়ায় পরিস্থিতি তাদের জন্য কষ্টকর।

তিনি জানান, মজুরি, মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির হিসাব করার দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কোনো তথ্য তিনি পর্যালোচনা করেন না। যা আসে অনুমোদন দিয়ে দেন। বিবিএস আইন সংশোধনের করতে যাচ্ছে সরকার। এতে মূল্যস্ফীতি, জিডিপি কিংবা কর্মসংস্থান সব তথ্যই বিবিএস নিজেই প্রকাশ করবে।

নতুন পাঠ্যপুস্তক বিতরণ বিষয়ে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সময়মত শিক্ষার্থীদের হাতে পৌছানো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে হতাশাও রয়েছে। অথচ ২০১০ সালের পর কোনো বছরই মার্চের আগে সব পাঠ্যপুস্তক বিতরণ শেষ করা সম্ভব হয়নি। কোনো কোনো বছর জুলাই পর্যন্ত লেগেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে গত ৫০ বছর ধরে বিতর্ক ছিল। কার কী ভূমিকা ছিল তা এবার ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পাঠ্যপুস্তকে রয়েছে। এ নিয়ে প্রাণবন্ত বিতর্ক আশা করেছিলেন তিনি। অথচ সে রকম কোনো বিতর্ক দেখা যায়নি। পাঠ্যপুস্তকে মুদ্রণজনিত ভুল সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।

অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পর এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নতুন করে একটার পর একটা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় ট্রাস্টের মাধ্যমে। এখানে সরকারের করার কিছু নেই। তবে ট্রাস্টের সবাইকে যদি বিদায় করা হয়, তাহলে থাকলো শুধু ছাত্ররা-এটা তো একটা বড় সংকট। এভাবে চলতে থাকলে এ সংকট কোথায় গিয়ে থামে বলা যায় না।

উপদেষ্টা বলেন, গ্যাস অনুসন্ধান অব্যাহত রাখা হবে। বাপেক্সকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা সম্ভব না হলে বিদেশিদের সহায়তা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, কেন জানি বিগত দিনে বাপেক্সকে শক্তিশালী না করে এলপিজি আমদানি করা হয়। অথচ ভোলা থেকে কূপ খননের মাধ্যমে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ।

তিনি বলেন, পরিবেশের কথা মাথায় রেখে নতুন করে জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়ন করতে হবে। এ বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট চিত্র তৈরি করা দরকার। শতবর্ষী ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় এ বিষয়গুলো খুবে বেশি সংযুক্ত নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে সুবিধা পেতে হলে এ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ দেখাতে হবে। এ বিষয়ে একনেকে আলোচনা হয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, একনেকে প্রকল্প এখন কম। কারণ সংসদ সদস্য না থাকায় স্থানীয় সরকার পর্যায় থেকে সে রকম কাজ আসছে না। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নতুন প্রকল্প নিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন থেকেও এ ধরনের প্রকল্প উৎসাহিত করা হচ্ছে।

আজ একনেকে অনুমোদন হওয়া প্রকল্পের একটি হচ্ছে স্টাবলিশমেন্ট অব গ্লোবাল ম্যারিটাইম ডিসট্রেস অ্যন্ড সেইফটি সিস্টেম (ইজিআইএমএনএস) প্রকল্প। নৌ পরিবহন মন্ত্রণায়ের এ প্রকল্পটি চতুর্থবারের মত সংশোধন করা হলো। চতুর্থবারের মত সংশোধন করা আরেকটি প্রকল্প আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ। এ ছাড়া মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রথম সংশোধন অনুমোদন হওয়া আরেকটি প্রকল্প হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ও বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ।

অনুমোদন হওয়া অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ ও পুনর্বাসন (দ্বিতীয় সংশোধনী), চট্টগ্রাম কর ভবন নির্মাণ ও মোংলা বন্দরে পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং, ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ (২য় পর্যায়), সিলেট বিভাগে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, ডুপিটোলা–১ ও কৈলাশটিলা কুপ খনন এবং বুদ্ধিস্ট মোনেস্টারি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৮/০১/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.