এইমাত্র পাওয়া

গতি বাড়ছে বিসিএসে

ঢাকা: ছাত্র আন্দোলনে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকার ছাত্রদের চাওয়া-পাওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

এজন্য সরকারি চাকরিতেও গতি বাড়ানো হচ্ছে। ৪৭তম বিসিএসের আবেদন ফি’ও কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে এ বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় সরকার। বিগত রাজনৈতিক সরকারের সময়ে বিসিএস ছাড়াও সরকারি অন্যান্য চাকরিতে জট ছিল। শূন্য পদে নিয়োগের দীর্ঘ সূত্রিতায় সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

গত ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর প্রশাসন ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। আগস্টে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা এবং ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

গত ৯ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেমকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই দিন আরও চার সদস্য নিয়োগ পান। ৩১ অক্টোবর আরও পাঁচজন সদস্য নিয়োগ দেয় সরকার। কমিশন মফথ নেওয়ার পর সভা করে বিসিএস পরীক্ষাগুলো এগিয়ে নেওয়ার রোডম্যাপ ঘোষণা করে।

পিএসসির কর্মকর্তারা বলছেন, চরুণ বিশেষত ছাত্রদের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে, সেই সরকার ছাত্রদের চাকরির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।

৫ বিসিএসে ১৮ হাজার প্রার্থী নিয়োগ

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং সরকারি কর্ম কমিশন জানায়, ৪৩তম থেকে ৪৭তম বিসিএসে মোট ১৮ হাজার ১৫৪ জন প্রার্থী নিয়োগ দেওয়া হবে। ৪৩তম বিসিএসে ক্যাডার পদে ২ হাজার ৬৪ জন, নন-ক্যাডার পদে ৬৪২ জনসহ মোট ২ হাজার ৭০৬ জন, ৪৪তম বিসিএসে ক্যাডার পদে ১ হাজার ৭১০ জন ও নন-ক্যাডার পদে ১ হাজার ৭৯১ জনসহ মোট ৩ হাজার ৫০১ জন, ৪৫তম বিসিএসে ক্যাডার পদে ২ হাজার ৩০৯ জন ও নন-ক্যাডার পদে ১ হাজার ৫০৭ জনসহ মোট ৩ হাজার ৮৭৯ জন, ৪৬তম বিসিএসে ক্যাডার পদে ৩ হাজার ১৪০ জন ও নন-ক্যাডার পদে ১ হাজার ১১১ জন এবং ৪৭তম বিসিএসে ক্যাডার পদে ৩ হাজার ৪৮৭ জন ও নন-ক্যাডার পদে ৩২৫ জনসহ মোট ৩ হাজার ৮১২ জন নিয়োগ দেওয়া হবে।

কোন বিসিএসের কী অবস্থা

৪৩তম বিসিএসে ২ হাজার ৬৪ জনের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি যোগদানের জন্য নির্ধারিত আছে। গেজেট প্রকাশের পর এ নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হওয়ায় ক্লিন ইমেজের প্রার্থী নিয়োগের স্বার্থে গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআই ও ডিজিএফআই এর মাধ্যমে অধিকতর যাচাই-বাছাই চলমান আছে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

গত ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে বিসিএস ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলমান ছিল। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল ১১ হাজার ৭৩২ জন। এরধ্যে ৩ হাজার ৯৩০ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে গত ২৫ আগস্ট এই মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। সম্প্রতি নতুন কমিশন গঠনের পর অধিকতর স্বচ্ছতার স্বার্থে আগের নেওয়া ৩ হাজার ৯৩০ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন এ বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব প্রার্থীর অর্থাৎ ১১ হাজার ৭৩২ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নতুন করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১২ হাজার ৭৮৯ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিল। লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র প্রথম পরীক্ষক কর্তৃক মূল্যায়ন শেষে দ্বিতীয় পরীক্ষক কর্তৃক মূল্যায়নের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে ছিল। সম্প্রতি নতুন কমিশন গঠনের পর লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা বজায় রাখার স্বার্থে এ লিখিত পরীক্ষার সব উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষককে দিয়ে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল গত ৯ মে প্রকাশিত হয়। এ পরীক্ষায় ১০ হাজার ৬৩৮ জন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে নির্বাচিত প্রার্থীদের সঙ্গে সমসংখ্যক অর্থাৎ ১০ হাজার ৬৩৮ জন যোগ করে সর্বমোট ২১ হাজার ২৭৬জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচনা করে পুনরায় ফলাফল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২৭ নভেম্বর প্রকাশিত ফলে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২১ হাজার ৩৯৭ প্রার্থী।

বিসিএস ৪৭তম দুই বছরের মধ্যে

২৮ নভেম্বর বিকালে ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ক্যাডার পদে নিয়োগ পাবেন ৩ হাজার ৪৮৭ জন। আবেদনপত্র পূরণ ও ফি জমাদান শুরু ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টায়। আবেদনপত্র জমাদানের শেষ তারিখ ও সময় ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট।

কোটা পদ্ধতি বাতিলের পাশাপাশি চাকরির আবেদন ফি নিয়েও আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পিএসসি জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতিশ্রুতির সাথে সঙ্গতি রেখে ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার ফি ৭০০ টাকা থেকে কমিয়ে নতুন হার পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশন দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

বিসিএসের জট খুলতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের এসএসবি ও পিএসসি পুনর্গঠন হয়েছে। পিএসসির সবাইকে ডেকে নিয়ে এসেছিলাম। আমরা বলেছি দুই বছর লাগাবেন না। তাদের বলা হয়েছে এটা রুটিন ডিউটি। এটা যেন এবার দুই বছর না লাগে। স্বল্প সময়ে যেন তারা যোগদান করতে পারে।

জনপ্রশাসন সচিব বলেন, দীর্ঘ দিন নানা কারণে নিয়োগ হয়নি। সেই জায়গাটায় যেন শূন্য না হয় সেজন্য এ নিয়োগের উদ্যোগ। পিএসসি নিয়ে অনেক কথা ছিল, পিএসসি সরকারের একটা বডি। যে আশা-আকাঙ্ক্ষার কারণে আজকে এ সরকার গঠিত হয়েছে, সাড়ে ৫ লাখ পদ শূন্য আছে। তারমধ্যে বিসিএসে ১৮ হাজার পদে নিয়োগ করা হলে কারো আর প্রশ্ন থাকার কথা না। তরুণদের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে।

বিসিএসে কোটা পদ্ধতির প্রয়োগ নিয়ে তিনি বলেন, যে আন্দোলনের (কোটা আন্দোলন) ভিত্তিতে পরে এক দফায় (সরকারের পতন) পরিণত হলো। ৭ শতাংশ অন্যান্য এবং ৯৩ শতাংশ মেধা কোটা প্রয়োগ হবে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/৩০/১১/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.