এইমাত্র পাওয়া

শিক্ষকদের দলাদলিতে শিক্ষাব্যবস্থার বারোটা

নিজস্ব প্রতিবেদক।। প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দলাদলি আর গুটিকয়েক সহকারী শিক্ষকের ক্ষমতার দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে শিক্ষার পরিবেশ।

প্রাথমিক শিক্ষার এমন বেহাল দশা লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায়। সহকারী শিক্ষকদের স্কুল ফাঁকি, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির সিন্ডিকেট তৈরি, শিক্ষার্থী ও প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ব্যবহার, তুচ্ছ কথায় অসদাচরণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে এই সহকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের হোতা খোদ সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তারেক হোসেন শিমুল। তার নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছে কুচক্রি এই সিন্ডিকেট। তাদের দৌরাত্মে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। শিমুলের ক্ষমতার দাপট আর দাম্ভিকতায় অসহায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।

সম্প্রতি উপজেলা শিক্ষা কর্মকতা শিক্ষা ভবনে তার অফিস কক্ষে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সভা করেন জেলা প্রশাসকের আগমন উপলক্ষে। অন্যদিকে একই দিন একই সময়ে স্কুল চলাকালে শিক্ষা ভবনের নিচ তলায় সহকারী শিক্ষকদের নিয়ে স্মরণিকা প্রকাশের সভা করেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শিমুল। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শিমুলের বিরুদ্ধে রয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি সৃষ্টি এবং স্কুল ভিজিটের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ।

কোনো ধরনের টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়া মধ্য চর মেহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনশেড পুরোনো ঘর ও পরিত্যক্ত টেবিলচেয়ার লোহা-লক্করসহ প্রায় আশি মণ মালামাল তার হুকুমে বিক্রি করে লুফে নেন পুরো টাকা। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, শিষ্টাচার লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রূপাঞ্জলী কর বলেন, অনুমতি না নিয়ে স্কুল চলাকালে সভা করাটা তাদের ঠিক হয়নি। প্রকাশনার বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে আমাকে অবগত করেছেন। কারও বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ উপজেলায় মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার প্রধান অন্তরায় শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বেমালুম অস্বীকার করে বসেন মধ্য আলেকজান্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু সায়িদ ও উত্তর চর নেয়ামত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোমিন উল্লাহ। এ প্রসঙ্গে তাদের ভাষ্য, আমাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ভিত্তিহীন।

সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তারেক হোসেন শিমুলও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি দাবি করেন, আমি আমার রুটিন দায়িত্ব পালন করছি। কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত নই। টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়া মধ্য চর মেহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনশেড পুরোনো ঘর ও পরিত্যক্ত টেবিলচেয়ার লোহা-লক্করসহ প্রায় আশি মণ মালামাল বিক্রির টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মধ্য চর মেহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মালামাল বিক্রি বিধিসম্মতভাবেই হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রামগতি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৯৬টি। প্রধান শিক্ষক রয়েছে ৫৬টি বিদ্যালয়ে। ৪০টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষকরা।

উপজেলার প্রাথমিকে মোট সহকারী শিক্ষক রয়েছেন ৫৪৯ জন। এদের মধ্যে কয়েকজন রয়েছেন ভয়াবহ ফাঁকিবাজ। তারা নানা কৌশলে স্কুল ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে পড়ে থাকেন। জড়িয়েছেন স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গেও। এ দুষ্ট চক্রে নাটের গুরু হিসেবে রয়েছে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত শিক্ষা কর্মকর্তা শিমুল আর তার দোসর হিসেবে রয়েছে কতিপয় দুর্নীতিবাজ সহকারী শিক্ষক।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মধ্য আলেকজান্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু সায়িদ, উত্তর চর নেয়ামত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোমিন উল্লাহ, চর সেভেজ সরকারি প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক লিংকন চন্দ্র দাস। লিংকন কখনোই নদী পাড়ি দিয়ে স্কুলে যান না।

বিদ্যালয়ের দাফতরিক সব কাজ প্রধান শিক্ষকরা করলেও বর্তমানে সহকারী শিক্ষকরা নোটিসের জবাব, শিক্ষক বদলিসহ নানা তদবিরে ব্যস্ত থাকেন উপজেলা পরিষদের শিক্ষা অফিসে বা অফিস পাড়ায়। তারা স্কুল ফাঁকি দিয়ে ঘুরঘুর করেন শিক্ষা অফিসে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সহকারী শিক্ষক আবু সায়িদ এবং মোমিন উল্লাহ মেতে উঠেছেন চাঁদাবাজির নতুন কৌশলে। তারা সহকারী শিক্ষক হয়েও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার নাম দিয়ে একটি স্মরণিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা প্রচার চলে সামাজিকমাধ্যমে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার, প্রধান শিক্ষক কিংবা বেশিরভাগ সহকারী শিক্ষকদের অন্ধকারে রেখে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তারেক হোসেন শিমুলের প্ররোচনায় তারা খামখেয়ালিভাবে এ প্রকাশনার সিদ্ধান্ত নেন। কী উপলক্ষে, বাজেট কত, অর্থায়ন হবে কীভাবে, খসড়া কপি, সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা দাঁড় না করিয়ে অগোছালো মনগড়াভাবে চলানো হচ্ছে স্মরণিকা প্রকাশের কার্যক্রম। দাতাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে শুধু আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় এমন পদক্ষেপ বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন সংক্ষুব্ধ কিছু শিক্ষক।

এ অসাধু চক্রটি প্রকাশনার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আদেশ এবং হুমকিমূলক শব্দ ব্যবহার করে। এতে করে সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তারেক হোসেন শিমুলসহ সায়িদ ও মোমিনরা এ সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অন্ধকারে রেখে। প্রধান শিক্ষকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলেও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শিমুল তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন বলে জানা যায়।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এ/২৮/১১/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.