এইমাত্র পাওয়া

স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল শিক্ষায় কোর্স আউট প্রথা বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক।। স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল শিক্ষায় কোর্স আউট প্রথা অবশেষে বাতিল করা হয়েছে। এতে করে পরীক্ষার্থীদের সাথে পরীক্ষকের ব্যক্তিগত রেষারেষি, পছন্দ বা অপছন্দ এবং ভালো লাগা না লাগার বিতর্কের অবসান হলো। গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ডা: মো: জিল্লুর রহমান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে মেডিক্যালের উচ্চ শিক্ষায় (বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হওয়ার কোর্স) কোর্স আউট প্রথা বাতিলের ঘোষণাটি এলো।

ওই অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ‘গত ৭২তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে কোর্স আউট প্রথা বাতিল করা হয়েছে। সব যোগ্য প্রার্থী জানুয়ারি ২০২৫ সেশনে জরিমানা ব্যতীত পরীক্ষার নির্ধারিত ফি প্রদান করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।’

উল্লেখ্য স্নাতকোত্তর শিক্ষায় এমডি ও এমএম কোর্স শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ই তার স্নাতকোত্তর পরীক্ষার্থীসহ অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে থাকে এবং সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে।

এর আগে দীর্ঘদিন ধরে স্নাতকোত্তর কোর্সের ডাক্তাররা কোর্স আউট প্রথা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কারণ এমনিতেই বিশেষজ্ঞ তৈরির এই পরীক্ষায় খুব কম ডাক্তার পাস করেন। কিন্তু স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এবং পাস করেছেন এমন অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন, এই পরীক্ষায় পরীক্ষকরা খুব কম পরীক্ষার্থী পাস করান। বরং বলা চলে তারা পাস করাতে চান না।

যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পাস করানো হয়নি অতীতে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে কোর্স আউট প্রথা নেই। আমাদের দেশে এই প্রথা রেখে অনেক যোগ্য ডাক্তারকে বিশেষজ্ঞ হতে, শিক্ষক হতে বাধা দেয়া হয়েছে বলে চিকিৎসকরা অভিযোগ করেছেন।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পর এমডি ও এমএস স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় কোর্স আউট প্রথা বাতিলের আন্দোলন শুরু করেন ডাক্তাররা। ৫ আগস্ট আন্দোলনের পর বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর বিদেশের উদাহরণকে সামনে রেখে এবং ডাক্তারদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল শিক্ষায় কোর্স আউট প্রথা বাতিলের পক্ষে মতামত প্রদান করেন।

কোর্স আউট প্রথা থাকায় সবচেয়ে বেশি বঞ্চনার শিকার ডাক্তারদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: মো: আতিয়ার রহমান অন্যতম। ১৯৯৯ সালে তিনি ডিসিএইচ (শিশু) নামক একটি উচ্চতর (ডিপ্লোমা) ডিগ্রি অর্জন করে ফেলেন।

এই অজুহাতে ২০০১ সালে আওয়ামী আমলে এমডি কোর্সে চান্স পাওয়ার পরও তাকে কোর্সে যোগদানের অনুমতি দেয়া হয়নি। যোগদান করতে না দেয়ার কারণ হিসেবে একটি হাস্যকর যুক্তি দেখানো হয়েছে। তা হলো, ‘তিনি ইতোমধ্যে একটি উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।’ এ কারণে তাকে কোর্সে নেয়া হবে না।

পরবর্তীতে ২০০২ সালে আবার পরীক্ষা দিয়ে এমডি (শিশু) কোর্সে ভর্তির সুযোগ পেয়ে পার্ট-১ পরীক্ষার ৩ বিষয়ের মধ্যে ২ বিষয়ে পাস করেন কিন্তু অন্য একটি বিষয়ে ৭ বার অনুত্তীর্ণ দেখানো হয়।

পার্ট-১ পরীক্ষার এক বিষয়ে ৭ বার অনুত্তীর্ণ হলে পরে তার বিভাগের চেয়ারম্যান এমডি কোর্সের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে বিভাগীয় চেয়ারম্যানকে এমডি কোর্সের সংশ্লিষ্ট ওই পরীক্ষক বলেন, ‘এই লোক বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতা, বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) নেতা এবং বিজি প্র্যাকটিশনার। সে কারণে তাকে পাস করানো যাবে না’ বলে পরিষ্কার বলে দেন। কিন্তু তখন ডা: আতিয়ার রহমান একই এমডি কোর্সের পার্ট-২ পাস করে ফেলেন। তা সত্ত্বেও তাকে শেষ পর্যন্ত এমডি কোর্স থেকে আউট করে দেয়া হয়।

ডা: মো: আতিয়ার রহমান বলেন, এমডি কোর্স সম্পন্ন করতে বাধা দেয়ায় আমি ২০০৬ সালে ফেলো কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন (এফসিপিএস) পার্ট-১ পাস করি এবং পার্ট-২ পরীক্ষার জন্য ২০২২ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ বার পরীক্ষা দেই। কয়েকবার লিখিত পরীক্ষায় পার্ট-২ পাস করলেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে ভিন্ন মতাদর্শী বলে এবং পেশাজীবী অঙ্গনে নেতৃত্ব দেয়ার অজুহাতে।

গতকাল তিনি বলেন, স্নাতকোত্তর শিক্ষায় কোর্স আউট প্রথা বাতিল হওয়ায় বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরোজা আরো অনেকের জন্য খুলে যাবে। আমার মতো বঞ্চনার শিকার হতে হবে না ডাক্তারদের। তিনি কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিয়েছেন।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এ/১৯/১১/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.