সাত কলেজ নিয়ে হচ্ছে না নতুন বিশ্ববিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক।। ২০১৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানীর বড় সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়েছিল। আট বছর পরে এসে এখন এই সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা বলছেন, সরকারের ওই সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত। ফলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করা হয়েছিল, তা আট বছরেও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বিপরীতে এসব কলেজে শিক্ষার পরিবেশে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শিক্ষার মানের উন্নতির পরিবর্তে ঢাবি প্রশাসনের বৈষম্যমূলক বিভিন্ন নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার যথাযথ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই বৈষম্য আর বঞ্চনা থেকেই শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছেন। এখন তাদের দাবি, রাজধানীর এই সাতটি কলেজ নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত বা স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ দাবি পূরণে গত সোমবার সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। এই ২৪ ঘণ্টা গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয়। আজ নতুন কর্মসূচি দেবেন তারা।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শিগগির এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সভা ডাকা হবে। তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হবে। রাজধানী ঢাকায় মোট ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ মুহূর্তে নতুন করে আর কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা নেই সরকারের।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য ও কাজ নিয়ে তাদের ‘প্রায়োরিটি সেট’ করেছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সরকারের উচ্চ মহল থেকে বলা হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। এখন আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।

আট বছর আগে যে সাতটি কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হয়, সেগুলো হলো– ঢাকা কলেজ, ইডেন সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ এবং মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ।

শিক্ষার্থীদের দাবি কী: সাত কলেজ নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে গত সোমবার রাজধানীর নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলে। বিকেলে সায়েন্সল্যাব মোড়ে কর্মসূচি থেকে তিন দফা দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে সেদিনের মতো কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো সাত কলেজ নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার কমিটি গঠন করতে হবে; সংস্কার কমিটি অনধিক ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা প্রণয়ন করবে এবং সংস্কার কমিটি বর্তমান কাঠামো সচল রাখতে ঢাবি প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে, যাতে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সেশন জটিলতার কোনো ধরনের পরিবেশ তৈরি না হয়।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুর রহমান মঙ্গলবার সমকালকে বলেন, আমরা চরম বৈষম্যের শিকার। দীর্ঘদিনের অধিভুক্তির পরও ঢাবির অধীনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার মানের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সাত কলেজের অধিভুক্তির বিপক্ষে। 

যা বলছেন ঢাবি উপাচার্য: শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান সমকালকে বলেন, সাত কলেজ নিয়ে আমাদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা থাকলেও সময় এবং সম্পদের যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ কারণে আমি বলব, জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ সাতটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের আরও গভীরতর পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ঢাবির সঙ্গে এসব কলেজের সম্পর্ক উন্নয়নে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল বা বহাল একদিকে যেমন জটিল, অন্যদিকে এটা একটা বড় বিষয়। এ নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার আছে। আমরা চাই, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা যেন কোনো ধরনের ভোগান্তি বা ঝামেলার শিকার না হয়। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সব ধরনের অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এখানে সরকার, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে কোনো ধরনের আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য: মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করাই একমাত্র সমাধান নয়। শিক্ষার্থীরা যেসব সমস্যার কথা বলছে, সেগুলো আগে সমাধান করা জরুরি। এ জন্য আমরা দু’দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সভা করব। তিনি বলেন, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। নতুন আইন প্রণয়ন, জমি অধিগ্রহণ, প্রকল্প তৈরি ও একনেকে পাস; সব মিলিয়ে ৩-৪ বছরের ব্যাপার। এটা করা হলেও বর্তমান শিক্ষার্থীরা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে না। তাই এই শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সমাধান করা আগে দরকার।

শিক্ষাবার্তা ডট কম /এ/২৩/১০/২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.