ঢাকাঃ রাজধানীর বস্তিগুলোতে শিক্ষার প্রধান অন্তরায় মাদকের ভয়াবহতা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বললে এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন তারা। সানরাইজ স্কুল, মায়ের দোয়া স্কুল, টিএনটি উচ্চবিদ্যালয়, পল্লীবন্ধু এরশাদ বিদ্যালয়, পাঠশালা, জাগো ফাউন্ডেশন স্কুলসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বস্তিতে বসবাসরত শিশুদের বিদ্যাপীঠ। কড়াইল বস্তিতে জাগো ফাউন্ডেশন স্কুলের শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বস্তিতে শিশু শিক্ষার প্রধান প্রতিবন্ধকতা মাদক। অল্প কষ্টে অধিক মুনাফার আশায় পরিবার থেকেই এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে শিশুরা। সহজে কেউ শিশুদের সন্দেহ করে না। ফলে তাদের ব্যবহার করে চলছে মাদক ব্যবসা।
তিনি আরও জানান, শিশু শিক্ষার্থীরা হয় মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে, নয় তো নিজেই গ্রহণ করছে মাদক। ফলে এরা পড়াশোনা সামনে এগিয়ে নিতে পারছে না। ঝরে পড়ছে অকালেই। এ ব্যাপারে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সারোয়ার বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। গত দুই মাসে কড়াইল বস্তিতেই প্রায় ১০টির মতো মামলা হয়েছে। তিনি বলেন- পুলিশের একার পক্ষে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। এ জন্য সমাজের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। সরেজমিন দেখা যায়, কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকার অলিতেগলিতে হাত বাড়ালেই মিলছে ‘পোঁটলা’। এসব পোঁটলায় রয়েছে গাঁজাসহ হিরোইন, ইয়াবার মতো মরণঘাতী মাদক। অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীর বিষফোঁড়া খ্যাত ‘কড়াইল বস্তি’ পরিণত হয়েছে মাদকের নিরাপদ আখড়ায়। রায়েরবাজার থেকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ পর্যন্ত বস্তিগুলোতেও দেখা মেলে একই চিত্র। টিটিপাড়া রেললাইনের পাশে রেলগাড়িতে আসা মাদক ফেলে যাওয়া হয়। নির্দিষ্ট লোক নির্দিষ্ট জায়গা থেকে তা নিয়ে যায়।
মগবাজার, হাতিরঝিল, মধুবাগের আশপাশের বস্তিগুলোরও একই অবস্থা। বিভিন্ন চায়ের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে মাদক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রিকশা গ্যারেজগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে মাদক ব্যবসা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নুরুল হক এখন কড়াইল বস্তিতে মাদক ব্যবসার হর্তাকর্তা। আওয়ামী লীগের পতনের পরপরই তার উত্থান। কড়াইল বস্তিজুড়ে তার একচ্ছত্র দাপট। তার ঘনিষ্ঠরা ইয়াবার ডিলার। তারা গুলশান, বনানী, বাড্ডা, ভাটারাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবা সরবরাহ করেন। বস্তির বউবাজার এলাকায় সন্ধ্যা নামতেই বসে মাদকের হাট। বস্তিগুলো থেকে মাদকের পাইকারি চালান যাচ্ছে রাজধানীর সব জায়গায়। আমেনা বেগম নামে এক নারী চা বিক্রেতা বলেন, একজনের পাল্লায় পইড়্যা আরেকজন নষ্ট হইতাছে। আমাদের সন্তানদের বাঁচান। সবাই চাই সন্তান পড়াশোনা করে বড় হবে, মাদক ব্যবসায়ী নয়।
একাধিক বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- তারা যে আয় করেন, তার প্রায় অর্ধেক ব্যয় হয় ঘর ভাড়ায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়ার কারণে একজনের আয়ে সংসার চলে না। স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই আয় করতে হয়। এ অবস্থায় শিশুরা বিপথে চলে যাচ্ছে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১০/১০/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.