নীলফামারী: নানা অনিয়ম, দূর্নীতি, বৈষম্য ও অনৈতিকতার অভিযোগে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে ৪ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে হাজার হাজার যাত্রীদের। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কের কামারপুকুর বাজার এলাকায়। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাসে অবরোধ মুক্ত হয় মহাসড়ক।
অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরের দিন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে সরিয়ে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসেন সাবেক প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন। এরপর থেকে বিগত সময়ে নিয়োগকৃত খন্ডকালীন ৫ জন শিক্ষককে বাদ দেওয়ার জন্য পায়তারা শুরু করেন তিনি। তাছাড়া নানা উন্নয়ন কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাদা কাগজে গণহারে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে অনেক শিক্ষার্থী না বুঝে স্বাক্ষর দিলেও অধিকাংশরা অসম্মতি জানালে প্রধান শিক্ষক ও তার অনুগত কয়েকজন সহকারী শিক্ষক চাপ দিতে থাকে।
এর ফলে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয় এবং ওই প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবি ওঠে। কারণ ইতোপূর্বে এধরণের স্বেচ্ছাচারী কর্মকান্ড ও নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অপসারিত হন এবং এ বিষয়ে মামলায় জড়িয়ে দীর্ঘদিন থেকে স্কুলে অবাঞ্চিত ছিলেন তিনি। প্রায় ১৩ বছর যাবত তিনি স্কুলে আসেননি এবং ক্লাস নেননি। বরং দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে অপসারণের ফন্দি এটে চলেছেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে তিনি আবার প্রধান শিক্ষকের পদে বসেছেন। আর এরপরই শুরু করেন আগের মতই দুরভিসন্ধীমূলক কার্যক্রম।
নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সোহেল চৌধুরী ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিশু বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ সকালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও ১১টার দিকেই স্কুল ছুটি দিয়ে প্রধান শিক্ষক পালিয়ে গেছেন। যে কারণে আমরা সড়ক অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকেই স্কুলে নানা অনিয়ম দূর্নীতি ও লুটপাটের রাজত্ব চলছে। এ থেকে উত্তরণ প্রয়োজন।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সভাপতি ও বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এই প্রতিষ্ঠানে সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ারকে জোর পূর্বক প্রধান শিক্ষক পদে বসিয়ে রেখে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি করেছেন। কিন্তু বর্তমানে ইউএনও সভাপতির দায়িত্বে থাকাবস্থায় বিতর্কিত ব্যক্তিকে কিভাবে প্রধান শিক্ষকের পদে বসানো হলো? আর তিনি বসেই কেন স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছেন এবং শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজনের সৃষ্টি করে ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছেন? তারা এব্যাপারে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, জয়নাল আবেদীনের পক্ষে প্রধান শিক্ষক পদে হাইকোর্ট কর্তৃক রায় থাকায় তাকে সে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে কেন তিনি তার পদে আসীন হতে পারেননি সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। তবে সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শের ভিত্তিতেই তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। আমার কাছে তার বিরুদ্ধে কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি। আসলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করার বিষয়টি ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে তার মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৭/১০/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.