নিজস্ব প্রতিবেদকঃ স্বৈরচারী আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনার সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। আত্মগোপনে চলে গেছেন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের সব নেতা, এমপি ও মন্ত্রীরা তবে দল ও সরকারের প্রভাব না থাকলেও প্রভাব যেন আরও বেড়েছে শরীয়পুরের দুই আওয়ামী লীগ নেতার। দম্ভ করেই সরকারি রাস্তায় দোকান নির্মাণ করে তা দখল করে রেখেছেন তারা।
ঐ দুই আওয়ামী লীগ নেতা হলেন, শরীয়পুর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক কাওছার আহমেদ তকী হাওলাদার ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা রাসেল সরদার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সখীপুর থানার চরচান্দা খাস মহল বাজারে সরকারি রাস্তা দখল করে রাস্তার উপয় পাশেই দোকান নির্মাণ করে তা ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করছেন। সখীপুরে আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালীন তাদের অত্যাচার ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তাদের অত্যাচারের ভয়ে কথা বলা তো দূরের কথা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করেনি কেউ। তবে পতিত সরকার দেশ ছেড়ে পালালেও তাদের দখল চাঁদাবাজি থেকে এখনও রেহাই পায়নি এলাকাবাসী।
সরকারী নথি ও বিআরএস খতিয়ান অনুযায়ী, বিআরএস খতিয়ানের ৮১৭৬ নং দাগটি সরকারী রাস্তা হিসেবে নথিভুক্ত। আওয়ামী লীগ নেতা তকী হাওলাদার ও রাসেল সরদার আওয়ামীলীগের প্রভাব কাজে লাগিয়ে রাস্তার উভয় পাশে দুটি দোকান ঘর নির্মাণ করেছেন যার একটির নাম সরদার ফার্মেসী। যার কারণে বাজারে ব্যবসায়িক ক্ষতি ও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পাশে রণজিত নামে একটি হিন্দু পরিবারের বসতি রয়েছে। তিনিও সরকারি খাশ জমি দখলে রেখেছেন। তাকে কেউ কিছু বললে তিনি তাকে সংখ্যা লঘু নির্যাতনের ভয় দেখান। এলাকাবাসী ও বাজার ব্যবসায়ীদের দাবী অবৈধ দোকান দুটি উচ্ছেদ করে রাস্তাটি অবমুক্ত করা হলে বাজারের আয়তন বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষ রাস্তা দিয়ে নির্বিগ্নে চলাচল করতে পারবে।
বিষয়টির সুরাহা চেয়ে জনস্বার্থে ঢাকাস্থ এক সিনিয়র সাংবাদিক ও সখিপুর এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে। তবে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার দশ দিন অতিবাহিত হলেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়া ক্ষোভ জানান তিনি।
লিখিত অভিযোগে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনির হোসেন উল্লেখ করেন, শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার অন্তর্গত ডিএমখালী ইউনিয়নে চরচান্দা খাশ মহল বাজারটি অবস্থিত। বাজারের পূর্ব পাশে ১৬ফিট সরকারি রাস্তার উপর, রাস্তার উত্তর পাশে-রাস্তার মুখে রাসেল সরদার, পিতা- মৃত ফিরোজ সরদার রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে অবৈধভাবে মেসার্স সরদার ফার্মেসী নামে দোতলা দোকান ঘর নির্মাণ করে বহুদিন যাবত ভোগ দখল করিয়া আসিতেছেন এবং রাস্তায় দক্ষিণ পাশে কাউসার আহমেদ তকি হাওলাদার, পিতা- মৃত এবাদত হাওলাদার তিনিও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে রাস্তার দক্ষিণ মুখে দোকান ঘর নির্মাণ করে ভোগ দখল করিয়া আসিতেছে। এতদিন এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ থাকলেও তাদের রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার দাপটে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। এলাকাবাসী ও বাজার ব্যবসায়ীদের দাবী অবৈধ দোকান দুটি উচ্ছেদ করে রাস্তাটি অবমুক্ত করা হলে বাজারের আয়তন বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যের গতি বাড়বে।
এমতাবস্থায়, মহোদয়ের নিকট বিনীত প্রার্থনা উপরে উল্লেখিত সরকারি রাস্তার উপর নির্মিত অবৈধ দোকান ঘর দুটি অপসারণ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে আপনার সদয় মর্জি কামনা করছি।
এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনির হোসেন বলেন, আমাদের দেশে দীর্ঘদিন একটি ফ্যাসিবাদী সরকার ছিল। যাদের সমাজে ন্যায়, সুশাসন ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার কথা ছিল, তাঁরা দখলদারিত্বের মহোৎসব চালিয়ে সমাজকে করেছে নীতিহীন। এই দুই দখলদারের হাত থেকে সরকারী সম্পদ রক্ষার্থে জনস্বার্থে অভিযোগটি করেছি। তবে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে আমার অসন্তোষ রয়েছে। দশ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। মনে হচ্ছে পতিত স্বৈরাচারের পতন হলেও স্বৈরাচারী ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
বর্তমানে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের পদ শূন্য থাকায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: সাইফুদ্দিন গিয়াসের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চেয়ে তার মুঠোফোনে কল করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.