এইমাত্র পাওয়া

নতুন আতঙ্ক সেশনজট

আরিফা সেতু।।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সেশনজট দীর্ঘদিন ধরেই জটিল সমস্যা। শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষাবর্ষ শেষ করতে না পারাই সেশনজট। সেশনজটের ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অহেতুক দীর্ঘায়িত হয়। সেশনজটের কারণে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপের পাশাপাশি পেশাগত জীবনে প্রবেশে বিলম্ব ঘটে। একজন শিক্ষার্থী দীর্ঘ সিঁড়ি বেয়ে, ডানা মেলে আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছায়। পাশাপাশি বাবা-মা আর পরিবারের মানুষগুলোও স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন। কিন্তু তাদের স্বপ্ন ও আশায় সেশনজটের মতো কালো ছায়া গ্রাস করলে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে।

প্রায় এক মাসের কোটা সংস্কার আন্দোলন শেষে নতুন উদ্যমে দেশ গড়ার লক্ষ্যে হাজারো তরুণ-তরুণী উজ্জীবিত। এমন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা। স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলন শেষ হওয়া এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ক্যাম্পাস খোলা এবং ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য থেকে শুরু করে কোষাধ্যক্ষ এমনকি হল প্রভোস্টরাও পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়ে পড়েছে অভিভাবকহীন। নিরাপত্তা শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্যাম্পাসে ফিরলেও নেই ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হওয়ার কোনো তৎপরতা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কমিটি সমন্বয়ক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে কয়েক দফায় মিটিংয়ে বসলেও উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সেশনজট এখন নতুন আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত।

একদিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগ আগে থেকেই সেশনজটের কবলে রয়েছে। অন্যদিকে বিভাগগুলোর পরিকল্পনাবিহীন কার্যক্রম, ক্লাসরুম সংকট, অপর্যাপ্ত শিক্ষক, অতিরিক্ত অ্যাকাডেমিক ছুটি, শিক্ষকদের আন্দোলন ও কর্মবিরতি, প্রশাসনিক জটিলতা, রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতাসহ নানাবিধ বিষয় সেশনজটের জন্য দায়ী। উপরন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরবর্তী সময় যেন শিক্ষার্থীদের জন্য হয়ে উঠেছে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা! প্রশাসনিকভাবে স্নাতক শেষ করার জন্য চার বছর নির্ধারণ থাকলেও কিছু কিছু বিভাগে ছয় এমনকি আট বছরও লেগে যায়। শিক্ষাজীবনে অনিশ্চয়তা এবং তা দীর্ঘায়িত হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ ও হতাশা বাড়ে। তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন। অতিরিক্ত টিউশন ফি, আবাসন ও অন্যান্য খরচের কারণে শিক্ষার্থীদের পরিবারেরও আর্থিক চাপ বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ অনেক শিক্ষার্থীই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন; এমনকি অনেকে আত্মহননের পথও বেছে নেন। অনেক বিশ্লেষক উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সুইসাইডের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে এটিকে আখ্যায়িত করে থাকেন। অনেকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। তাদের টিউশন ফি বা অন্যান্য খরচ দিতে না হলেও অনেকেই পরিবার থেকে দূরে থাকেন। তাদের পরিবার থেকে পাওয়া ভাতার ওপর নির্ভর করতে হয়। দীর্ঘদিন পর্যন্ত এ জীবন চালিয়ে যাওয়াও কঠিন।

সেশনজট নিরসনের জন্য প্রশাসনিক কার্যক্রমের গতি বৃদ্ধি, শিক্ষকদের সঙ্গে সমঝোতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার সংস্কার ও কঠোরভাবে তা অনুসরণের পাশাপাশি শিক্ষার পর্যাপ্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত অনতিবিলম্বে আগের সেশনজট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সক্রিয় করে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা।

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.