এইমাত্র পাওয়া

আসছে না কাজে

 নিজস্ব প্রতিবেদক।।

টানা ১০ দিন বন্ধ থাকার পর গত রোববার বেলা ৩টা থেকে চালু হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট। সেই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্রাহকদের ৫ জিবি ডাটা বোনাস দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তবে মোবাইল ইন্টারনেট চালু করে বোনাস দিলেও গতি দেননি অপারেটররা। বোনাস পাওয়া ডাটার মেয়াদ দুই দিন শেষ হলেও যেমন ডাটা তেমনই রয়ে গেছে। ফলে অব্যবহৃতই থাকছে বোনাস ডাটা। এ যেন নামেই বোনাস, কোনো কাজে আসছে না। আর এতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রাহকরা।

তারা বলছেন, মোবাইল ডাটা দিয়ে ব্যবহার করা যাচ্ছে না ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশ করতে পারলেও বার্তা বা ছবি পোস্ট করতে পারছেন না তারা। এমনকি অন্যদের পোস্টে ক্লিক করে বার্তা বা ছবি দেখতেও পারছেন না। শুধু তা-ই নয়, ফেসবুকের হালনাগাদ পোস্ট খুঁজে পেতেও সমস্যা হচ্ছে অনেকের।

মিরপুরের বাসিন্দা মো. নুরে আলম সাহেদ বলেন, মোবাইল ইন্টারনেট চালু হওয়ার খবর শুনে খুশি হয়েছিলাম। নেট ঠিকই চালু হয়েছে, কিন্তু তা দিয়ে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটকসহ কোনো অ্যাপসই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। নেট এত স্লো যে এ দিয়ে কোনো কাজই করা যায় না। কারও সঙ্গে কথা বলা যায় না, যোগাযোগ করা যায় না। ফোরজি নেওয়ার্কের টুজিও চলছে না। সরকার নেট দিলেও গতি দেয়নি। তাই বোনাসের ডাটা যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেছে। এটা একটা সান্ত্বনা ছাড়া কিছু না। এমন নেট না দিলেও হতো।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শতাব্দী খন্দকার বলেন, ২৮ জুলাই আমি বাংলালিংকের সিমে ৫ জিবি ইন্টারনেট বোনাস পেয়েছি ২৯ জুলাই রাত ৮টা পর্যন্ত কোনোমতে একশত এমবি খরচ হয়েছে। ৩০ জুলাই এই ডাটার মেয়াদ শেষ হবে। তবে নেট খুবই দুর্বল এত স্লো গতি দিয়ে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় না। কোনো ভিডিও দেখা যায় না। আগামী এক দিনে আরও ৯০ বা ১০০ এমবি খরচ হলেও বাকি সব ডাটা থেকে যাবে। যা আবার অপারেটররা কেটে নেবেন। তা হলে এই ইন্টারনেট বা বোনাস দিয়ে লাভ কী?। এটা গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না।

আল নাহিয়ান নামের বেসরকারি এক চাকরিজীবী বলেন, আমি জিপির নেট ব্যবহার করি। আমার মান্থলি প্যাকেজ ছিল যা ১০ দিন আমি ব্যবহার করতে পারিনি। শুনলাম সবাইকে বোনাস দিচ্ছে, কিন্তু আমি তো পেলাম না। শুনেছি যারা ৭ দিন বা ১৫ দিন মেয়াদি নেট কিনেছিল কেবল তারাই এই বোনাস পাবে। প্রশ্ন হলো, তা হলে আমি যে এই ১০ দিন নেট চালাতে পারলাম না বা আমার ১০ দিন মেয়াদ চলে গেল, আমিও তো গ্রাহক। আমি বোনাস না পাই, কিন্তু হারানো মেয়াদ কেন পাব না? এ ছাড়া আমার অবশিষ্ট যে ডাটা ছিল তা দিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। আমার মেয়াদ কিন্তু চলেই যাচ্ছে। এর দায় কে নেবে? আসলে এসব দেখার কেউ নেই।

মোবাইল ইন্টারনেটের ধীরগতির বিষয়ে মন্তব্য জানতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ ও মহাপরিচালক (সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মাদ খলিলুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফোরজিতে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি ২০ এমবিপিএস থাকতে হবে, সেখানে আমরা পাচ্ছি কেবিপিএস বা দুই তিন এমবিপিএস। এটা গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া কিছুই না। রোববার অনেক জায়গায় রাত ৮টায় বোনাস পেয়েছে কেউ ৯টায় পেয়েছে। অনেকে সকাল বেলা উঠে বোনাস দেখেছে তারা, কিন্তু ওই রাতে আর ব্যবহার করতে পারেনি। এই অবস্থায় বোনাসের দুই দিন চলে গেল, আগামীকালও গতি ঠিক হবে কি না সন্দেহ আছে। যদি না ফিরে তা হলে কিন্তু অপারেটররা দায় এড়িয়ে গেল।

সুতরাং এ দায়ভার বিটিআরসিকেই নিতে হবে। কারণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে গ্রাহক, সিভিল সোসাইটি ও গণম্যাধ্যমের সঙ্গে বিটিআরসির বসা উচিত ছিল। তারা সেটি না করে শুধু স্টোকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এমনকি যারা মান্থলি প্যাকেজ কিনেছিল তাদের কিন্তু বোনাস দেওয়া হয়নি। আর যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে না বা ফিচার ফোন চালায় তাদেরকেও ৫ জিবি ডাটা দেওয়া হয়েছে। এটা একটা মনগড়া সিদ্ধান্ত।

তিনি বলেন, আমাদের দাবি ছিল যে বোনাসের কোনো দরকার নেই। যেদিন থেকে ইন্টারনেট চালু হবে সেদিন থেকে মেয়াদ গণনা করা হোক। তারা এই বোনাসের মাধ্যমে আবার তিন দিনের ডাটা প্যাকেজকে বৈধতা দিচ্ছে। না হলে এই বোনাস অবৈধ হয়ে যায়। পুরো প্রক্রিয়াটাই অবৈধ। অপারেটররাও জানেন এই তিন দিন নেটওয়ার্ক থাকবে না। ঠিক হতে হতে মেয়াদ চলে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আর গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটারনাল কমিউনিকেশন্স অঙ্কিত সুরেকা বলেন, আমাদে এখান থেকে ইন্টারনেটের কোনো সমস্যা নেই। কোনো গ্রাহক এমন কোনো অভিযোগও করেননি।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এ/৩১/৭/২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading