জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছররা গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর হওয়ায় ৫ জনকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (১৭ জুলাই) সোয়া পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার সংলগ্ন সড়ক থেকে হামলা শুরু করে পুলিশ। পরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকরা বের হয়ে গেলে হামলা বন্ধ করে পুলিশ। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ ক্যাম্পাস ছেড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর এলাকায় অবস্থান করছিলেন। হটাৎ পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। এরপর শিক্ষার্থীরা ভাগ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা, পরিবহন চত্বর ও ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের দিক থেকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় ছররা গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়তে থাকে। কিছুক্ষণ পর ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। যদিও হামলার প্রায় একঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা ফের পুলিশকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, একটা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলাম। সেই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ছাত্রলীগ ও কিছু বহিরাগত হামলা চালায়। পরে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়। তবে আন্দোলন থামাতে এবং ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হলে ফেরাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। আমরা সেই সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ায় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে পুলিশ ডেকে হামলা করা হয়েছে।
চিকিৎসা কেন্দ্রে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রিজওয়ানুর রহমান বলেন, ‘শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ থেকে ৬ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। যারা আহত হয়েছে তাদের বেশিরভাগের ওপর ছররা গুলি ছোঁড়া হয়েছে।’
সাংবাদিকদের উপর পুলিশের হামলা
এদিকে সন্ধ্যা সাতটার দিকে আহতদের নিয়ে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর এলাকায় একটি গাড়ি থামিয়ে তার ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীদের মারধর করতে থাকে পুলিশ। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন ভিডিও করতে গেলে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায় পুলিশ।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পুলিশের পাহারায় পালিয়েছে উপাচার্য
অন্যদিকে সন্ধ্যা সাতটার দিকে পুলিশের পাহারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে পালিয়ে যান উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমসহ অন্য সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষকরা।
শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নেননি জাবি প্রক্টর
শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলার শঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবিরকে একাধিকবার ফোন করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ যখন ছররা গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা শুরু করে, তখনও ফোন করা হয়। তবে শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিতে পারবেন না বলে জানান প্রক্টর।
তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মেনে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হবে। অন্যথায় তাদের কোনো দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না। আমি ঘটনাস্থলে যেতে পারবো না।’
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা তাদেরকে অনেক সময় ধরে বুঝিয়েছি। তারা চাইলে হলে ফিরে যেতে পারতো। কিন্ত তারা তা না করে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আমরা বাধ্য হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছি।’
এর আগে, দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের জরুরি সভা শেষে শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি হল ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়ার পরপরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন মুরাদ চত্বরে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এতে প্রশাসনিক ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমসহ অন্য সিন্ডিকেট সদস্য এবং শিক্ষকরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
এদিকে উপাচার্যের অবরুদ্ধের খবরে ক্যাম্পাসে এপিসিকারসহ পুলিশ প্রবেশ করে। তখন পুলিশ সদস্যদের সামনে ও পেছনে সড়ক আটকে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে জাবির মূল ফটকে ৬ প্লাটুন বিজিবি ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া সাভার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলে হল ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হল না ছেড়ে দাবি আদায়ের পক্ষে অনড় অবস্থানে রয়েছেন।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৭/০৭/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.