এইমাত্র পাওয়া

স্বপ্ন খোঁজে সোনাদিয়ার শিশুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

চারিদিকে সমুদ্রে ঘেরা, মাঝখানে বিচ্ছিন্ন ছোট একটি দ্বীপ কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া। এখানে নোনা জলের গর্জনে ঘুম ভাঙে মানুষের। সমুদ্রের ত্রাসের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে একটু একটু করে স্বপ্ন বুনে দ্বীপটির লোকজন। আর সেই স্বপ্ন যেন শুরুতেই থমকে যায়। কারণ, সন্তানদের বেশিদূর পড়ালেখা করাতে পারেন না তারা। সোনাদিয়ায় শিক্ষার আলো পৌঁছালেও পঞ্চম শ্রেণিতেই পাঠ চুকিয়ে ঢেউয়ের ভাঁজে স্বপ্ন খুঁজতে থাকে সোনাদিয়ার শিশুরা।

৯ বর্গকিলোমিটারের এ দ্বীপে মানুষের জীবন-যাপনও খুবই সাধারণ। পলিথিন ও বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি তাদের ঘর। কিন্তু তারপরও শিক্ষা আলো থেকে বঞ্চিত করতে চান না সন্তানদের। দ্বীপের একমাত্র স্কুল সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা চলে এই স্কুলে। কিন্তু দ্বীপটিতে আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা হাই স্কুল না থাকায় পঞ্চম শ্রেণির পরই ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এমনকি ইচ্ছা থাকা সত্তেও চারিদিকে সমুদ্র থাকায় উপজেলা শহরে গিয়ে শিশুদের পড়াশুনা করা তাদের এবং পরিবারের সম্ভপর নয়। কারণ, যোগাযোগের সহজলভ্য নয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজারের নৌঘাট থেকে সোনাদিয়া দ্বীপে যেতে হয় বিশাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে। আর যাতায়াতের জন্য নৌযান তেমন একটা নাই এবং ব্যয় সাধ্য। তাই চাইলেই যে কেউ সোনাদিয়া থেকে অন্য কোথাও যেতে পাড়বে না। সোনাদিয়ায় একটি স্কুলই আছে। আর সেটিতে পঞ্চম শেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করানো। হয়। যেসব শিক্ষকরা পাঠদান করান তারাও আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। স্কুলটিতে শিক্ষক আছে মোট ছয় জন। তাই প্রতিদিন ক্লাসও হয়না স্কুলটিতে।

স্কুলটি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করা তাকভির জানায়, সে এখর আর পড়াশোনা করছে না। কারণ, সোনাদিয়ায় কোনো হাইস্কুল নেই। পঞ্চম শ্রেণির পর এখানে আর কেউ পড়াশোনা করতে পারেনা। তবে স্কুলটির শিক্ষকরা কেমন পড়ায় জানতে চাইলে সে জনায়, শিক্ষকরা খুবই ভালো পড়ায়।

মহেশখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ভবরঞ্জন দাশ বলেন, ‘গুটি ভাঙ্গায় আর একটি স্কুল আছে, সেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করানো হয়। যারা সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চমে শ্রেণি পাস করে তাদের পরামর্শ দেই ওই স্কুলে পড়াশোনা করার। কিন্তু এলাকাটি দুর্গম ও তাদের পারিবারিক অবস্থা অস্বচ্ছল হওয়ায় দূরে গিয়ে পড়াশোনার সুযোগ কম। আমাদের সাধ্য মতো আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন,‘সেনাদিয়া হলো পিছিয়ে পড়া একটি এলাকা। ওখানকার অধিকাংশ মানুষ জেলে। তাদের শিক্ষার গুরুত্বের বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টাও করে যাচ্ছি। ওই এলাকা থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা যে দূরে গিয়ে পড়বে সেই স্বচ্ছলতা নেই অভিভাবকদের। অনেক শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণি পাস করেই পরিবারের ভরণ-পোষণের কাজে লেগে যায়।’

এ বিষয়ে উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সোনাদিয়া দ্বীপের বাসিন্দাদের সরকারের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা আছে, আমি এমনটাই জানি।’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/২৩/০৫/২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.