গরমেও অবিরত শ্রমিক, বিশ্রাম যেন বিলাসিতা

ঢাকাঃ ঘামে ভেজা শার্টের সামনে তিনটি বোতাম খোলা, গামছা দিয়ে বারবার মুখ মুছে নিচ্ছেন রিকশাচালক বিল্লাল আলী। তবু মাথা থেকে ক্রমাগত ঘাম ঝরছে তার। এক গ্লাস লেবুর শরবত হাতে নিমেষেই শেষ করে ফেললেন। আরেকবার কপালের ঘাম মুছে রিকশাটাকে ছায়ায় নিয়ে একটু জিরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। তখনই এক যাত্রীর আগমন। সঙ্গে সঙ্গে ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে আবার ছুটলেন বিল্লাল।

এই গরমেও বিল্লালদের না ছুটে উপায় নেই। কারণ, রিকশার প্যাডেলে ঘুরে তাদের জীবনের চাকা। নইলে না খেয়ে থাকতে হবে পুরো পরিবার।

চলমান তাপপ্রবাহে রাজধানীর রাস্তায় বের হলেই শরীর জ্বালা করে। বাতাসে যেন গায়ে লাগে আগুনের হলকা। এর মধ্যেও জীবিকার প্রয়োজনে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকেরা। কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নেওয়াটা যেন বিলাসিতা তাদের কাছে। শরীর চলুক আর না চলুক, কাজ না করে উপায় নেই। নইলে জীবন চলে না।

পল্টনের একটি নির্মাণাধীন ভবনের সামনে দেখা যায়, প্রচণ্ড রোদের মধ্যে মাথায় করে বালু, পাথর ও সিমেন্ট ছাদে তুলছেন একদল শ্রমিক। ওপরে ছাদ ঢালাইয়ের কাজে ব্যস্ত আরেক দল। প্রত্যেকের শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে। সেদিকে তাকানোর ফুরসত নেই কারও।
নির্মাণাধীন ওই ভবনের নিচে কথা হয় নিজাম উদ্দিন নামের একজন নির্মাণশ্রমিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এমন রোদের মইদ্যেও গরম বালু, পাথর দিয়া ডালাই দেওয়া লাগতাসে। না দিয়াও কোনো উপায় নাই, দিনের কাজ দিনে না করলে ট্যাহা দিবো ক্যান?’

একই অবস্থা পরিবহন শ্রমিকদেরও। গতকাল দুপুরে কথা হয় রাইদা বাসের চালক মনির মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ইঞ্জিনের পাশে বসে দিনের আলোতে এক ট্রিপের বেশি দেওয়া যায় না।’

তীব্র তাপপ্রবাহে স্বস্তিতে নেই রাজধানীর পল্টন, গুলিস্তান, স্টেডিয়াম এলাকার হকাররাও। সকাল থেকে ফুটপাতে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না তারা। বিশেষ কাজ ছাড়া নগরবাসী বাইরে বের না হওয়ায় দোকান বসিয়ে ঘামে ভেজা ছাড়া বিশেষ লাভ হচ্ছে না তাদের।

দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর মোড়ের একটি ভবনের চারতলায় বাইরের দিকে দড়িতে ঝুলে এসি লাগাতে দেখা যায় এক যুবককে। পরে কথা বলে জানা যায় তার নাম সুমন শেখ। সুমন বলেন, ‘দিনে ২টা করে এসি লাগাতে হচ্ছে। বাইরে কাজ করার সময় দেয়ালের গরমে শরীর পুড়ে যাওয়ার অবস্থা।’

গুলিস্তানের ফুটপাতে বাচ্চাদের পোশাক বিক্রি করেন ইউসুফ মিয়া। আধা ঘণ্টার মধ্যে তার দোকানে দুজন কাপড় নেড়ে দেখেছেন, কেনেননি কেউই। তিনি জানান, সন্ধ্যার পর কিছুটা বিক্রি থাকলেও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বসেই সময় কাটাতে হচ্ছে। ইউসুফ বলেন, ‘কাজ ছাড়া তো এই গরমে কেউ আর বাইর হয় না। আর কাপড় কিনলে এখন যাইব এসিওয়ালা মার্কেটে, এই গরমে এইখানে আইব ক্যান?’ আজকের পত্রিকা

শিক্ষাবার্তা ডটকম /এএইচএম/০১/০৫/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Check Also

ঋণের সুদহার আরো বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নীতি সুদহার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। …