জয়পুরহাটঃ জেলার আক্কেলপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য করে নিরাপত্তাকর্মী পদের নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি উপজেলার গণিপুর দাখিল মাদ্রাসায় ঘটেছে। নিয়োগে আর্থিক লেনদেন করে পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদানসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একজন প্রার্থী অভিযোগ দিলে ওই নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন ইউএনও।
শনিবার সকালে অভিযোগটি দায়ের করেন ওই প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মী পদের আবেদনকারী মো. আতাবুল হোসেন নামের একজন প্রার্থী।
শনিবার ওই মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা গেছে, নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগের জন্য মাদ্রাসার একটি কক্ষে ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে তিন জন প্রার্থীর পরীক্ষা নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তবে দেখা মিলেনি নিয়োগ বোর্ডের অন্যতম সদস্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাবেদ ইকবাল হাসানের। তার অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁকে ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হবে এবং এর আগেও তাকে ছাড়াই নিয়োগ দিয়েছি বলে জানান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইদ্রিস আলী।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের গণিপুর দাখিল মাদ্রাসায় আজ শনিবার নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগের জন্য আগে থেকেই ডি.এম মুনিম নামের একজন প্রার্থীর নিকট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করে তাকে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করে পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠান প্রধান। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের জন্য তারিখ চূড়ান্ত করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে টাকা লেনদেন করে পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে বলে একটি পোস্ট করেন অপর প্রার্থী আতাবুল হোসেন। পরে অনিয়মের বিষয়গুলি উল্লেখ করে শনিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেন ওই প্রার্থী। অভিযোগের পর বিষয়টি আমলে নিয়ে মুঠোফোনে পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং সুপারকে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করতে নিদের্শ দেন ইউএনও মনজুরুল আলম। এরপরও তারা নির্দেশ অমান্য করে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগের দিনের আগের রাতে ওই পদের আবেদনকারী প্রার্থীদের বাড়িতে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়। পারিবারিক কাজে প্রার্থী আতাবুল হোসেন এলাকার বাহিরে অবস্থান করায় নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ করতে পারেননি। ওই নিয়োগ পরীক্ষায় ডি. এম মুনিম নামের একজনকে নিয়োগ প্রদান করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগকারী প্রার্থী মো. আতাবুল হোসেন বলেন, তারা নিয়ম অমান্য করে বিধি বহির্ভূতভাবে অর্থ লেনদেন করে ডি. এম মুনিম নামের প্রার্থীকের নিয়োগ প্রদান করবে বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। সেই লক্ষ্যে তারা কৌশলে পরীক্ষার আগের রাতে আমার বাড়িতে নোটিশ পাঠায়। এত অল্প সময়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এটি মূলত লোক বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষা ছিল।
ওই মাদ্রাসার সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা সরকারি বিধি অনুযায়ী নিয়োগ পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। পরীক্ষা শুরুর আগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসেছিলেন। পরে ইউএনও স্যার তাকে অফিসে ডেকে পাঠালে তিনি চলে যান। অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই।
মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ পরীক্ষা নিচ্ছি। এই নিয়োগে আমরা কোনো প্রার্থীর নিকট থেকে আর্থিক লেনদেন করিনি। যদি কেউ অভিযোগ দেয় সেটি মিথ্যা। ইউএনও সাহেবের সাথে মুঠোফোনে কথা হয়েছে, নিয়োগ পরীক্ষা শেষে তাঁর সাথে দেখা করবো।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাবেদ ইকবাল হাসান বলেন, শনিবার বেলা ১১ টায় নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের কথা ছিল। ওই দিন সকালে নিয়োগে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি অভিযোগ হলে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করতে জানানো হয়েছে। তবে আমি ওই মাদ্রাসায় যায়নি। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তথা নিয়োগ বোর্ডের একজন সদস্যও অনুপস্থিত থাকলে নিয়োগ অবৈধ হিসাবে গণ্য হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আলম বলেন, ওই মাদ্রাসার নিরাপত্তা কর্মী পদে নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সভাপতি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করতে বলা হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্ত করে পরে তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এরপরও যদি নিষেধ অমান্য করে পরীক্ষা গ্রহণ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.