Breaking News

ডালিয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়: সনদ যাচাই হচ্ছে সেই দুই শিক্ষকের!

নিজস্ব প্রতিবেদক, নীলফামারীঃ জেলার ডিমলায় বছরের পর বছর জাল সনদ দিয়ে চাকরি করা ডালিয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক বিশ্ব নাথ রায় ও সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম) সাবিত্রী রানী রায়ের সনদ যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস।

এর আগে “নিয়োগ ও সনদ জালিয়াতি করে ২১ বছর ধরে শিক্ষকতা শিক্ষক বিশ্বনাথের, ‘ডিমলায় জাল সনদে শিক্ষক বিশ্ব নাথের বিশ্ব জালিয়াতিনিয়োগ ও সনদ জালিয়াতি করেও স্বপদে বহাল শিক্ষক বিশ্বনাথ‘ এবং ‘জালিয়াতিতে ভরা ডালিয়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, শিক্ষা অফিসার বললেন আজগুবি‘ শিরোনামে শিক্ষাবার্তা’য় একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়।  শিক্ষাবার্তা’য় সংবাদ প্রকাশের জেরে এই দুই শিক্ষকের জাল সনদ ও নিয়োগ জালিয়াতি নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা শিক্ষা অফিস। পরবর্তীতে চলতি বছরের গত ১২ মার্চ সরেজমিন তদন্ত করে তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হলেন ডিমলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপার ভাইজার মোঃ  আমির বোরহান ও সদস্য জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী প্রোগ্রামার মো. বাচ্চু মিয়া ও সহকারী পরিদর্শক মো. মশিউর রহমান।

সনদ যাচাইয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে জানিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান বৃহস্পতিবার শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, ডালিয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক বিশ্ব নাথ রায় ও সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম) সাবিত্রী রানী রায়ের সনদ যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠির যবাব পেলেই তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে এবং বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে।

কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক বিশ্ব নাথ রায়ের কম্পিউটার সনদ জাল

শিক্ষাবার্তা’য় প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, ৭ আগস্ট ২০০২ সালে ডালিয়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ফয়জুল হক স্থানীয় দাবানল পত্রিকায় দুই জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো ১৯৯৫ অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে একাডেমিক কোন পর্যায়ে ৩য় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সাতজন প্রার্থী আবেদন করলেও পরীক্ষায় উপস্থিত হয় পাঁচ জন প্রার্থী। শিক্ষক বিশ্বনাথ এর স্নাতক (পাস) শ্রেণিতে ৩য় বিভাগ থাকায় আবেদনের যোগ্যতা না থাকলেও তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ফয়জুল হক আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করায়। ঐ নিয়োগ পরীক্ষায় কম্পিউটার শিক্ষক পদে তিন জন উপস্থিত থাকলেও দুই জন কৃতকার্য হয়। সবগুলোতে ২য় বিভাগ থাকা সন্তোষ চন্দ্র রায়কে নিয়োগ না দিয়ে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ফয়জুল হক অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অযোগ্য ব্যক্তি বিশ্বনাথ রায়কে নিয়োগ প্রদান করে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ বৈধ না হওয়ায় ঐ সময়ে সরকারের বেতন পাননি এই শিক্ষক। বেশ কিছু অফিসে ঘোরাঘুরি শেষে আর্থিক সুবিধা দিয়ে ২০০৫ সালে তিনি এমপিওভুক্ত করে নেন। ১৯৯৫ সালের এমপিও নীতিমালায় কম্পিউটার শিক্ষক পদে নিয়োগ বিধিমালায় জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নট্রামস) অথবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার সনদ থাকা বাধ্যতামুলক থাকলেও শিক্ষক বিশ্বনাথ রায়ের নিয়োগের সময় কোন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সনদ ছিল না। পরবর্তীতে তিনি জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নট্রামস) থেকে ভুয়া কম্পিউটার সনদ দাখিল করেন। যার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নট্রামস) কর্তৃপক্ষ।

সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম পন্ডিত) সাবিত্রী রানী রায়ের পান্ডিত্যের সনদ জাল

শিক্ষাবার্তা’য় প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম পন্ডিত) সাবিত্রী রানী রায় সনদ জালিয়াতি করে পেয়েছেন নিয়োগ। তিনি বিদ্যালয়টিতে যোগদান করেন ২০০৪ সনের ০১ ডিসেম্বর। সাবিত্রী রানী রায় কে নিয়োগ দিতে ২০০৪ সালের ১৯ নভেম্বর দৈনিক যুগের আলো পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পন্ডিত শিক্ষক হিসেবে সাবিত্রী রানীর রায়ের কোনো ধরণের পান্ডিত্যের ডিগ্রি না থাকলেও নিয়োগ পেতে এবং এমপিওভুক্ত হতে তিনি সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ডের অধিনে বৈকুন্ঠ বর্মা সংস্কৃত কলেজ গোলনা থেকে ২০০২ সনে আদ্য, ২০০৩ সনে মধ্য এবং ২০০৪ সনে কাব্য সার্টিফিকেট অর্জন করেন মর্মে একটি জাল সনদ তৈরি করেন। আদতে তিনি সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড থেকে কোনো ধরণের পান্ডিত্যের ডিগ্রি অর্জন করেননি। আর তৎকালীন সময়ে মোটা অংকের বিনিময়ে জাল সনদে জালিয়াতি করে তাকে নিয়োগ দেন তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ফয়জুল হক।

আরও পড়ুনঃ

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৮/০৪/২০২৪

Check Also

শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর তোপের মুখে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ

সিলেটঃ দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর তোপের মুখে পদত্যাগ করলেন কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের  সুরমা …