সুভাষ বিশ্বাস, নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর অঞ্চলঃ জেলার ডালিয়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ডিমলা উপজেলার ডালিয়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের নিয়োগ জালিয়াতির তথ্য পাওয়া গেছে। জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া ঐ দুই শিক্ষক হচ্ছেন সহকারী শিক্ষক (কৃষি) সফিয়ার রহমান এবং সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম পন্ডিত) সাবিত্রী রানী রায়। এছাড়াও কম্পিউটার সনদ জাল ও নিয়োগ জালিয়াতি করে গত ২১ বছর ধরে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন একই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক বিশ্ব নাথ রায়।
নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজ পত্রাদি দেখে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষক সাফিয়ার রহমান বিদ্যালয়টিতে যোগদান করেন ২০০১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু তিনি যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে যোগদান করেন সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০০১ সালের ৩ জানুয়ারি। কিন্তু এই জানুয়ারির তে যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় সেখানে মাত্র তিন দিন আবেদনের সময় দেওয়া হয়। যেখানে এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো ১৯৯৫ অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তিতে অন্তত ১৫ দিন আবেদনের সময় দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে মাত্র তিন দিন।
জানা গেছে, তড়িঘড়ি করে জালিয়াতি করে এই নিয়োগ দেওয়ার জন্যই মাত্র তিন দিন সময় উল্লেখ করা হয়। নিয়োগ পাওয়া সহকারি শিক্ষক সাফিয়ার রহমানকে জালিয়াতি করে নিয়োগ দেন সাফিয়ারের শ্বশুর বিদ্যালয়টির তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ফয়জুল হক।
বিষয়টি জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক (কৃষি) সাফিয়ার রহমান শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, সে সময়ে কমিটি কিভাবে নিয়োগ দিয়েছে আমি জানিনা, তবে আমি তো কোনো দুর্নীতি করি নাই। তবে প্রধান শিক্ষক ফয়জুল হক শুধু আমার শ্বশুর নয়, আমার মামাও হয় আমার বাবাও ওই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন।
একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম পন্ডিত) সাবিত্রী রানী রায় সনদ জালিয়াতি করে পেয়েছেন নিয়োগ। তিনি বিদ্যালয়টিতে যোগদান করেন ২০০৪ সনের ০১ ডিসেম্বর। সাবিত্রী রানী রায় কে নিয়োগ দিতে ২০০৪ সালের ১৯ নভেম্বর দৈনিক যুগের আলো পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পন্ডিত শিক্ষক হিসেবে সাবিত্রী রানীর রায়ের কোনো ধরণের পান্ডিত্যের ডিগ্রি না থাকলেও নিয়োগ পেতে এবং এমপিওভুক্ত হতে তিনি সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ডের অধিনে বৈকুন্ঠ বর্মা সংস্কৃত কলেজ গোলনা থেকে ২০০২ সনে আদ্য, ২০০৩ সনে মধ্য এবং ২০০৪ সনে কাব্য সার্টিফিকেট অর্জন করেন মর্মে একটি জাল সনদ তৈরি করেন। আদতে তিনি সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড থেকে কোনো ধরণের পান্ডিত্যের ডিগ্রি অর্জন করেননি। আর তৎকালীন সময়ে মোটা অংকের বিনিময়ে জাল সনদে জালিয়াতি করে তাকে নিয়োগ দেন তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ফয়জুল হক।
জাল সনদে নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারি শিক্ষক (পন্ডিত) সাবিত্রী রানী রায়ের মুঠোফোনে কল করলেও তিনি কল ধরেননি।
জানা গেছে, ৭ আগস্ট ২০০২ সালে ডালিয়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ফয়জুল হক স্থানীয় দাবানল পত্রিকায় দুই জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো ১৯৯৫ অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে একাডেমিক কোনো পর্যায়ে ৩য় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সাতজন প্রার্থী আবেদন করলেও পরীক্ষায় উপস্থিত হয় পাঁচ জন প্রার্থী। শিক্ষক বিশ্বনাথ এর স্নাতক (পাস) শ্রেণিতে ৩য় বিভাগ থাকায় আবেদনের যোগ্যতা না থাকলেও তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ফয়জুল হক আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করায়। শুধু নিয়োগ জালিয়াতিই নয়, আবেদনের সঙ্গে কম্পিউটার শিক্ষক শিক্ষক বিশ্বনাথ জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নট্রামস) বগুড়ার একটি ডিপ্লোমা সনদপত্র দাখিল করেন৷ কম্পিউটার বিষয়ে ডিপ্লোমার যে সনদ তিনি দেখিয়েছেন সেই সনদে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও পরিচালকের কোন স্বাক্ষর নেই। জানা গেছে, ঐ নিয়োগ পরীক্ষায় কম্পিউটার শিক্ষক পদে তিন জন উপস্থিত থাকলেও দুই জন কৃতকার্য হয়। সবগুলোতে ২য় বিভাগ থাকা সন্তোষ চন্দ্র রায়কে নিয়োগ না দিয়ে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ফয়জুল হক অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অযোগ্য ব্যক্তি বিশ্বনাথ রায়কে নিয়োগ প্রদান করে।
এক কিংবা দুই নয় জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিক শিক্ষককে নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডালিয়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ফয়জুল হক শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আমার সময়ে যে নিয়োগ হয়েছে তা সঠিক এবং বৈধ, আমি তিন দিনের মাথায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ নেইনি। বিশ্বনাথ ও সাবিত্রীর সার্টিফিকেট জালের কথা বলা হচ্ছে তাদের সার্টিফিকেট আমরা দেখেছি সব ঠিক ছিল। এছাড়া সে সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কাগজ গুলো দেখেছেন। আমি এত বছর চাকরি করলাম সে সময় তো কেউ অভিযোগ করল না। এখন কমিটির দাতা সদস্য নিয়ে গন্ডগোল তাই তারা এসব ছড়াচ্ছে।
নিয়োগ জালিয়াতির বিষয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাহিদা ইয়াসমিন শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, নিয়োগ আমার সময়ে হয়নি তাই এই বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আপনারা অফিসে আসলে আমি কাগজ পত্র দেখাতে পারব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিমলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হালিম শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, সার্টিফিকেট জাল ছিল যাদের তাদের বিল বন্ধ হয়ে গেছে, আপনারা এই বিষয়গুলো নিয়ে আজগুবি কথা বলে বিরক্ত করেন কেন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৬/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়