এইমাত্র পাওয়া

গ্রামাঞ্চলে তীব্র লোডশেডিং

ঢাকাঃ প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে গ্রামাঞ্চলে ফের বাড়তে শুরু করেছে লোডশেডিং। একদিকে বৈশাখের কাঠফাটা রোদের ভাপসা গরম, অন্যদিকে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবন। গতকাল বুধবার রাজধানীর কিছু এলাকায় লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেলেও বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এটিকে লোডশেডিং না বলে কারিগরি ত্রুটি বলছে।

গত ৯ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদুল ফিতর এবং বাংলা নববর্ষের ছুটি থাকায় গ্রামাঞ্চলেও বিদ্যুতের তেমন লোডশেডিং ছিল না।

ফলে সাধারণ মানুষ অনেকটা স্বস্তিতে ঈদ ও নববর্ষ উদযাপন করেছে। ১৫ এপ্রিল থেকে অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানা খোলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে বাড়তে শুরু করে লোডশেডিং। তবে মেরামতে থাকা এলএনজি টার্মিনালটি পুনরায় চালু হওয়ায় ঈদের আগের তুলনায় বর্তমানে গ্যাসসংকট পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বেড়েছে, তার পরও ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তের গ্রামাঞ্চলে গড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে।
দেশের ৮০ শতাংশের বেশি গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। আরইবির জোনভিত্তিক বিদ্যুৎ চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যে দেখা গেছে, গতকাল বুধবার বিকেল ৩টার দিকে এই বিতরণ কম্পানিকে ৯৪৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। এই সময় সারা দেশে কম্পানিটির বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল আট হাজার ১৬১ মেগাওয়াট, সরবরাহ করা হয়েছে সাত হাজার ২১৫ মেগাওয়াট।গতকাল একই সময় আরইবির বিতরণ এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে।

আরইবির এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ দিচ্ছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। যে কারণে বাধ্য হয়ে আমাদের লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ঈদের ছুটিতে চাহিদা কম থাকায় আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিতে পেরেছি। তবে আজ (গতকাল) বিকেল ৩টার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা ও লোডশেডিং কিছুটা কম ছিল।

বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। প্রতিষ্ঠানটির সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেল ৩টার সময় সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। ওই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৩ হাজার ৫৯১ মেগাওয়াট। তখন লোডশেডিং করতে হয় ৫৮২ মেগাওয়াট।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পিজিসিবি দৈনিক প্রতিবেদনে যে বিদ্যুতের চাহিদা ও লোডশেডিং চিত্র দেখাচ্ছে, বর্তমানে তার চেয়ে চাহিদা ও লোডশেডিং প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বেশি।

বিপিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, দুই দিন ধরে অস্বাভাবিক হারে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। ফলে উৎপাদনও বাড়ানো হয়েছে। তার পরও কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। দিনের বেলা গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়িয়ে সাত হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কয়লা থেকেও তিন হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে।

রাজধানীতে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আবদুল্লাহ নোমান গতকাল রাতে বলেন, ‘তাপমাত্রা বাড়ার কারণে এসির ব্যবহার অত্যধিক বেড়ে গেছে। ফলে চাহিদাও বেড়েছে। তার পরও আমরা চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে পারছি। কারিগরি ত্রুটির কারণে আমাদের বিতরণ কিছু এলাকায় স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে। তবে কোনো লোডশেডিং নেই।’

সিলেট: সিলেটের মৌলভীবাজার জেলায় তীব্র গরমে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে সেচকাজ। এই জেলার সাতটি উপজেলায় একই চিত্র রয়েছে। জুড়ী উপজেলার বাসিন্দা জালাল আহমদ বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দিনে-রাতে বিদ্যুৎ থাকছে না। গত কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ আধাঘণ্টা পর পর চলে যায়, এতে খুবই দুর্ভোগে আছি আমরা।’

কক্সবাজার: কক্সবাজারের চকরিয়ায় ভাপসা গরমের মধ্যে গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চারবার লোডশেডিং হয়েছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘একদিকে প্রচণ্ড গরম শুরু হয়েছে, অন্যদিকে দিনের বড় একটা সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। তবে ঈদের আগে লোডশেডিংয়ের অবস্থা আরো বেশি খারাপ ছিল।’ কালের কণ্ঠ

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৮/০৪/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.