ঢাকাঃ উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা স্নাতক শেষ করে অনেকের স্বপ্ন থাকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়া। বাহিরের দেশের উন্নত জীবনযাপন, উচ্চশিক্ষার পূর্ণ গ্যারান্টি, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং পরিশেষে ঐ দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার কারণে দিন দিন শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ বেড়েই চলেছে।
দেশ থেকে প্রতিবছর হাজারো শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান তাদের স্বপ্নের দেশে। বিদেশি ইউনিভার্সিটির প্রাঙ্গণে প্রবেশের প্রথম দিনটির পেছনে থাকে শত প্রচেষ্টা। ন্যূনতম এক বছরের একটি সুপরিকল্পিত কার্যকলাপের উত্তরোত্তর সফলতার চূড়ান্ত ফল হিসেবে পেরোনো যায় দেশের সীমানা।
প্রথমত, দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার জন্য চূড়ান্তভাবে মনস্থির করা। সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক দিক হলেও পরবর্তী সময়ে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদনের সময় এর প্রভাব পড়ে। যেহেতু এখানে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের পরীক্ষা দিতে হয়, তাই মানসিক ও শারীরিক শ্রমের পাশাপাশি একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সময় ও অর্থের খরচ করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রথমেই যেকোনো সম্ভাব্য কার্যক্রমের জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করার জন্য মনস্থির করা আবশ্যক। আর এর মনস্থির হওয়া সামনের প্রতিটি কাজের জন্য পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে। অনেকের ক্ষেত্রে এই সংকল্প ও পরিকল্পনার যুগপৎ ক্রমবিকাশ ঘটে ব্যাচেলর ডিগ্রি নেয়ার শুরু থেকেই। চাকরির বাজারের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বিষয়টি নির্বাচন সাধারণত এ সময়ে করা হয়ে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে স্নাতক শেষ করে সেই বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া যায়।
আন্ডারগ্র্যাজুয়েশনের এ সময়টাতে উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনায় রসদ জোগাতে সহায়ক হতে পারে ক্যারিয়ার ও বিদেশে উচ্চশিক্ষার ওপর বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ অথবা কাউন্সেলিং। তবে দিন শেষে মনস্থির করতে হবে নিজেকেই।
ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাই-
ভাষার দক্ষতার ক্ষেত্রে বিশেষ করে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাই বিদেশে উচ্চশিক্ষার যোগ্যতা প্রমাণের প্রথম ধাপ। অধিকাংশ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে পড়াশোনার জন্য প্রয়োজন হয় ইংরেজি ভাষার। ইউরোপের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অন্য ভাষাতে দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন হয়। এগুলোর মধ্যে প্রধান ভাষাগুলো হলো ম্যান্ডারিন চায়নিজ, জার্মান, ফরাসি, আরবি ও জাপানিজ। ইংরেজি ভাষার প্রশংসাপত্রগুলোর ক্ষেত্রে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একাডেমিক আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম), টোয়েফল (টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাজ এ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ) গ্রহণ করে থাকে। যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ভাষার দক্ষতার সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল, আইডিপি (ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট সেরা মাধ্যম।
গবেষণা-
আগে পরিকল্পনার খসড়াকে পরিপূর্ণ রূপদান করতে পারে এই বিশ্লেষণধর্মী গবেষণা। এটি মূলত কোনো পর্যায়ক্রমিক ধাপ নয়; বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে এ গবেষণা প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে কোর্স, বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাদের অবস্থানগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। কোর্সের ভেতরে কী কী অন্তর্ভুক্ত আছে, নির্দিষ্ট বিষয়টি নিয়ে গবেষণার সুযোগ, ক্যাম্পাসের জীবন ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাগুলো যাচাই করতে হবে। এজন্য ক্যারিয়ার ও উচ্চশিক্ষাবিষয়ক সেমিনার, কাউন্সেলিং খুব কাজে লাগে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অথবা শিক্ষকদের কাছ থেকেও পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সহজে করা যায় ফেসবুকের মাধ্যমে। এখন বেশ কিছু ফেসবুক গ্রুপ আছে, যেগুলোতে প্রায়ই উচ্চশিক্ষা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার খরচ এবং বৃত্তির ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে জেনে নেয়া বাঞ্ছনীয়। এসব দিক বিবেচনা করে দুই থেকে তিনটি আদর্শ গন্তব্য বাছাই করা যেতে পারে। অতঃপর প্রতিটির সুবিধা ও অসুবিধা তুলনা করতে হবে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৬/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.