নিজস্ব প্রতিবেদক।।
সংখ্যাগত উন্নতির পর এবার প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ৩৮ হাজার ৩৯৭ কোটি ১৬ লাখ টাকার একটি মেগা প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ‘চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)’ শীর্ষক এ প্রকল্পের আওতায় পাঠদানের আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি চালু করা হবে।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার ইন্টারেক্টিভ ফ্ল্যাট প্যানেল (আইএফপি) বা প্রজেক্টর কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য ২০২৩ সালের জুন মাসে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। পাঁচ লটে প্রতি ধাপে ৬০০ প্রজেক্টর কেনার সিদ্ধান্ত হয়। টেন্ডার আইডি নম্বর ৯৪৫৫০৯, ৯৪৬৬৩৪, ৯৪৬৩৯৩, ৯৪৬৬৭৩ ও ৯৪৬৬৭৬।
তিন হাজার আইএফপি কেনায় প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু কাজটি একই কোম্পানিকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। যে কারণে টেন্ডার বাতিল করা হয়। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি আবারও টেন্ডার হয়। ফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) টাকা খরচ করতে পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর। তিন হাজার প্রজেক্টর না কেনায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আইএফপি কেনার জন্য আহ্বান করা দরপত্রে টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে শুধু একটি কোম্পানিকে রেসপনসিভ বিডার করা হয়। একই ব্র্যান্ড প্যানেল নামীয় শর্ত আরোপ করা হয়, যেন একটি কোম্পানিকে কাজ দেওয়া যায়।
পরিকল্পনা মোতাবেক সপ্তম সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকেই শুধু রেসপনসিভ বিডার হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের হস্তক্ষেপে দরপত্রটি আবার আহ্বান করার জন্য রি-টেন্ডার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তিন হাজার আইএফপি কেনায় প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু কাজটি একই কোম্পানিকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। যে কারণে টেন্ডারটি বাতিল করা হয়। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি আবারও টেন্ডার হয়। প্রজেক্টর না কেনায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা
এর আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে প্রজেক্টর কেনার ক্ষেত্রে আহ্বান করা দরপত্রে টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন প্রস্তুতের ক্ষেত্রে পিপিআর ও পিপিএ নিয়মের ব্যত্যয় করে শুধু একটি ব্র্যান্ডকে কাজ দেওয়ার লক্ষ্যে শর্তারোপ করা হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক সেই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য যে, ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে মালামাল বুঝে পাওয়ার আগেই সরকারের কোষাগার থেকে অগ্রিম বাবদ ডলার পরিশোধ করা হয়। যে কারণে মালামালের গুণগত মানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পাঁচ লটে তিন হাজার প্রজেক্টর কেনা হবে। সে হিসাবে প্রতি লটে কেনা হবে ৬০০ প্রজেক্টর। প্রথম লটের টেন্ডার নম্বর ৮৪৮৪৬৫। এখানে লোয়েস্ট বিডার হয় র্যাংস ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড। অথচ এ লটে ৬ নম্বর পজিশনে থাকা স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডকে রেসপনসিভ বিডার হিসেবে দেখানো হয়।
পিপিআর ও পিপিএ নিয়মের ব্যত্যয় করে শুধু একটি ব্র্যান্ডকে কাজ দেওয়ার লক্ষ্যে শর্তারোপ করা হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক সেই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। উল্লেখ, ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে মালামাল বুঝে পাওয়ার আগেই সরকারের কোষাগার থেকে অগ্রিম বাবদ ডলার পরিশোধ করা হয়। যে কারণে মালামালের গুণগত মানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না
একই ভাবে দুই নম্বর লটে লোয়েস্ট বিডার হয় ওরিয়েন্ট কম্পিউটার। এ লটেও ৭ নম্বরে থাকা স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডকে রেসপনসিভ বিডার হিসেবে দেখানো হয়। তিন নম্বর লটে লোয়েস্ট বিডার হয় কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেড। এ কোম্পানিকে কাজ না দিয়ে এ লটেও ৭ নম্বরে থাকা স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডকে রেসপনসিভ বিডার হিসেবে দেখানো হয়।
চার নম্বর লটে লোয়েস্ট বিডার হয় কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেড। কোম্পানিটিকে কাজ না দিয়ে এ লটে ৯ নম্বরে থাকা স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডকে রেসপনসিভ বিডার হিসেবে দেখানো হয়।
পাঁচ নম্বর লটে লোয়েস্ট বিডার হয় ওরিয়েন্ট কম্পিউটার। কিন্তু এ কোম্পানিকে কাজ না দিয়ে এ লটেও ৮ নম্বরে থাকা স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডকে রেসপনসিভ বিডার হিসেবে দেখানো হয়।
এ অবস্থায় ঘুরেফিরে একই কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। মূল্যায়ন কমিটির অনিয়মের মাধ্যমে পছন্দের কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
একই কোম্পানিকে বারবার রেসপনসিভ বিডার করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী অনুজ কুমার রায় বলেন, এখনো তো কাউকে কাজ দেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান যুগ তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর। শিক্ষাব্যবস্থায় কম্পিউটার, ইন্টারনেট, প্রজেক্টর, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ল্যাব, ডিজিটালাইজড উপকরণ ব্যবহার শিক্ষাকে আধুনিক, যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত করেছে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে অবশ্যই প্রযুক্তিভিত্তিক ডিজিটাল উপকরণ ব্যবহার করে পাঠদান করতে হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে আইসিটি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত এবং পাঠদানকে আনন্দময় ও গ্রহণযোগ্য করতে শিক্ষকদের প্রাথমিক স্তর থেকেই মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক পাঠদান নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। অথচ আইএফপি বা প্রজেক্টর না কেনায় ব্যাহত হচ্ছে আধুনিক মাল্টিমিডিয়া শিক্ষা কার্যক্রম
জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) ২০৩০-এর লক্ষ্যমাত্রা-৪-এ টেকসই, গুণগত মানসম্মত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে আইসিটি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত এবং পাঠদানকে আনন্দময় ও গ্রহণযোগ্য করতে শিক্ষকদের প্রাথমিক স্তর থেকেই মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক পাঠদান নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। অথচ আইএফপি বা প্রজেক্টর না কেনায় ব্যাহত হচ্ছে আধুনিক মাল্টিমিডিয়া শিক্ষা কার্যক্রম।
তিন হাজার আইএফপি কেনা প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (প্রকিউরমেন্ট বিভাগ) মো. আবু ইয়াছিন বলেন, তিন হাজার প্রজেক্টর কেনা হয়নি। প্রথমে একবার টেন্ডার আহ্বান করা হলেও পরে সেটি বাতিল হয়েছে। নতুন করে আবারও টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।
কেন টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমি বলতে পারবো না। বড় স্যাররা বলতে পারবেন।জাগো নিউজ
শিক্ষাবার্তা ডটকম/জামান/১৫/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.