নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের দুই সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের দ্বন্দ্বের জের ধরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একপক্ষের ভাড়াটিয়া কিশোর গ্যাংয়ের হামলার চেষ্টার পরে ভুল বোঝাবুঝি থেকে গড়িয়েছে দুদলের সংঘর্ষে। এতে একজন ছাত্রলীগ নেতা ও একজন অ্যাম্বুলেন্স-চালক শ্রমিক নেতা আহত হয়েছেন।
শনিবার রাতের এ ঘটনায় জর্জরিত সালথায় আবার নতুন করে মামলা-হামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানা গেছে।
জানা যায়, মাঝারদিয়া ইউনিয়নের সাবেক দুজন জনপ্রতিনিধি হাবিবুর রহমান হামেদ চেয়ারম্যান ও সাহেদুজ্জামান সাহেদ চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
এতে আহতরা ভর্তি হন ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের নতুন ভবনের পাঁচতলায় সার্জারি ওয়ার্ডে। সেখানে হামেদ চেয়ারম্যানের সমর্থক মাঝারদিয়ার সাবু (৩৫) নামে এক যুবক তার পক্ষের লোকদের দেখতে শনিবার রাতে হাসপাতালে যান।
এদিকে, অপরপক্ষ সাবুর ওপর হামলা চালানোর জন্য চরকমলাপুরের একদল উঠতি বয়সী কিশোর গ্যাং ভাড়া করে বলে অভিযোগ।
বিএসএমএমইউ হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স চালক সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক মো: রাকিব বলেন, রাতে তিনি একটি ভাড়া নিয়ে খৃস্টান মিশনে অবস্থানকালে তার স্বজন সাবু তাকে ফোন করেন। তখন তিনি জানতে পারেন- চরকমলাপুরের কিশোর গ্যাং সাবুকে মারার জন্য হাসপাতালের সামনে অবস্থান করছে। একথা শুনে তিনি তার সমিতির কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে যাওয়ার সময় তার সাথে তর্কাতর্কি হয় বাকিবিল্লাহর।
‘হাসপাতালে সবারই চিকিৎসা নেয়ার অধিকার আছে, এখানে কোনো চেয়ারম্যান গোনার টাইম নাই।’ রাকিব তার সহকর্মীদের সাথে আলাপে এমন কথা বলার সময় সেটি শুনে ফেলেন তাদেরই সাথে ওপরে উঠতে থাকা সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর এবং তার পিএস বাকিবিল্লাহ (৩৫)। এ নিয়ে এক কথা দু’কথায় তাদের মাঝে তর্কতর্কি হয়। এরপর পাঁচতলায় সার্জারি ওয়ার্ডে পৌঁছার পর বাকি বিল্লাহ্ ও তার লোকেরা রাকিবকে কিল-ঘুষি মারেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
একথা জানতে পেরে রাকিবের সাথে থাকা অন্যান্য অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা সেখানে পৌঁছালে দুপক্ষের মারামারিতে বাকি বিল্লার মাথা ফেটে যায়। গাড়ির চাবি ও হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই দিয়ে একপক্ষ আরেক পক্ষকে মেরেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।
সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর অবশ্য দাবি করেছেন, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্ব এ হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে একটি ওয়ার্ডে ঢুকে দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে বাকি বিল্লাহ্ নামে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করেছে। তবে কেন তারা এ হামলা করেছে, সে বিষয়ে তিনি সঠিকভাবে কিছু বলতে পারেননি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসানুজ্জামান মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো: সালাউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সালথার একটি মারামারির রেশ ধরে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরেকটি মারামারির ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেলে সালথার মাঝারদিয়ায় স্থানীয় প্রভাব বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হন। তাদের ২০ জনকে হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: ফায়জুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখনা উভয় পক্ষ থেকে কোনো অভিযাগ দেয়নি কেউ। অভিযাগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/জামান/১৪/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.