নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ আসন্ন ঈদুল ফিতরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বাড়তি আনন্দ লক্ষ করা গেছে। কারণ এবার ঈদের ছুটির সঙ্গেই পড়েছে পহেলা বৈশাখ। ফলে ঈদ বোনাসের সঙ্গে বাড়তি পাচ্ছেন নববর্ষ বা বৈশাখী ভাতা। অন্যদিকে অফিসকে একটু ‘ম্যানেজ’ করে নিতে পারলেই লম্বা ছুটির সুযোগও পাবেন তারা। শবে কদরের ছুটি, ঈদের ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি আর পহেলা বৈশাখের ছুটির সঙ্গে যদি মাঝের দুটো দিন ছুটি নেওয়া সম্ভব হয় তো মিলে যাবে ১০ দিনের ছুটি। সবার না হোক বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীই এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। গত কয়েক দিন ধরেই সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মুখে মুখে ছুটির আলোচনা শোনা যাচ্ছে। সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা প্রায় সবাই চাইছেন মাঝের দুদিন ছুটি নিয়ে ঈদে টানা ১০ দিন ছুটি কাটাতে।
এবার সরকারি কর্মচারীদের ঈদের ছুটি শুরু হবে ৫ এপ্রিল থেকে। সরকারি ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুসারে ৫ ও ৬ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ৭ এপ্রিল পবিত্র শবে কদরের সরকারি ছুটি। ৮ ও ৯ এপ্রিল সোম ও মঙ্গলবার সরকারি অফিস আদালত, ব্যাংক-বীমা খোলা থাকবে। তবে আজ ৯ এপ্রিল ছুটির সুপারিশ করেছে সরকাররের একটি দপ্তর। এরপর ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার পর্যন্ত পবিত্র ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি। আবার ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের ছুটি। তাই ঈদের ঠিক আগে ৮ এপ্রিল নিয়ে এখন সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে আলোচনা। ওই একদিন হচ্ছে ২৭ ও ২৮ রমজান। ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বরাবরই ওই একদিন সরকারি কর্মচারীরা বসকে ম্যানেজ করে ‘আবদারের ছুটি’ নিয়ে থাকেন। অজুহাত থাকে বাসে ও ট্রেনে টিকেট প্রাপ্যতা নিয়ে। ফলে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সহকর্মীরা যখন আবদার করেন তখন বেশিরভাগ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে তাতে ‘না’ করার উপায় থাকে না। বাস্তবতাও তাদের পক্ষেই কথা বলে। ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্ধেকেরও বেশি যে ওই দুদিন ম্যানেজ করে ৫ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ১০ দিনের ছুটিতে যাচ্ছেন সেটি সহজেই অনুমেয়। অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ওই একটি দিন সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণারও তদবির চালাচ্ছেন, যদিও তাতে সায় পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মো. আকতার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, সাপ্তাহিক ছুটি ও পহেলা বৈশাখের ছুটি মিলিয়ে এবারের ঈদে ছুটি তুলনামূলক বেশি হওয়ায় সরকারি চাকরিজীবীরা খুশি। এ ছাড়া পহেলা বৈশাখের ভাতাও ঈদ বোনাসের সঙ্গে তারা পাবেন। এটি তাদের জন্য বাড়তি আনন্দের।
এদিকে এবারের ঈদে ছুটি ও বোনাস নিয়ে সরকারি চাকরিজীবীরা খুশি হলেও যারা বেসরকারি চাকরিজীবী তাদের মধ্যে খুশির পরিবর্তে অনেকটা আফসোস লক্ষ করা গেছে। কারণ ২৮ ও ২৯ রমজানের ছুটি (৮ ও ৯ এপ্রিল) বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেশিরভাগের পক্ষেই নেওয়া সম্ভব হবে না। আর ঈদের পরে ১৩ এপ্রিল পড়বে শনিবার। ওই দিন এনজিও ও স্বায়ত্তশাসিত কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছুটি পেলেও বেশিরভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অফিসে উপস্থিত হতেই হবে। আর গণমাধ্যমের কর্মীদের তো সাপ্তাহিক ছুটি বলতে পর্যায়ক্রমে সপ্তাহে এক দিন। গণমাধ্যমে যেহেতু ডে-অফ এক দিন এবং কর্মীরা বিভিন্ন দিনে সাপ্তাহিক ছুটি পান, তাই শনিবারে ছুটি যারা পাবেন তারা থাকবেন টানা ৫ দিন ছুটি পাওয়ার আনন্দে। বাকিদের আসতে হবে অফিসে। অবশ্য অনলাইন গণমাধ্যম এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ঈদসহ ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিনেও বিশেষ ব্যবস্থায় অফিস করতে হবে অনেককে।
অন্যদিকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বৈশাখী ভাতা পেলেও পাবেন না বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। তাই বৈশাখী ভাতা নিয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই তাদের। তবে সরকারি কর্মচারীরা জানান, ২০১৫ সাল থেকে দুটি উৎসব বোনাসের পাশাপাশি বাংলা নববর্ষে বৈশাখী ভাতা চালু হয়। সরকারি কর্মচারীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী ভাতা পেয়ে আসছেন। এরপর বেসরকারি শিক্ষকরা এ ভাতার জন্য দাবি জানালে সরকার তাদেরও এর আওতায় আনে। পাশাপাশি কিছু সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এ ভাতা দিয়ে আসছে। বৈশাখী ভাতা ১৪ এপ্রিলের আগে দেওয়ার বাধ্যতাবাধকতা রয়েছে। ফলে ঈদ বোনাসের সঙ্গেই তারা এ ভাতা পাবেন।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/৩১/০৩/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.