ঢাকাঃ সারাদেশে চলছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর অবরোধ। সপ্তাহের পাঁচ দিন স্কুল খোলা থাকে, এর মধ্যে চার দিনই চলছে অবরোধ। গত সপ্তাহের চিত্রও একই। এছাড়া আগামী সপ্তাহ থেকে টানা অবরোধ আসতে পারে—এমন ধারণা করা হচ্ছে। অবরোধ চলাকালীন গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কম। অনেকে ভয়ে ব্যক্তিগত গাড়িও বের করেন না। প্রতিদিনই কম বেশি দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ছে গাড়ি। জনগণের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের আতঙ্ক। দূরপাল্লার সব গাড়িও থাকছে বন্ধ।
অবরোধ চলছে, চলছে স্কুলও। তবে উপস্থিতি কম। যাদের বাড়ি স্কুলের সন্নিকটে, তারা স্কুলে আসছে। যাদের গণপরিবহনে যেতে হয়, তারা স্কুলে আসতে পারছে না। ঝুঁকি ও নানা অজানা শঙ্কা নিয়েই অনেকে স্কুলে উপস্থিত হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণাও রয়েছে। ইতিমধ্যে পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণাও করেছে প্রায় সব স্কুল-কলেজ। আর এতেই শঙ্কা বেড়ে গেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। যারা এখন ঝুঁকি বিবেচনায় স্কুলে যাচ্ছে না, তাদেরও যেতে হবে পরীক্ষায় অংশ নিতে।
শিক্ষা বিভাগ বলছে, ‘আগের নির্দেশনার আলোকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখতে হবে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে চলতি শিক্ষাবর্ষের সব কার্যক্রম শেষ করতে হবে।’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ১৫-৩০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। এ সময়ে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণিতে বার্ষিক মূল্যায়ন কার্যক্রম চলবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় প্রান্তিকের (বার্ষিক) মূল্যায়ন পরীক্ষা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আইডিয়াল স্কুলের মতিঝিল শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ রোকনুজ্জামান বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। অন্যান্য অবরোধের চেয়ে বুধবার উপস্থিতি বেশি ছিল, ৭০ শতাংশ। এখানকার বেশি শিক্ষার্থী আশপাশ এলাকায় থাকে। এ কারণে শিক্ষার্থী আসছে। তবে যাদের বাসা দূরে, তাদের সমস্যা হচ্ছে। কিছু অভিভাবক বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন।’
প্রতিষ্ঠানের আজিজুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘পরীক্ষা খুব শিগগিরই নেওয়া হবে। এ মুহূর্তে স্কুলে উপস্থিত রাখার চেষ্টা করছি। নিজে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সন্তানকে স্কুলে নিয়ে আসছি। একধরনের ভয় নিয়েই বাধ্য হয়ে স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে।’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ সুজন বলেন, ‘স্কুলে উপস্থিতি একেবারে কম। আমার এক সন্তান ভিকারুননিসা নূন স্কুলে, অন্যজন মতিঝিল আইডিয়াল কলেজে পড়ে। ঝুঁকি নিয়ে সন্তানকে স্কুলে পাঠাই না। তবে পরীক্ষার সময় ঝুঁকি নিয়ে হলেও স্কুলে পাঠাতে হবে। আর বিকল্প তো দেখছি না।’
রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক হান্নান সরকার বলেন, ‘বেশি ঝুঁকি মনে হলে স্কুলে পাঠাই না। পরীক্ষা হলেও পাঠাব না। আগে জীবনের নিরাপত্তা, পরে পরীক্ষা।’ একই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক সুলতানা জান্নাত বলেন, যাদের বাসা স্কুলের কাছে, তারা আসছে। আর যাদের দূরে তারা আসছে না।
তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধ যেহেতু শুক্র ও শনিবার থাকছে না। তাই বিষয়টি বিবেচনায় এনে শুক্র ও শনিবার পরীক্ষা নেওয়া উচিত। এতে ঝুঁকি কম।
তবে শিক্ষা কর্মকর্তারা স্কুলের উপস্থিতি কমার বিষয়টি স্বীকার করছেন না। নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার শিক্ষা অফিসার আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, অবরোধে খুব একটা প্রভাব পড়ছে না। ৬০-৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকছে। এটা স্বাভাবিক।
আর ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল মজিদ বলেন, অবরোধের প্রথম দিকে উপস্থিতি কম ছিল। এখন মনে হয় স্বাভাবিক।’
হরতাল অবরোধে স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে এবং পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কায় অভিভাবকরা—এমন কোনো তথ্য নেই শিক্ষা অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছেও। মাধ্যমিক ও শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ের খবর নিচ্ছি। কোনো শিক্ষা কর্মকর্তা বা প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষার্থী কমে যাওয়া বা অভিভাবকদের শঙ্কার কথা জানাননি। আমাদের নির্দেশনা রয়েছে, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে চলতি শিক্ষাবর্ষে সব কার্যক্রম শেষ করার। সে লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি। এর বাইরে আর কোনো নির্দেশনা নেই।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.