এইমাত্র পাওয়া

ঢাবি: আখতারুজ্জামানের সময়ে নিয়োগে ‘প্রাধান্য’ বরিশাল

ঢাকাঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৪ নভেম্বর। গত ছয় বছরে তাঁর সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস ও কয়েকটি হলে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তার মধ্যে বরিশাল অঞ্চলের ছিল অস্বাভাবিক প্রাধান্য। এ উপাচার্যের আমলে বিভিন্ন সময়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের তথ্য অনুসন্ধান করে এমন প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। যদিও বিভাগ ও ইনস্টিটিউট ধরে তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া উপাচার্যের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগের তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি উপাচার্যের দপ্তরে সেকশন অফিসার (গ্রেড ৯) পদে নিয়োগ পান নিপু ইসলাম তন্বী। একই দপ্তরে তৃতীয় শ্রেণির সমমান প্রধান সহকারী পদে নিয়োগ পান এইচ এম নয়ন, উচ্চমান সহকারী পদে নুর ইসলাম। প্রটোকল অফিসারের দায়িত্বরত তৃতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগ পেয়েছেন মাহামুদুল হাসান তানভীর। তারা সবাই ঢাবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখার সাবেক নেতা। জনসংযোগ দপ্তরে সেকশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান রায়হানুল ইসলাম। তন্বী ছাড়া সবার বাড়ি উপাচার্যের এলাকা বরিশালে। এমনকি উপাচার্যের অফিসে পিয়ন পদে একজন নারী নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁর বাড়িও বরিশাল।

দেখা যায়, ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে চতুর্থ শ্রেণির ৯ নিয়োগে ছয়জন, তৃতীয় শ্রেণির চার নিয়োগে তিনজন ও হোমিও চিকিৎসক পদে দুই নিয়োগে দু’জন ও পার্টটাইম একজন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে ২৬ নিয়োগে ১৬ জন, মাস্টাররোলে সাতজন ও রোকেয়া হলে ১৯ নিয়োগে ১২ জন বরিশাল থেকে নিয়োগ পেয়েছেন। রেজিস্ট্রারের অফিসে ১৪ নিয়োগে ছয়জন, প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে ১১ জন, হিসাব পরিচালকের দপ্তরে ১০ নিয়োগে চারজন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ২৬ নিয়োগে ১০ জন, পরিবহন অফিসে ৯ নিয়োগে চারজন, এস্টেট অফিসে ৩৫ নিয়োগে আটজন এবং মাস্টাররোলে তিনজন, জনসংযোগ দপ্তরে দু’জন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসে আট নিয়োগে দু’জন, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রে দু’জন ও আইসিটি সেলে একজন নিয়োগ পেয়েছেন বরিশাল থেকে। কবি জসীম উদ্‌দীন হলে তিনজন, উচ্চতর কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে তিন নিয়োগে দু’জন, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে একজন, আইবিএ হোস্টেলে একজন, পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলে এক শূন্য পদে একজনই বরিশাল থেকে নিয়োগ পান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, উপাচার্যের স্ত্রী, ছেলে আশিক খান এবং ভাগনে পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল হাই অধিকাংশ নিয়োগের নেপথ্যে ছিলেন। চলতি মাসে হিসাব পরিচালকের দপ্তরে অডিটর হিসেবে নিয়োগ পান বরিশালের সাইফুল ইসলাম। তাঁর নিয়োগে আশিক খানকে ফেসবুকে অভিনন্দন জানাতে দেখা যায়।

রেজিস্ট্রার ভবন সূত্রে জানা গেছে, শেষ সময়ে উপাচার্য অফিস প্রধানদের নিয়োগগুলো দ্রুত সম্পন্নের নির্দেশ দিয়েছেন। চলতি মাসে রেজিস্ট্রারের অফিস, প্রধান প্রকৌশলীর অফিস, হিসাব পরিচালকের অফিস ও মেডিকেল সেন্টারে নিয়োগ হয়েছে।

চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংবাদপত্রে দেওয়া হয় না

২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ইউজিসি পাঠানো এক পরিপত্রে বলা হয়, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের অনুমোদিত জনবল কাঠামোতে শূন্য পদে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া যাবে। অনুমোদন ছাড়া জনবল নিয়োগ করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে বিধিবিধান পালনপূর্বক সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হবে। তবে ঢাবিতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে কোনো বিজ্ঞপ্তি সংবাদপত্রে দেওয়া হয় না। এগুলো ‘অভ্যন্তরীণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’ হিসেবে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের দপ্তর এবং ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। অনেক বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয় না। ফলে এ নিয়োগের ব্যাপারে বাইরের মানুষ তেমন জানার সুযোগ পান না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ (১২/৬) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য ছয় মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে নতুন কাউকে কোনো পদে নিয়োগ দিতে পারেন। এ সময় সিন্ডিকেট আরও তিন মাস বাড়াতে পারে। তবে অনেক সময় শূন্য পদ ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় ঘণ্টাভিত্তিক অথবা মাস্টাররোলে নিয়োগ দিয়ে থাকে। তারা বছরের পর বছর কাজ করে যান। পরে পদ শূন্য হলে অথবা সৃষ্টি হলে ওই ব্যক্তিকে মানবিক কারণ দেখিয়ে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে সঠিক নিয়োগদান প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় (দপ্তর) নিয়োগ হয়, এগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন প্রশাসন থাকে না, বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে হয়। কত মানুষের কত তদবির থাকে।’ বিভিন্ন নিয়োগের নেপথ্যে স্ত্রী, ছেলে ও ভাগনের জড়িত থাকা বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘নানা কথা মানুষজন বলে। বললেই তো আর বস্তুনিষ্ঠতা থাকে না। যথাযথ প্রক্রিয়ায় সততার সঙ্গে প্রয়াস নিয়েছি। আমি এসব অভিযোগ কখনও শুনিনি। বেশ কিছু হতদরিদ্র মানুষ চতুর্থ শ্রেণিতে চাকরি পেয়েছে। হয়তো ৫০ জনে একজন নিয়োগ পেয়েছে, তখন বাকিরা নানা কথা বলে।’  সমকাল

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৬/১০/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায় 


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.