এইমাত্র পাওয়া

‘সিরিয়াল রেপিস্ট’ স্কুলশিক্ষকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের অক্সফোর্ড হাই স্কুলের শিক্ষক ‘সিরিয়াল রেপিস্ট’ আশরাফুল আরিফ তিন দিন রিমান্ড শেষে একাধিক ছাত্রীকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আহমেদ হুমায়ুন কবিরের আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মীর শাহীন শাহ পারভেজ জানান, কান্দাপাড়া এলাকার অক্সফোর্ড হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক আরিফুল আপত্তিকর ছবি তুলে ও গোপন ভিডিও ধারণের মাধ্যমে ২০-এর অধিক ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে। তিনি এ সুযোগে শিক্ষার্থীদের একাধিকবার ধর্ষণ করে। গত ২৪ জুন শিক্ষক আরিফুল স্কুলের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। ওই শিক্ষার্থী বিষয়টি তার বাবা-মা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানায়। পরে বিষয়টি র‌্যাব-১১ কার্যালয়কে অবহিত করলে ২৭ জুন স্কুলে অভিযান চালিয়ে তারা আরিফুলকে গ্রেফতার করে। সেদিন আরিফের মোবাইল ও ল্যাপটপ থেকে অন্তত ২০ ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ভিডিও জব্দ করে র‍্যাব।

কাউকে প্রলোভন দেখিয়ে, কাউকে পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর দেওয়ার কথা বলে, কোনও ছাত্রীকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিয়ে, আবার কোনও ফেল করা শিক্ষার্থীকে ডেকে ভালো নম্বর পাইয়ে দিতে চেয়ে ফাঁদে ফেলতো এই শিক্ষক। অঙ্ক ও ইংরেজির শিক্ষক হওয়ায় সে এসব সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

এ ঘটনায় ডিএডি আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট আইনে আরিফের বিরুদ্ধে একটি এবং অন্য আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় আরিফুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার (ওসি) শাহীন শাহ পারভেজ আরও জানান, এই দুই মামলায় আরিফুল তিন দিন করে মোট ছয়দিনের রিমান্ডে ছিল। রিমান্ডের তিন দিনের মাথায় তিনি আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হয়। পরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের আদালতে হাজির করা হলে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীকে ফাঁদে ফেলে, পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে, আবার কাউকে পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বাসায় ডেকে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করে। জবানবন্দি দেওয়ার পর বিচারক তাকে কারাগারে পাঠান।

দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করলেও শিক্ষক আরিফুল ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু সম্প্রতি নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে আপত্তিকর প্রস্তাব দিয়ে ধরা পড়ে সে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব হাসান জানান, ২৭ জুন ধরা পড়ার তিন-চার দিন আগে হাই স্কুলের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে আপত্তিকর প্রস্তাব দেয় শিক্ষক আরিফুল ইসলাম। বিষয়টি ওই শিক্ষার্থী তার বাবা-মা ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানায়। পরে স্থানীয় লোকজন ওই শিক্ষককে ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর তার মোবাইল ফোন সার্চ করে একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও দেখতে পায়। এরপর ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক র‌্যাব-১১ কে বিষয়টি জানায়। র‌্যাব এসে শিক্ষক আরিফুল ইসলাম ও তাকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে আটক করে।

প্রায় দেড়-দুই বছর আগে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করার বিষয়টি জানতে পারেন তার অভিভাবক। কিন্তু ওই পরিবার এই বিষয়টি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে না জানিয়ে তাদের মেয়েকে স্কুলে থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। পরে ওই এলাকা ছেড়ে তারা অন্য এলাকায় চলে গেলে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর বাবা সাংবাদিকদের জানান, তার মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় শিক্ষকের যৌন হয়রানির শিকার হয়। মেয়ে এখন ৯ম শ্রেণিতে পড়ছে। এখনও লম্পট শিক্ষক থেকে রক্ষা পায়নি। কিন্তু ঘটনার এত বছর পেরিয়ে গেলেও আমার মেয়ে বিষয়টি চেপে রাখায় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনি। দুদিন আগে ব্যাপারটি জানতে পেরে এলাকার যুবকদের বলেছি। এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার দুপুরে স্কুলে যায়। তখন আরিফুল ইসলাম তার মোবাইলে থাকা আপত্তিকর ছবিগুলো মুছে ফেলে। এলাকাবাসী তার মোবাইল জব্দ করে এলাকার একটি মোবাইল দোকানে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ছবিগুলো উদ্ধার করে। এসময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী দুই শিক্ষককে গণপিটুনি দেয়।

কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, ৮ বছর ধরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে অক্সফোর্ড হাইস্কুলে অঙ্ক ও ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকতা করছে আরিফুল ইসলাম। আরিফুল ইসলাম কৌশলে অসংখ্য ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলেছে। আর ওই ছবি প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে সে ওই ছাত্রীদের ধর্ষণ করেছে। ছাত্রীদের কোচিং করানোর জন্য নিজের বাসা ছাড়াও স্কুলের পাশে বুকস গার্ডেন এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। স্ত্রী, সন্তান না থাকলেও ওই ফ্ল্যাটে তিনটি খাট রয়েছে। ওই ফ্ল্যাটেই চলত তার অপকর্ম। তিন দিন ধরে তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লম্পট আরিফুলকে সহযোগিতা করে আসছিল প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জুলফিকার। তিন মাস আগে স্কুলের এক শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানি করে আরিফুল। ওই শিক্ষিকা এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিতে গেলে প্রধান শিক্ষক তাকে ফিরিয়ে আনে।

আরিফুল ইসলাম ২০০৯ সালে চাকরি শুরু করে সে। পড়াতো অঙ্ক ও ইংরেজি বিষয়। তার বাড়ি মাদারীপুর জেলার শ্রীনদী গ্রামে। পিতার নাম মৃত সিরাজুল ইসলাম। রাজধানী ঢাকার কবি নজরুল কলেজ থেকে বিবিএস এবং গুলশান মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাস করেছে সে


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading