এইমাত্র পাওয়া

শিশুর প্রতিভা বিকাশে করণীয়

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম।।

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ।শিশুকে ভাল করে তৈরি করতে তাকে একটি সুখী ও সুন্দর জীবন দিতে হবে।শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কঠোর শাসন,নিয়ন্ত্রণ, প্রতিকূল পরিবেশ শিশুকে, শিশুর জীবনকে অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দেয়। আনন্দের মাঝে শিশু শিখতে চায়।আনন্দ ও শিশুবান্ধব অনুকূল পরিবেশ ব্যতিত শিশুর প্রতিভা বিকাশ অসম্ভব।

শিশুর প্রতিভা বিকাশের প্রথম সোপান হলো তার শিক্ষা।এই শিক্ষা শিশু বিভিন্নভাবে গ্রহণ করতে পারে।একসময় শিশুকে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার মধ্যে রেখে বিদ্যা অর্জন করার পদ্ধতি আমাদের দেশে চালু ছিল।কিন্তু বর্তমানে তা নেই বললেই চলে।এ ধরণের শিক্ষাকে আধুনিক শিক্ষাবিদরা সংকীর্ণ শিক্ষা হিসেবে অভিহিত করেছেন।শিশুর ওপর জোর করে বিদ্যার্জন করানোর নাম শিক্ষা নয় বরং শিশুর গ্রহণ উপযোগী আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা দান হলো প্রকৃত শিক্ষা।এর মাধ্যমে শিশুর প্রতিভা বিকশিত হয়।কোন সময় শিশুর প্রতিভার বিকাশ সাধন হয় বলা মুশকিল। অনুকূল পরিবেশ পেলে যে কোন শিশু তার প্রতিভা বিকাশে সচেষ্ট হয়। এই প্রতিভা বিকাশ শিশুর মাঝে বিভিন্নভাবে হয়।শিশুরা শিখবে বিদ্যালয়,পরিবার ও সমাজ থেকে একান্ত নিজেদের মতো করে।ফলে সে তার প্রতিভাকে বিকশিত করতে সক্ষম হবে।

শিশুর প্রতিভা বিকাশে পরিবারকেই প্রথম উদ্যোগ নিতে হবে।কেননা পরিবার হলো প্রাথমিক ও মৌলিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান। শিশু প্রথম শিক্ষা লাভ করে তার পরিবার থেকে। পরিবার শিশুর চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে প্রতিভা বিকাশে সচেষ্ট হতে পারে।এজন্য চাই শিশুবান্ধব পরিবেশ।পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও অন্যান্য বড় সদস্যদের এ ক্ষেত্রে ভূমিকা থাকতে হবে।শিশুর পরিবারে থাকতে হবে পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ এবং বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। শিশু মনে দাগ কাটতে পারে এমন অশোভন আচরণ থেকে পরিবারের সদস্যদের বিরত থাকতে হবে।শিশুর সামনে গালমন্দ, ঝগড়া-ঝাটি, মিথ্যা কথা বলা, ছলনা করা, অনৈতিক আচরণ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।এগুলো শিশুর প্রতিভা বিকাশের অনত্মরায়।

পরিবার হতে শিশুর আনন্দমূলক শিক্ষার সূতিকাগার।পরিবারের পরিবেশ শিশুর প্রতিভা বিকাশের ড়্গেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।শুরুতে পরিবারকেই শিশুর প্রতিভা বিকাশে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিভা বিকাশ যে উপায়েই হোক না কেন তা পরিবার থেকেই প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষত্রেে মা-বাবার ভূমিকা অপরিসীম। তারা বুঝতে পারেন শিশুর প্রতিভা বিকাশে কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।অবশ্য অসচ্ছল পরিবারগুলো শিশুর প্রতিভা বিকাশে তেমন উদ্যোগ নিতে সচেষ্ট নয়। তারা শিশুর নিরাপদ ও আনন্দঘন এবং অনুকূল পরিবেশ দিতে পারে না।তা আর্থিক, মানসিক ও পরিবেশগত কারণেও হতে পারে।এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।শিশুর প্রতিভা বিকাশে সমাজেরও গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।সামাজিক পরিবেশ থেকে শিশু প্রভাবিত হতে পারে।পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে শিশু শিক্ষালাভ করে থাকে। সুস্থ, সুন্দর সামাজিক পরিবেশ শিশুর মেধা ও মননশীলতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সমাজ হতে হবে শিশুর শিক্ষা লাভের উপযোগী।এ ধরণের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সমাজকে উদ্যোগ নিতে হবে।শিশুর প্রতিভা বিকাশের জন্য পরিবার, সমাজের পাশাপাশি রাষ্ট্রকেও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।শিশুর খাদ্য, শিক্ষা,চিকিৎসা, বাসস্থান, নিরাপদ পরিবেশ ইত্যাদি সুনিশ্চিত করতে হবে। বলা বাহুল্য, এখনো বহু শিশু এসব সুযোগ সুবিধার বাইরে থেকে গেছে। ফলে এসব শিশু তাদের প্রতিভা বিকাশে সক্ষম হচ্ছে না। এজন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা ও রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। ব্যবস্থা নিতে হবে বিদ্যালয় থেকে শিশুর ঝরে পড়া রোধে।প্রতিটি শিশুর শিক্ষা, বেড়ে উঠা, আচরণসহ সকল বিষয়ে সমাজ, দেশের মানুষ ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। শিশুর প্রতিভা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হলে তা সমাজ কিংবা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।তাই শিশুর প্রতিভা বিকাশে সম্ভব সব সামর্থ্য নিয়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

★লেখক :শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading