স্কুলে আয় মাসে ২ লাখ: ভারপ্রাপ্তের ভারে ১৯ বছর
নিজস্ব প্রতিবেদক, মানিকগঞ্জঃ জেলার হরিরামপুরের ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে প্রায় ১৯ বছর। পনের বছর ধরে নেই সহকারি প্রধান শিক্ষকও। ম্যানেজিং কমিটি থাকলেও নিয়োগ দেয়া হয়নি প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা ও স্থানীয় বিশিষ্টজন অভিযোগ করেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা তাদের চেয়ারকে আঁকড়ে রাখতেই ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজসে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়টির সুনাম, ঐতিহ্য ও শিক্ষার মান ক্ষুণ্ণ করেন।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের শেষ দিকে প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সামাদ অবসরে গেলে ২০০৪ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন সহকারি শিক্ষক শাহ ওয়াজেদ আলী চৌধুরী। তৎকালিন সময়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মরহুম হাসান ইমাম আজম সহকারি প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলীকে বাদ দিয়ে নিয়মবর্হিঃভূতভাবে জুনিয়র শিক্ষক শাহ ওয়াজেদ আলী চৌধুরীকে নিয়োগ দেন। ২০০৮ সালের দিকে মোহাম্মদ আলী অবসরে গেলে সহকারি প্রধান শিক্ষকের পদটিও শূন্য হয়ে যায়।
২০১২ সালে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন উপজেলা চেয়াম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান। তাঁর সময়ে ২ বছরে চারজন সহকারি শিক্ষক নিয়োগ দিলেও প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে সাবেক সভাপতি দেওয়ান সাইদুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, ‘ওই সময় প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সম্ভব হয়নি। কারণ আগের কমিটি যেভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিল, তার মেয়াদ শেষ না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ হয়নি।’
২০১৬ সালের জুলাই মাসে নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান ১৯৮৬ সালে সহকারি করণীক পদে যোগদানকৃত (পরবর্তীতে সহকারী শিক্ষক) মো. সোহরাব উদ্দিন। ওই সময়ে তাঁর ছেলে সোহেল আহমেদকে অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগসহ নৈশ প্রহরী ও আয়া পদে নিয়োগ দিলেও প্রধান শিক্ষক এবং সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ওই সময়ে নিয়মিত কমিটিতে টানা চার বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা আ.লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. সেলিম মোল্লা। প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ইনকিলাবকে জানান, ‘আমি নিয়োগের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বোর্ডের একটা চিঠি দেখিয়ে বলেছিল নিয়োগের এখতিয়ার ম্যানেজিং কমিটির নেই। তখন অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আমি আর গভীরে যাইনি। পরবর্তীতে আমার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে এ বিষয়ে আর নজর দিতে পারিনি। এর পরপরেই আমার মেয়াদই শেষ হয়ে যায়।’
বিদ্যালয়টির প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. কবির হোসেন ইনকিলাবকে জানান, ‘ইতোপূর্বে যারা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে ছিলেন, তাদের প্রধান শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতাই ছিল না। ফলে তারা ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে বহালতবীয়তে ছিলেন।’
এডহক কমিটির সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম হাজারী শামীম জানান, ‘প্রায় ১৯ বছর ধরে এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নেই। এটা দুঃখজনক। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরাই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নজনকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে তাদের চেয়ারকে রক্ষা করে, নিজেদের মতো করে অবৈধ কাজগুলো করেছে। এদের কারণেই আজ স্কুলের সার্বিক পরিণতি ও শিক্ষার্থীদের মেধা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। যা কোনোভাবে কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।’
সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সোহরাব হোসেন জানান, আমার আগের কমিটি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদ আলী চৌধুরী অবসরের পরেও বেশ কয়েক বছর চুক্তিভিত্তিক অতিরিক্ত সময় দায়িত্বে রেখেছিল। যার ফলে ওই সময় নিয়োগ কার্যক্রম সম্ভব ছিল না। পরবর্তীতে আমার সময়ে নিয়োগের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হলেও সভাপতি সেলিম মোল্লার ব্যক্তিগত ঝামেলাসহ বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব হয়নি।’
উল্লেখ্য, ১৯২৬ খ্রি. প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টির স্থাবরঅস্থাবর ও শিক্ষার্থীদের বেতনসহ বর্তমানে প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় আছে। ফলে অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সাল থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দল আ.লীগের অন্তঃকোন্দলে বিদ্যালয়টি এডহক কমিটি দিয়েই পরিচালিত হয়ে আসছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়