শিখন ঘাটতি পূরণে আসে নির্দেশনা, শিক্ষকদের আর্থিক ঘাটতি পূরণে আসবে কবে?
আব্দুল জব্বারঃ ২০১৭ থেকে বহু বিচার বিশ্লেষণ ও গবেষণা করে শিক্ষাক্রম ২০২১ চালু করা হয়েছে। এই শিক্ষাক্রমের প্রারম্ভেই বলা হয়েছে শিখন সম্পন্ন করতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সপ্তাহে দুই দিনের ছুটি যৌক্তিক। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের শুরু থেকেই শনিবার বন্ধ থাকার কারণে স্কুলের সময়সূচিতে এক ঘন্টা বাড়িয়ে ৫ টা পর্যন্ত করা হয়েছে যেন শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণ হয়। বৃহস্পতিবার হাফ ক্লাসকে ফুল ক্লাস করা হলো যেন শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণ হয়।
শীতকালীন ছুটি বাতিল করা হলো যেন শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণ হয়। গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করা হলো যেন শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণ হয়। এই বছর রোজায় স্কুল কলেজ খোলা রাখা হলো যেন শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণ হয়। তাপদাহে মাত্র ৫ দিন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটিটাই বাতিল করা হলো যেন শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণ হয়। খুব ভালো, শিখন ঘাটতি পূরণ খুবই ইতিবাচক চিন্তা যা জাতিকে এগিয়ে নেবে। এবার যারা এই ঘাটতি পূরণ করবে তাদের কি হবে? নিশ্চয়ই তাদের দিকটিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা বুদ্ধিমত্তার কাজ হবে।
বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ১২৫০০ টাকা বেতন স্কেলে ১০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা(তা থেকে আবার ১০% কেটে নেয়) ও সিকি ভাগ (২৫%) উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন। যা দিয়ে জীবন যাপন অতি দূরহ হয়ে পড়েছে। বলা যায় বর্তমান বাজারে শিক্ষকরা অসচ্ছল জীবন- যাপন করছে। তাদের আর্থিক ঘাটতি পূরণের জন্য মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়গণ এবং আমলারা(শিক্ষা সচিবরা) কি ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন? আপনাদের কাছে শিক্ষার উন্নয়ন কি শুধু শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক? যারা সেবা গ্রহীতা তাদের কথাই কি শুধু ভাববেন? যারা সেবা দাতা তাদের কথা কি ভাবনায় থাকবে না ? ১২৫০০ টাকার শিক্ষক দিয়ে তো সৃজনশীল পদ্ধতি ব্যর্থ হল? এতে কি আমাদের কোনো শিক্ষা নেওয়ার বিষয় নেই? শিক্ষা একটি সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। মনন ও মগজ উৎফুল্ল না থাকলে শিক্ষা তো কার্যকর ও ফলপ্রসু হবে না? এইসব করে তো দেশের শিক্ষা পিছিয়ে পড়ছে! মেধাবীরা তো দেশ ছাড়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে! সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ছে!
জাতিকে মেধাবী জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে গুণগতমান সম্পন্ন ভালো শিক্ষক ও আকর্ষণীয় শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষকতা পেশাটি তো এখন গার্মেন্টস কর্মীদের পেশার সম পর্যায়ে চলে গেছে। গার্মেন্টস কর্মীদের ন্যূনতম বেতন আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের স্টার্টিং বেতন বরাবর সমান। এইভাবে আর কতদিন ?
লেখকঃ শিক্ষক ও যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটি।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৬/০৪/২০২৪