প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতের শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা গণনা যেদিন থেকে
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ প্রকল্পে প্রথম যোগদানের তারিখ থেকে প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা গণনা করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (৬ মে) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত শিক্ষকদের জ্যৈষ্ঠতা রাজস্বখাতে যোগদানের তারিখ থেকে গণনা করার জন্য বিগত ৩০.০৮.২০২৩ খ্রি. তারিখ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত অফিস আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত শিক্ষকদের জ্যৈষ্ঠতা চাকরি নিয়মিতকরণের (প্রকল্পে ১ম যোগদানের তারিখ) তারিখ থেকে গণনা করার নির্দেশনা চেয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষকগণের দায়ের করা একটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে অদ্য মহামান্য হাইকোর্ট পূর্বে জারীকৃত রুল এবসোলিউট করে রিটকারী শিক্ষকদের জ্যৈষ্ঠতা চাকরি নিয়মিতকরণের (প্রকল্পে ১ম যোগদানের তারিখ) তারিখ থেকেই গণনা করার নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রদান করেন।
আদালতে রিটকারী শিক্ষকদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
রিট পিটিশনের বিষয়ে রিটকারী শিক্ষকদের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, রিটকারীগণ দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক। রিটকারী শিক্ষকগণ প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিচালিত দুইটি প্রকল্পের অধিতে যথাক্রমে ২০০১ এবং ২০০৩ খ্রি. সালের বিভিন্ন তারিখে যথাযথ পক্রিয়ায় বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ২০০৩ সালে সরকার প্রকল্পের অধিতে কর্মরত শিক্ষকদের রাজস্বখাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০০৫ সালে রিটকারী শিক্ষকগণকে রাজস্বখাতে স্থানান্তর করা হয় এবং পরবর্তীতে প্রকল্পে ১ম যোগদানের তারিখ থেকে তাদের চাকরি নিয়মিতকরণ করে অফিস আদেশ জারি করা হয়। সেই অনুযায়ী প্রকল্পে ১ম যোগদানের তারিখ থেকে চাকুরীকাল গণনা করে রিটকারী শিক্ষকদেরকে টাইমস্কেল সহ অন্যান্য সকল সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এমনকি ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজস্ব বাজেটের পদে নিয়মিতকরণ ও জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ বিধিমালা, ২০০৫’ এর বিধি ৬-এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, ‘এই বিধিমালার অধীন নিয়মিতকৃত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাহার চাকুরী নিয়মিতকরণের তারিখ হইতে গণনা করা হইবে’। কিন্তু বিগত ৩০.০৮.২০২৩ খ্রি. তারিখ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত শিক্ষকদের জ্যৈষ্ঠতা রাজস্বখাতে যোগদানের তারিখ থেকে গণনা করে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির জন্য জ্যৈষ্ঠতা তালিকা তৈরি করার নিদের্শনা দিয়ে একটি অফিস আদেশ জারি করেন যাহা উক্ত বিধিমালা সরাসরি লঙ্গন। উল্লেখ্য যে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে বিধি বহির্ভূতভাবে প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত শিক্ষকদের জ্যৈষ্ঠতা রাজস্বখাতে যোগদানের তারিখ থেকে গণনা করার জন্য ইতঃপূর্বেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চিঠি পত্র জারি করেছেন এবং উক্ত শিক্ষকদের বঞ্চিত করার চেষ্টা করছেন। রিটকারী শিক্ষকগণ দীর্ঘদিন যাবৎ উক্ত বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলেও, কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রিটকারী শিক্ষকগণ উক্ত অফিস আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশনটি দায়ের করেন। অদ্য উক্ত রিট পিটিশনটির চূড়ান্ত শুনানি শেষে মহামান্য আদালত রিটকারী শিক্ষকদের জ্যৈষ্ঠতা চাকরি নিয়মিতকরণের (প্রকল্পে ১ম যোগদানের তারিখ) তারিখ থেকেই গণনা করার নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রদান করেছেন।
রিটকারীরা হলেন– মো. শাহিদার রহমান, আবু সৈয়দ মোস্তফা কামাল, মো. আব্দুল আউয়াল, মোছা. মমতাজ বেগম, মো. রোকনুজ্জামান খান (টেক্কা), মোছা. নাজনীন আক্তার বিপ্লবী, স্মৃতি কনা বর্মণ, মোছা. সোহাগী বেগম, মোছা. মাহফুজা বুলবুল, মোছা. রেজিনা বেগমসহ বিভিন্ন জেলার মোট ৫৯৩ জন শিক্ষক।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৬/০৫/২০২৪